Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজহারের মুক্তির জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিল জামায়াত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৫ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৫০

জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। অন্যথায় সারা বাংলাদেশে অব্যাহত আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর লালদিঘী মাঠে এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এর মধ্য দিয়ে ১৮ বছর পর লালদিঘী মাঠে সমাবেশ করল দলটি।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের মানুষ আজ ফুঁসে উঠেছে, সারা বাংলাদেশে একই আওয়াজ-লাথি মার ভাঙরে তালা, যতসব বন্দিশালা। কিন্তু আমরা বন্দিশালার তালা ভাঙতে চাই না। কেউ কেউ বলেছেন আঙ্গুল বাঁকা করব, কেউ কেউ বলেছেন অচলাবস্থার সৃষ্টি করব, কেউ কেউ ইঙ্গিত দিয়েছেন গাড়ি ভাঙচুরের। না, জামায়াত ইসলামী এগুলো করবে না। তবে জামায়াত ইসলামী অন্যায়ের কাছে মাথা নতও করবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী। আমরা দেশপ্রেমিক সুশৃঙ্খল দল। দেশ গড়ার কাজে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। এ সরকারের সকল ন্যায়নীতি, ইনসাফপূর্ণ কাজে আমরা সহযোগিতা করব। তবে এটাও বলতে চাই, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। এই সংবিধানের অধীনেই প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলী, বিচারপতিরা শপথ নিয়েছেন। আপনারা সংবিধান অনুসরণ করুন।’

তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা করছে— আমাদের আপনারা (সরকার) বাধ্য করবেন না। ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হলো। ২০ তারিখের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যে যদি আমরা আমাদের প্রিয় নেতাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মুক্তমঞ্চে আনতে না পারি, তাহলে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে অব্যাহত কর্মসূচি চলবে। আমরা অনেক ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে পেছনে যাবার জায়গা থাকে না। সুতরাং বাংলাদেশ ফুঁসে ওঠার আগে, উত্তাল তরঙ্গের ঢেউ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আজহার ভাইয়ের মুক্তি চাই, অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা তুলে ধরে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘বর্তমান সরকার এ দেশের মানুষের রক্তের ওপর, লাশের ওপর দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছে। ১৫ বছর আমাদের রক্ত ঝরেছে, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, কারাবরণ, ফাঁসির রশিতে আমাদের নেতাদেরকে ঝোলানো হয়েছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের আন্দোলনের ফসল। সেই সরকারের কাছে জেলের তালা ভেঙ্গে আমাদের নেতাদের মুক্ত করতে হবে, আবার রাজপথে নামতে হবে, এটা আমরা কখনও ভাবিনি।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট বঙ্গভবনে সেদিন সাতটি রেজ্যুলেশন হয়েছিল। সেদিন সকল রাজনৈতিক দল একটি কথা বলেছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে যত বেআইনি মিথ্যা মামলা হয়েছে, সকল মামলার আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। সেই রেজ্যুলেশনে প্রেসিডেন্ট সম্মত হয়েছিলেন বলেই বেগম খালেদা জিয়াসহ অসংখ্য রাজবন্দি মুক্তি পেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিরোধী মত দমন মিথ্যা মামলা দিয়েছিল, গায়েবি মামলা দিয়েছিল। জামায়াতে ইসলামীর শক্তিকে ভয় পেয়ে, আন্দোলনকে দমন করার জন্য জামাতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। জামায়াতকে রাজনৈতিক আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের ট্রাইব্যুনাল করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে সাজানো মামলায় ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নেতা জামায়াত ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, সেটি আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে একটি সাজানো মামলা। সকল রাজবন্দি মুক্তি পেলেও আমাদের প্রিয় নেতা, জনগণের প্রিয় নেতা এটিএম আজহার কেন মুক্তি পেল না – সরকারের কাছে এটা আমাদের জিজ্ঞাসা।’

হামিদুর রহমান আযাদ আরও বলেন, ‘এটিএম আজহারুল ইসলাম কারারুদ্ধ অবস্থায় নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছেন, প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি জানাজায় শরিক হয়েছিলেন। ফ্যাসিবাদের আমলে আমরা এভাবে অনেকেই নির্যাতিত হয়েছি। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে কি এখন ফ্যাসিবাদ আছে ? ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমার ভাই এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জনতার কাতারে ফিরে আসতে পারেননি। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও কেন জামায়াত নির্যাতনের শিকার হবে, এটা জাতি জানতে চায়।’

‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি, সুবিচার পাইনি। আমাদের ছাত্রসমাজের স্লোগান ছিল- উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আমরাও বলছি- উই ওয়ান্ট জাস্টিস। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায়, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণরা রক্ত দিয়েছে। তাহলে আজও কি আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবো? এটা কি জুলুম নয়- জাতির কাছে এ প্রশ্ন রেখে গেলাম,’ – বলেন এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী। এতে দলটির চট্টগ্রামের উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের জ্যেষ্ঠ্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ টি এম আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দেওয়া রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এ রায় রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ২০ ফেব্রুয়ারি এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/এইচআই

এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ এ টি এম আজহারুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামী

বিজ্ঞাপন

‘সীমান্তের ওপার থেকে ষড়যন্ত্র চলছে’
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:১৮

আরো

সম্পর্কিত খবর