Tuesday 04 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজার সংকট ভোজ্য তেলে ডিলার সিন্ডিকেটের নতুন কৌশল
বাড়তি দাম লেবু-শসা-বেগুনে

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট
৪ মার্চ ২০২৫ ১০:০০

কক্সবাজারে বাড়তি দাম লেবু-শসা-বেগুনে

কক্সবাজার: প্রেক্ষাপট পরিবর্তণের পর রোজার দিনে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রবের বাড়তি দামের সেই চিরচেনা রূপ পাল্টাবে প্রত্যাশা করলেও বরাবরই রয়েছে আগের চিত্র। তবে ঢালাওভাবে সব পণ্যের দাম না বাড়লেও সবজিতে বেড়েছে লেবু, শসা, বেগুন, ধনেপাতা ও কাচাঁ মরিচ। চাহিদা বাড়তি থাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ-মাংস-মুরগী। তবে স্থিতিশীল রয়েছে টমেটোসহ অন্যান্য সবজি ও ছোলা-মুড়ি-খেজুরের দাম।

এদিকে, রান্নায় নিত্য প্রয়োজনীয় ভোজ্য তেলে অস্থির রয়েছে বাজার। একে তো খুচরা মার্কেটে তেল সংকট তার মধ্যে ডিলার সিন্ডিকেট শুরু করেছে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য বিক্রির কৌশল। তারা ভোজ্য তেলের পাশাপাশি ওই কোম্পানীর আটা, ময়দা, চাল, সুজিসহ অন্যন্য পণ্য না কিনতে বাধ্য করছে খুচরা বিক্রেতাদের। অনেক খুচরা বিক্রেতা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তেলের সঙ্গে সেসব পণ্য নিলেও বেশিরভাগই তেল না কিনে ফিরে আসছেন। আবার অনেকে বাড়তি দামে তেল কিনছেন এবং গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছেন বাড়তি দাম বাড়িয়ে। এ নিয়ে ক্রেতারাও পড়ছেন ভোগান্তিতে। এই অব্যবস্থাপনার জন্য তারা দায়ী করছেন ডিলার সিন্ডিকেটকে।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার শহরের বড়বাজার, বাহারছড়া ও কালোর দোকান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে যে শসা কেজিতে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছেল তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। ২০ টাকার বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ৩০ টাকার কাচাঁ মরিচ ৬০ টাকা। ৩০ টাকার ধনে পাতা ৭০-৮০ টাকা। লেবু বিক্রি হচ্ছে জোড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে বাড়তি চাহিদা থাকায় কেজিতে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে মাছ-মুরগী-মাংসে।

ডিলার সিন্ডিকেট তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য বিক্রির কৌশল প্রয়োগ করায় সংকট পোহাতে হচ্ছে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের

এদিকে, মার্কেট শূণ্য ভোজ্য তেলের খবর নিতে গিয়ে জানা যায়, খুচরা বাজারের অন্তত ১০ দোকানের মধ্যে ৭টি দোকানে ভোজ্য তেল নেই। এমনিতে মার্কেটে তেলের সংকট তার মধ্যে ডিলারদের কাছ থেকে এক কার্ট তেল নিতে গেলেও ধরিয়ে দিচ্ছে ওই তেল কোম্পনির আটা-ময়দা, সুজি, চিনি, চাল, ডাল, লবণ, চা পাতা, সরিষার তেল ইত্যাদি। ডিলারদের এমন আচরণে চরম বিরক্ত খুচরা বিক্রেতারা। অনেকে বাধ্য হয়ে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনলেও বেশিরভাগই তেল না কিনেই ফিরে যাচ্ছে। আবার অনেকে অন্য কিছু না নিয়ে বাড়তি দামে তেল কিনে গ্রাহকদের বিক্রি করছে বাড়তি দামে। এতে গ্রাহকরা পড়ছেন ভোগান্তিতে।

বিজ্ঞাপন

খবর নিয়ে জানা যায়, এই ডিলার সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে শহরের আইভিপি সড়কের তেজারত ট্রেডিং, মেসার্স মমতাজ ষ্টোর প্রকাশ টাইঙ্গার জাহাঙ্গীর, ইয়াকুব হাজী ষ্টোর ও আলম স্টোর।

খুচরা দোকানদার লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করলেও ভোজ্য তেলের সংকট আর বাড়তি দামে সেই বিশ্বাস হারাতে বসেছি। ডিলারদের চাহিদা মেটাতে না পেরে ভোজ্য তেল উঠাতে পারছে না দোকানে।’

সাইফুল ইসলাম নামে আরেক মুদির দোকানী জানান, ভোজ্য তেলের সঙ্গে ওই কোম্পানীর অন্য পণ্য না নিলে ডিলাররা তেল বিক্রি করছেন না। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে ভোজ্য তেল ক্রয় করছেন। যার ফলে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিলার সিন্ডিকেটের কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়।

শহরের আইভিপি সড়কের ডিলার তেজারত ট্রেডিং এর ম্যানেজার নিয়ামুল হক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘কোম্পানীতে তেলের সংকট। কোম্পানীর নির্দেশে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে কোম্পানীর সঙ্গে কথা হয়েছে আর হবে না।’

ওই সড়কের আরেক ডিলার মেসার্স মমতাজ ষ্টোর প্রকাশ টাইঙ্গার জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কোনো খুচরা বিক্রেতাকে আসলে জোর করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না। তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই খুচরা বিক্রেতাদের এসব পণ্য দেওয়া হচ্ছে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইউএনও নিলুপা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বা সিন্ডিকেট যদি বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তাদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই অবস্থায় সচেতন মহলের প্রত্যাশা প্রশাসনের মনিটরিং এর মধ্য দিয়ে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হোক।’

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

কক্সবাজার বাজার বাজার সিন্ডিকেট ভোজ্য তেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর