ঢাকা: দেশের শিল্পখাতকে টিকিয়ে রাখতে নতুন করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানিয়েছে পোশাক শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত শীর্ষ ৪ ব্যবসায়ি সংগঠন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে এক যৌথ চিঠিতে এ আহ্বান জানান ব্যবসায়ি নেতারা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টাকে চিঠি পাঠানোর এই তথ্য জানায় বিজিএমইএসহ একাধিক ব্যবসায়ি সংগঠন।
যৌথভাবে এ চিঠিতে সই করেন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিটিএলএমইএ চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ।
চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকার শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হতে পারে। এরূপ মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর করা হলে তা শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। করোনা মহামারির অভিঘাত মোকাবিলা করে ঘুরে না দাঁড়াতেই আমাদের বস্ত্র ও পোশাক খাত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, তবে বিগত তিন অর্থবছরের তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি বিচারে রফতানিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যা অর্থনীতির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির জন্য উদ্বেগজনক।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমাদের কারখানাগুলো গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাপক আর্থিক লোকসানের শিকার হচ্ছে। আমাদের শিল্পঘন এলাকাগুলোতে, বিশেষকরে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের কারণে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রফতানি বিঘ্নিত হচ্ছে। লিড টাইম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং আমরা ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছি। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যখন শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তখন শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তার সুফল শিল্প পায়নি।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, মূল্য বৃদ্ধি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং চলমান মিল ও কারখানাগুলোকে সংকটে ফেলবে। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রাক্কালে যখন ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন তখন এরকম একটি উদ্যোগ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।
সংগঠন চারটির পক্ষে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়- শিল্পখাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোয় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করা এবং এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি প্রতিযোগিশীল ও টেকসই মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়ন। শিল্পখাতে বিরাজমান গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া (যেমন- সিএনজি ষ্টেশন হতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা) এবং নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মধ্য-দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন। শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে সুপারিশগুলো সুবিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।