রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমে ৬ ডলারে, ক্যাম্পে দুর্ভোগ-অপরাধ বাড়ার শঙ্কা
১১ মার্চ ২০২৫ ১১:২৩ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৩
কক্সবাজার: ‘তহবিল ঘাটতির’ কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তায় খরচের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাচ্ছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। আকস্মিক এমন খবরে উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার দুর্ভোগের পাশাপাশি আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী নোয়াখালীর ভাসানচরসহ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে খাদ্য-সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। কিন্তু হঠাৎ করে ‘তহবিল ঘাটতির’ কারণ জানিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য-সহায়তায় খরচের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাচ্ছে ডব্লিউএফপি। যেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ছয় ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম দিন থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার।
তারা বলছেন, এমনিতে খাদ্যসংকটে, তার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দুর্ভোগ নেমে আসবে।
উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা রশিদ আহম্মদ বলেন, আমাদের আগে রেশন দেওয়া হতো সাড়ে ১২ ডলার। ওটা দিয়ে ঠিকমতো খাবার খেতে পারতাম না। এখন শুনছি সেই সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার রেশন দেওয়া হবে। এ নিয়ে সবাই চিন্তিত। খাবারের অভাবে মানুষের মধ্যে হানাহানি শুরু হবে।
বালুখালী ক্যাম্পের মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাহিরে যাওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু ছয় ডলার করে যদি রেশন দেওয়া হয় আমাদের বউ-বাচ্চারা না খেয়ে মরবে। অনেক খাবারের অভাব সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ক্যাম্প থেকে বাহিরে চলে যাবে। এতে রোহিঙ্গারা ঝুঁকিতে পড়বে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য-সহায়তা প্রদানে ডলারের এই উঠা-নামাকে নিয়ে ডব্লিউএফপিকে দায়ী করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘আমাদের সহায়তার নামে তালবাহানা করা হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গা খাবার না পেয়ে অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। খাবার না পেয়ে ক্যাম্পে হানাহানি শুরু হবে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাবে। যেটি রোহিঙ্গাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এসব না করে আমাদের দেশ মিয়ানমারে সেইভ জোন করে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।’
রোহিঙ্গাদের খাদ্য-সহায়তা কমে এলে জীবন-জীবিকার সংকটের পাশাপাশি ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার ওপরও। এমনটাই আশা করছেন ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা।
স্থানীয় যুবক সোহেল রানা জানান, ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার মধ্যে রেশন কমে গেলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তারা খাবারের জন্য স্থানীয়দের মাঝে এসে চুরি-ছিনতাইসহ নানা ধরনেরর অপকর্ম করবে। এতে ঝুঁকিতে পড়বে স্থানীয়রা। চরম অবনতি হবে আইনশৃঙ্খলার।
কক্সবাজার শহরের স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক বেদারুল ইসলাম জানান, এরইমধ্যে রোহিঙ্গারা শ্রমবাজারে হানা দিয়েছে। তাদের কারণে স্থানীয় শ্রমকরা ক্ষতিগ্রস্ত। এদিকে রেশন কমে গেলে তা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গারা অপহরণ থেকে শুরু করে নানা অপরাধের সঙ্গে রয়েছে। এতে অনিরাপদ হয়ে পড়বে স্থানীয় জনগণ।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে স্থানীয় জনগোষ্ঠী রয়েছে পাঁচ লাখের বেশি। এই জনগোষ্ঠী এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে অতিষ্ট। রোহিঙ্গারা অপহরণ, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বিকি নাই এমন অপরাধ করছে না। এরমধ্যে খাদ্য-সহায়তা কমানোর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এতে তাদের পাশাপাশি অনিরাপদ হয়ে পড়বে স্থানীয় জনগণ।
এই প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা বলেন, এই খবর সত্যিই উদ্বেগের। এতে প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মিটবে না। খাদ্য-সহায়তা কমলে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি ও স্বাস্থের ক্ষতি হবে। তারা দৈনন্দিন খাবার না পেয়ে দুর্ভোগে পড়বে। এই খাবার চাহিদা মেটাতে গিয়ে বহুমুখি সমস্যার সৃষ্টি হতে। এতে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় বিঘ্নিত হবে।
২০২৩ সালে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ ১২ থেকে ১০ ডলার এবং তার দুই মাস পর থেকে তা আরও কমিয়ে ৮ ডলার করা হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের জুনে সেখান থেকে বেড়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার করা হয়েছিল।
সারাবাংলা/ইআ
খাদ্য সহায়তা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গা ক্যাম্প