Sunday 19 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শচীন-কোহলি-খালেদ: যেভাবে মিলে গেলেন এক মোহনায়

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে
১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৬ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৭

সতীর্থদের সাথে খালেদ আহমেদ। ফাইল ছবি।

শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, খালেদ আহমেদ; তিন প্রজন্মের ভিন্ন তিন ক্রিকেটার। ক্যারিয়ারের গতিপথ, ক্রিকেটে উঠে আসার গল্প কিংবা অর্জন; একজনের চেয়ে আরেকজনের ভিন্ন। তবুও জীবন নদীর স্রোতের ভেসে এক মোহনায় এসে তিনজন মিলেছেন। তাদের এক করেছে অপ্রিয় কিন্তু অমোঘ এক নিয়তি ‘মৃত্যু’। 

১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ চলাকালীন বাবা হারান শচীন। ২০০৬ সালে রঞ্জি ট্রফি খেলতে গিয়ে বাবার মৃত্যুরে খবর পান কোহলিও। চলতি বিপিএলে দুইদিন আগে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ার পর টিম হোটেলে গিয়ে মায়ের মৃত্যুর অপ্রিয় খবরটা আসে বাংলাদেশের পেসার খালেদ আহমেদের কানে। 

বিজ্ঞাপন

আগের অনুচ্ছেদে পড়েছেন মৃত্যুই তাদের এক মোহনায় মিলিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি মিলিয়েছে তাদের ক্রিকেট মাঠে, ক্রিকেটের প্রতি নিবেদনের পারদে। আপনজন হারানোর শোক বুকে নিয়ে  দলের স্বার্থে মাঠে ফিরে নিংড়ে দিয়েছেন সামর্থ্যের পুরোটা। 

১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাবার মৃত্যুতে দেশে ফিরেছিলেন শচীন, তাকে শেষবারের মতো দেখতে, শেষকৃত্যতে থাকতে। শচীন খেলতে পারেননি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচ, সেই ম্যাচেই হেরে বসে ভারত। ফিরে আসে কেনিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচের আগে। পিতা হারানোর শোক বুকে, কিন্তু ব্যাটে আগুন ছিল তার। ১০১ বলে ১৪০ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে দলকে এনে দেন ৩২৯ রানের সংগ্রহ। ম্যাচটাও ভারত জিতেছিল ৯৪ রানে। 

সেদিন ব্রিস্টলে ২২-তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পর শচীনের উদযাপনে মিশে ছিল তার বাবা হারানোর যন্ত্রণা। হেলমেট খুলে চোখ বুজেও আকাশপানে চেয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে শচীন যে কয়টা সেঞ্চুরি করেছেন, ঠিক একইভাবে উদযাপন করেছেন, খুঁজে ফিরেছেন নিজের প্রয়াত বাবাকে। 

বিজ্ঞাপন

 ২০০৬ সালে রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লীর হয়ে খেলছিলেন বিরাট কোহলি। ফিরোজ শাহ কোটলাতে ৪০ রানে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করে কোহলি জানতে পারেন, তার বাবা প্রেম কোহলি আর নেই। বাবার শেষকৃত্যতে গেলেও পরদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফিরে আসেন মাঠে। খেলেন ৯০ রানের ইনিংস। ওই অল্প বয়সেই পিতৃবিয়োগের শোক বুকে নিয়েও যেভাবে খেলেছেন কোহলি, তা আজও মুখে মুখে ফেরে। 

গত বৃহস্পতিবারের কথা। খুলনা টাইগার্সকে ৪৫ রানে হারিয়ে বেশ আনন্দ নিয়েই মাঠ ছাড়েন চিটাগং কিংসের পেসার খালেদ আহমেদ। বল হাতে চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে দুই উইকেট নেয়া খালেদ টিম হোটেলেও ঢুকেছেন উল্লাস করেই। কিন্তু কে জানতো, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সংবাদটা অপেক্ষা করছিল তার জন্য। মৃত্যুবরণ করেছেন তার মা। হৃদয় ভাঙা এই খবরে রাতেই সিলেটে ছুটে যান খালেদ। 

মাঝে শুধু রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষের ম্যাচে তাকে পায়নি চিটাগং। কিন্তু দুইদিন যেতে না যেতেই আবার কিংসের জার্সিতে বিপিএলে হাজির খালেদ। এবং যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন আজ। খুলনার বিপক্ষে ম্যাচে দুই উইকেট নিয়েছিলেন ২৬ রানে, আজ এক রান বেশি দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। পার্থক্য হচ্ছে, সেদিন খুলনার বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন, আজ হেরেছেন। 

যার ব্যাটে চিটাগং আজ ম্যাচ হারল বরিশালের কাছে, সেই ডাভিড মালানও আলাদা করে কথা বলেছেন খালেদের সাথে। প্রতিপক্ষ হলেও বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন সহমর্মিতায়, সান্ত্বনাও দিয়েছেন সমব্যথী হয়ে। মা হারানোর শোক বুকে নিয়ে কীভাবে ফিরে এলেন খালেদ? সেই গল্পটা সংবাদ সম্মেলনে শোনালেন খালেদের দলের সহকারী কোচ এনামুল হক জুনিয়র। 

এনামুল জানান, খালেদ নিজে ফোন করেই আসতে চাচ্ছিলেন, খেলতে চাচ্ছিলেন বরিশালের বিপক্ষের এই ম্যাচটা। দলের স্বার্থে খালেদের এমন সাহসী সিদ্ধান্তে মুগ্ধ তার ফ্র্যাঞ্চাইজি, টিম ম্যানেজমেন্ট। 

এনামুল বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে খালেদকে নিয়ে খুবই গর্বিত। কারণ এমন একটা পরিস্থিতিতে ও আমাদের কথায় সাথেসাথে রাজি হয়ে দলের স্বার্থে চলে এসেছে সিলেট থেকে।  যদি সিলেটে থাকতে হতো, তাহলে ওর মনটা আরও খারাপ থাকত। ও আমাকে কল করেছিল গত কালকে, যে ভাইয়া আমি কী করব? 

আমি বললাম, সিলেটে থাকলে মনটা খারাপ থাকবে, বাসায় বসে থেকে। এখানে থাকলে হয়তোবা একটু উৎফুল্ল থাকবে। আর ও এই ম্যাচটা খেলতে চাচ্ছিল। বলল যে বরিশালের সাথে ম্যাচটা আমি খেলতে চাই।আসলে সত্যি কথা বলতে আমরা সবাই ইম্প্রেসড, কারণ একটা এত বড় ইন্সিডেন্টের পর ও চলে এসেছে, ম্যাচ খেলেছে এবং দারুণ বোলিং করেছে আজও।’

সারাবাংলা/জেটি

খালেদ আহমেদ চিটাগং কিংস বিপিএল ২০২৫ বিরাট কোহলি শচীন টেন্ডুলকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর