ড. ইউনূস-ইউএন মহাসচিবের কাছে রাখাইনে ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানাবে রোহিঙ্গারা
১৩ মার্চ ২০২৫ ২২:৩৩ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ২৩:৩৩
কক্সবাজার: রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শুক্রবার (১৪ মার্চ) তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও একাধিক বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় লাখো রোহিঙ্গাকে নিয়ে ইফতার করবেন।
এদিকে সরকার প্রধান ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, জাতিসংঘের তত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল (সেইফ জোন) প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে খাদ্য সহায়তা স্বাভাবিক রাখাসহ নানা দাবি জানাবেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সেইফ জোন প্রতিষ্ঠাসহ আর্ন্তজাতিক মহলের যে কোনো ইতিবাচকের উদ্যোগের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
কক্সবাজারে রয়েছে বিশ্বের বাস্তুচ্যুত মানুষের সর্ববৃহৎ আশ্রয়শিবির। যেখানে বসবাস করছেন অন্তত ১২ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। বিগত ২০১৭ সালে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটনার পর দীর্ঘ ৮ বছরেও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উলটো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবির ঠাঁই নিয়েছেন অন্তত ৮০ হাজার রোহিঙ্গা।
এদিকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কর্তৃক খাদ্য সহায়তার পরিমান সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার দেওয়ার ঘোষণায় উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারা। তহবিল সংকটের কারণে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধানের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রধান উপদেষ্টার এটিই প্রথম সফর।
এই সফরের প্রসঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের আশা করেন, তাদের সফরে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে অগ্রগতি আসবে। সফরকারি দুই নেতার কাছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য সেইফ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হবে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি’র সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ফলদায়ক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিন্তু খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা রোহিঙ্গারা যেমনি উদ্বিগ্ন, পাশাপাশি তা স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ব্যাপারে সফরকারি দুই নেতার কাছ থেকে শুভ বার্তা আসার প্রত্যাশা রয়েছে।
নিরাপত্তার প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশ ও আর্ন্তজাতিক মহলে সর্বোচ্চ মর্যাদার দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির সফরকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কয়েক স্তারের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর হবে ঐতিহাসিক। এই সফরে আর্ন্তজাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আছে। তারা স্বদেশে ফিরবে এমন বার্তার প্রত্যাশা করছে রোহিঙ্গারও।
এর আগে ২০১৮ সালের ২ জুলাই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে আসেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখেন।
সারাবাংলা/এইচআই
ড. ইউনূস-ইউএন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সেইফ জোন