Friday 13 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৭

অদম্য ৭১ ভাস্কর্য

মানিকগঞ্জ: আজ ১৩ ডিসেম্বর,মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে হানাদার বাহিনীর সদস‌্যরা ঢাকার দিকে ফিরতে শুরু করে। পরের দিন সকালে ১৪ ডিসেম্বর দেবেন্দ্র কলেজ মাঠ প্রাঙ্গনে তৎকালীন এমএলএ মাজাহারুল হক চাঁন মিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন।

১৯৭১ মালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর ক্র্যাক-ডাউনের খবর পাওয়ার পরপরই মানিকগঞ্জের মুক্তিকামীরা তৎকালীন এমএলএ খন্দকার মাজাহারুল হক চাঁন মিয়াকে চেয়ারম্যান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মো. ক্যাপ্টেন (অবঃ) আবদুল হালিম চৌধুরী, মোসসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া,খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী, মীর আবুল খায়ের ঘটু, মফিজুল ইসলাম খান কামাল। বিপ্লবী কমান্ডের সিদ্ধান্তে মানিকগঞ্জ ট্রেজারীতে রক্ষিত অস্ত্র-গোলাবারুদ ও ক্যাপ্টেন আবদুল হালিমের লাইসেন্সকৃত বন্দুক-পিস্তল মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার শুরু হয়। জেলা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্যরা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য শপথ গ্রহণ করেন ।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে আরিচা ফেরিঘাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ১ এপ্রিল ৭১’ সালে হেলিকপ্টারে করে সেনা নামিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দখল করে নেয় পাক বা‌হিনী। ঐ দিনের মধ্যেই মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়। জুলাই মাসে রাজাকার, আল-বদর ও শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। স্বাধীনতা বিরোধীরা পাকবাহিনীকে মা‌নিকগঞ্জবা‌সি‌দের হত্যা, ধর্ষন ও ধংসযজ্ঞে সহায়তা করতে থাকে। ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিরোধ শুরু করেন। পাকবাহিনী, আল-বদর, আল-শামস, রাজাকারদের আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে মানিকগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধারা দু’টি সেক্টরে কা‌জ করেন। অক্টোবরের আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সব কাজই অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে চলে। ১৭ জুলাই ঘিওর থানা আক্রমণ করে পাক সেনাদের আহত করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নি‌জে‌দের দখ‌লে আনে মুক্তিযোদ্ধারা। ১৮ আগস্ট হরিরামপুর থানায় প্রবেশ করলে মুক্তিবাহিনীর সাহসী গর্জ‌নে পিছু হটে পাক বাহিনী।

বিজ্ঞাপন

১৩ অক্টোবর সিও অফিসে সংরক্ষিত পাকবাহিনী ক্যাম্প দখলের জন্য মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করলে পাকবাহিনী পরাজিত হয়। এ সময় পাক-বাহিনীর পাঁচ সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ অবলম্বন করে। তখন পাকবাহিনীর ৭০টি রাইফেল, তিনটি এলএমজি ও সাত বক্স গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের দখ‌লে আসে। পাকবাহিনী ক্যাম্প দখলের পর সেখানকার ওয়্যারলেস অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার সময় আগুনে পুড়ে মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান শহীদ হন ও মুক্তিযোদ্ধা পানু মোল্লা আহত হন। ৫ অক্টোবর সিংগাইর থানার বায়রা নামক স্থানে ধলেশ্বরী নদীর উত্তর পাড় থেকে নৌকায় চলাচলকারী পাকবাহিনীর ওপর ব্রাশফায়ার করলে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হন।

মানিকগঞ্জে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে খ্যাত সিংগাইরের গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ। এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন তোবারক হোসেন লুডু। গোলাইডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প দখলের জন্য তিন শতাধিক পাকবাহিনী ১০ থে‌কে ১২টি নৌকায় ক‌রে সেখানে আসে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে দ্বিমুখী আক্রমণে একজন কর্নেলসহ ৮১ জন পাক সেনা মারা যায় । ১৪ অক্টোবর বালিরটেক ও ১৫ অক্টোবর সুতালড়িতে পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়। বালিরটেক যুদ্ধে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

২২ নভেম্বর দেশীয় দোসর ও পাক হানাদার বাহিনী গভীর রা‌তে তেরশ্রী, সেনপাড়া, বড়রিয়া এবং বড়বিলা গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের ওপর নারকীয় তান্ডব চালায়। নির্বিচারে গুলি, বেয়নেট চার্জ ও বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে তেরশ্রী জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী এবং অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ।

১০ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মিরপুর গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল উদ্দিন মোল্লার বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসররা অতর্কিত আক্রমণ করে । মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করলে প্রায় ২ ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলম গুলিতে আহত হন। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী এলাকার কোকারাম মন্ডলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং আগুনে পুড়িয়ে দেয় এই গ্রামের প্রায় অর্ধশত বাড়িঘর।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

বিজ্ঞাপন

মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর