৭১ এ আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন— জামায়াতকে রিজভী
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৪ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৫১
ঢাকা: জামায়াতের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন আপনারা? কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন? জাতি তা জানতে চায়।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেটের কদমতলী চত্বরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব প্রশ্ন করেন।
যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন ইমনের পরিবারকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।
সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি দুটি। একটি সেনাবাহিনী আরেকটি জামায়াত।’
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল বলেছে দেশপ্রেমিক তারা এবং সেনাবাহিনী। নিসন্দেহে সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক। কারণ, তাদের পূর্বসূরিরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। তাদের অন্যতম মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও সেনাবাহিনী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।’
‘আমি ইসলামপন্থি সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, ৭১ এ আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল? কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমিক নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমিক– এই ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করলে মানুষ হাসবে, মানুষ হাসির রি-অ্যাক্ট ছাড়া আর কিছু দেবে না’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এই জাতির ঘাড়ে একটি জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিল। এই পাথর এত ভারী যে গোটা জাতিকে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় রেখেছিল। মানুষ নিশ্বাস নিতে পারত না। মানুষ স্বাচ্ছন্দ চলাফেরা করতে পারত না। রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিল না। মিছিল করতে পারত না, সভা করতে পারত না। পুলিশ অনুমতি দেওয়ার পর যুবলীগ-ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হত।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা কলঙ্কিত করেছে। এই সিলেটের কৃতি সন্তান ইলিয়াস আলী আজ নেই কেন? শেখ হাসিনার জন্য। কারণ, তিনি দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন। এই জন্য তাকে নিরুদ্ধেশ করে দেওয়া হয়েছে। কত যুবদল-ছাত্রদলের ছেলে ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। এই ভয়ংকর মানবতাহীন কাজ করেছেন শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে জুলাই এবং আগস্টে ছাত্রজনতারা নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন আমরা খবরের কাগজে দেখতে পারছি জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। শুধু জুলাই আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, সেইসব অপরাধের বিচার হবে, ইলিয়াস আলীর বিচার হবে না? চৌধুরী আলমের বিচার হবে না? সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের বিচার করবেন না? যারা ক্রসফায়ার দিয়েছেন, শীতলক্ষা নদীতে সাতটি লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন, সেই সমস্ত দুর্বৃত্ত র্যাব অফিসারদের বিচার হবে না?’
রিজভী বলেন, ‘স্কুলে পাঠ্যবই সম্পূর্ণ সরবরাহ করা যায়নি, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু সেখানে ইতিহাসের বইয়ে তারা কিছু কাজ করেছেন। প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে এই জাতির বিবেকবানদের জন্য যে অধ্যায় করা হয়েছে, তাতে আমরা দ্বিমত করছি না। সেখানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় রাখা হল না কেন?’
রিজভী আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শেষ হয়ে যাননি, যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় থাকবে না কেন? যারা প্রবাসী সরকার হয়েছিল, সেটা থাকবে, সেটার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একটা অধ্যায় থাকতে হবে। যতটুকু হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাই, কিন্তু অসম্পূর্ণ থাকবে কেন?’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় ধরনের ঘটনা। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীকারের আন্দোলন করেছেন। সেটি স্বাধীনতার জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাযুদ্ধের কোনো বিশেষ ঘোষণা বা প্রস্তুতির কথা বলেননি। সেই আহ্বান তার নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান এবং যুদ্ধ হয়েছে ৯ মাস। সেই অধ্যায়টি রাখা হয়নি। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হওয়া উচিত।’
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এইচআই