রোনালদো হতে চেয়েছিল নাজি, ইসরায়েলি গুলিতে স্বপ্ন ধূলিসাৎ
৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২৩ | আপডেট: ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৪৭
১৪ বছর বয়সী নাজি আল বাবা ছিলেন এক স্বপ্নবাজ কিশোর। বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা রোনালদোর মতো আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। গত মাসে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তটের শহর হেব্রনে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারায় এই কিশোর।
নাজি, যার নামের অর্থ ‘বেঁচে থাকা’, সেই অর্থ আজ তার পরিবারের কাছে মিথ্যা। বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান নাজি ছিলো হাসিখুশি প্রকৃতির। তার মায়াবী স্বভাব আর সাহায্য করার মানসিকতা পরিবারের সবার মন কেড়েছিল।
নাজির ফুটবলের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা ছিল। ‘হালহুল স্পোর্টস ক্লাব’-এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করতেন। খেলার প্রতি তার প্রতিভায় নিয়ে ক্লাবের ম্যানেজার নাসের মেরিব বলেন, ‘নাজি আমাদের দলের মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। ও ছিল অত্যন্ত প্রতিভাবান এবং রোনালদোর মতো বড় খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত।’
বন্ধু রেদা হানিহেনের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে নাজির প্রতিভার কথা। ‘ম্যাচে ফ্রি কিক নেওয়ার জন্য প্রায়ই ওর সঙ্গে লড়াই হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ও-ই নিত কারণ ওর শট ছিল অসাধারণ।’
৩ নভেম্বর ছিল একটি সাধারণ দিন। সকালে বাবা নিদাল আল-বাবার সঙ্গে স্কুল থেকে ফিরেছিলেন নাজি। মায়ের রান্না করা প্রিয় খাবার মোলোখিয়া খাওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে বের হন। কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে ইসরায়েলি সেনারা শিশুদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। বাবা নিদাল ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখানে তিনি নাজির মৃতদেহ দেখেন, যা সেনারা একটি গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। নিজের কেনা ছেলের নতুন জুতা দেখে তিনি চিনতে পারেন নাজিকে।
মেডিকেল রিপোর্টে জানা যায়, নাজিকে চারটি গুলি করা হয়েছিল। প্রায় ৩০ মিনিট কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল। পরদিন পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
নাজির মৃত্যুর পর তার বাবা ভাঙা হাতে ছেলের মরদেহ কাঁধে নিয়ে জানাজায় অংশ নেন। কয়েক শ মানুষ সেই জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
ইসরায়েলের গুলিতে নাজির রোনালদোর মতো হওয়ার স্বপ্ন আজ চিরতরে থেমে গেছে। চারটি বুলেট শুধু একটি জীবনই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।
সারাবাংলা/এনজে