Sunday 01 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতি বছর ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার: শ্বেতপত্র কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৮ | আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১৫

রোববার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অর্থনীতি নিয়ে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। তাতে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনার গত সবশেষ ১৫ বছরে দেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর অবৈধভাবে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ চলতি অর্থবছরের জন্য পাস হওয়া দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম বাজেটের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ।

শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটির তিন মাসের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কমিটি বলছে, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুটপাট ও ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে তারা তুলে এনেছেন, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।

সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে বলে জানান কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি আমরা যতটা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও গভীর। ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এই শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে।’

অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেস্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তারা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং কেনার ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধন করে এক লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।’ অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শ দেন তিনি।

কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সাত লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ অর্থই আমলারা লুটপাট করেছে।’

কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা যেতে পারত।

কমিটির আরেক সদস্য এম তামিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ১০ শতাংশও যদি অবৈধ লেনদেন ধরা হয়, তাহলে পরিমাণ হবে কমপক্ষে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ। প্রতিবেদনটি শিগগিরই জনসাধারণের জন্য প্রকাশিত হবে বলে জানানো হয়।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অর্থ পাচার অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টা শ্বেতপত্র শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি শ্বেতপত্র হস্তান্তর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর