Thursday 19 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে বললেন ড. ইউনূস

সারাবাংলা ডেস্ক
২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:৩২ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:১১

ডি-৮ সম্মেলনে ফিলিস্তিন নিয়ে বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য আরও একবার বাংলাদেশের অবিচল অবস্থান তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতার অবসানে সিদ্ধান্তমূলক ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সব পক্ষ ও অঞ্চলের বাইরের অংশীজনদের ইসরাইলি বাহিনীর চালমান বর্বরতা বন্ধ করার জন্য সিদ্ধান্তমূলক ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মিশরের রাজধানী কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে এক বিশেষ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘গাজা ও লেবাননে মানবিক সংকট ও পুনর্গঠন চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে বিশেষ এ অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বক্তৃতায় বলেন, তারা এমন এক সময়ে একত্রিত হয়েছেন যখন অধিকৃত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ১৪ মাস ধরে ইসরাইলি আগ্রাসন ও বর্বর গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। এই বর্বরতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কম করে বললে, দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলা আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি, আইন ও কনভেনশনের প্রতি ইসরাইলের নির্লজ্জ অবজ্ঞায় আমরা চরম হতাশার মধ্যে আছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, লেবাননে যেভাবে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে এটি আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি করুণ পরিণতি বয়ে আনতে পারে, যা কেবল অর্থনীতি নয়, বৈশ্বিক সমাজ ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে।

বাংলাদেশ বরাবরই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘কায়রো থেকে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাদের ইতিহাসের এ অস্তিত্ব সংকটের সময়ে আমাদের ঐক্য ও অটুট অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় ইসরাইল পরিচালিত অব্যাহত অবৈধ দখলদারিত্ব এবং সহিংস দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছি। আমরা এ সংকটের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে শান্তি ও সম্প্রীতিতে পাশাপাশি বসবাস করার মতো একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পক্ষে অটল আছি।’

পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনকে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানার ভিত্তিতে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হতে হবে বলে অভিমত দেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, ‘আমরা গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সামনেও এ বিষয়ে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। আদালত অবশেষে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে তাদের মতামতে অবৈধ বলে উল্লেখ করেছে।’

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশিরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা হেলাফেলার যোগ্য নয়। প্রতিটি ফিলিস্তিনির জীবন গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন কোনো বিষয় নয় যা কেবল মুসলিমদের জন্য উদ্বেগজনক, বরং এটি একটি সর্বজনীন বিষয় যেখানে মানুষের মর্যাদা পরীক্ষার সম্মুখীন। এটি দুর্বলদের রক্ষায় সার্বজনীন অঙ্গীকারের একটি বিষয়। দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, লেবাননসহ সমগ্র অঞ্চলে প্রায় ৬০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক ও প্রবাসী পেশাজীবী রয়েছেন, যারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবাননে গণহত্যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের সামিল উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এ কারণেই গত নভেম্বরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দাঁড়িয়ে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। জবাবদিহিতার বিষয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অপরাধীদের ভবিষ্যতে আরও নৃশংসতা ঘটানোর ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানবিক হস্তক্ষেপ ছাড়াও গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবাননের পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে ইসরাইলের বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৪০ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে। আমরা ধারণা করতে পারি, ধ্বংসস্তূপে ১০ হাজারেরও বেশি মৃতদেহ থাকতে পারে।

ফিলিস্তিন ও লেবাননে পুনর্গঠনের ব্যয়ের আনুমানিক প্রাক্কলনসহ একটি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ডি-৮ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা এর মাধ্যমে সম্পদ সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক কৌশল প্রণয়নের জন্য চাপ দিতে পারি।’

অধ্যাপক ইউনূস ডি-৮ সম্মেলনের সময় গাজা ও লেবাননে মানবিক সংকট ও পুনর্গঠন চ্যালেঞ্জের ওপর এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করার জন্য মিশর সরকারের প্রশংসা করেন। অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যোগ দেন। বাসস।

সারাবাংলা/টিআর

ইসরায়েল গাঁজা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডি-৮ সম্মেলন প্রধান উপদেষ্টা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর