অভিবাসন ব্যবস্থায় সাব-এজেন্টদের গুরুত্ব ও অভিবাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে মতবিনিময়
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:২০ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১২
ঢাকা: ঢাকা বিএমইটিতে সাব-এজেন্টদের অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিবাসন অভ্যাস নিয়ে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএমইটি কার্যালয়ে ‘অভিবাসন সাব এজেন্টদের মনোভাব, জ্ঞান ও অভিবাসন সংক্রান্ত আইন এবং বিধিবিধান’ শীর্ষক সভাটি অনুষ্টিত হয়।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ওয়্যাররি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য কাজ করে এমন বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যরা এবং ঢাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওয়্যাররি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক জাছিয়া খাতুন। এতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মুজাফফর।
তিনি বলেন, “জাতির বর্তমান প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এই সভা থেকে গঠনমূলক সুপারিশ চাই। আমাদের যা অত্যন্ত প্রয়োজন তা হল কার্যকর “প্রতিষ্ঠানের” ধারণা এবং এর অন্তর্নিহিত মূল্য সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা।”
শ্রম অভিবাসনের ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ পদ্ধতিকে সম্বোধন করে, ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, “অভিবাসীদের পাঠানোর ক্ষেত্রে এজেন্সিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত: অভিবাসীদের পাঠানোর প্রক্রিয়ায় প্রেরণকারী এবং গ্রহণকারী উভয় দেশেই একাধিক স্তরে সিন্ডিকেট জড়িত।” এ ছাড়া তিনি প্রশ্ন রাখেন “এই সমস্যার অবসান ঘটাবে কে?”
সভায় অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় পরিচালিত সাবএজেন্টদের ওপর করা গবেষণাটির বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
কুমিল্লা এবং মুন্সীগঞ্জ এই দুই জেলায় সাবএজেন্টদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাদের জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রচলিত অভ্যাসের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, “অভিবাসনের বিভিন্ন স্তরে ব্যয় রয়েছে। একজন অভিবাসী যদি তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে থাকে, তাহলে তার সিংহভাগ বিভিন্ন স্তরে থাকা সাব-এজেন্ট ও অন্যান্য অতিরিক্ত খাতে ব্যয় হয়ে যায়।”
বিএমইটি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন,“সাব-এজেন্টদের উপর নির্ভরতা কমানোর কিছু কৌশল রয়েছে, যেমন অভিবাসীদের তথ্যের অবাধ প্রবাহ প্রদান করা, যার মধ্যে গন্তব্য দেশের অর্থনীতি, সে দেশের পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত তথ্য থাকবে।”
ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ সিদ্দিকী উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) উচিৎ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সাব-এজেন্টদের যথাযথভাবে জড়িত করার ক্ষেত্রে আরও প্রতিযোগিতামূলক হওয়া।
এদিকে রেমিট্যান্সের শতকরা এক ভাগও “প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের” মধ্যে বণ্টন করা হয় না উল্লেখ করে বায়রার মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, “যারা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান, তাদের অবদান এত বিশাল থাকা সত্ত্বেও তাদের উন্নয়নে কাজ খুবই কম হয়েছে।”
বিএমইটি’র পরিচালক মাসুদ রানা বলেন,“যদি সাব-এজেন্টদের নিবন্ধিত করা হয় তবে তারা তাদের প্রভাব খাটিয়ে তাদের অধীনে আরেকটি লেয়ার তৈরি করতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটে ফেলতে পারে।”
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) থেকে মাহমুদুল হাসান, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশনস কো-অর্ডিনেটর ফারদিন রহমান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম, এবং বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে) থেকে শেখ মুজিবুল হক।
মত বিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অভিবাসী শ্রমিক এবং সাব-এজেন্টরাও উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সংশোধিত আইনের অধীনে সাব-এজেন্টদের নিবন্ধন সম্পর্কে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।
এ ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নুরুন নাহার সভায় সাব-এজেন্টদের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে বলেন, “তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই সংশোধনী আইনটি পাস করা হয়েছে।“
বিএমইটি’র মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মুজাফফর বৈঠকের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “সাবএজেন্টদের সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম” এবং তিনি জাতীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে বার্তা প্রদানের আহ্বান জানান।
অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফলপ্রসূভাবে আলোচনাসভাটি শেষ হয়।
সারাবাংলা/এনএস/পিটিএম