নীলফামারীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ ‘সাংবাদিক’ কারাগারে
৯ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৩
নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুই ‘সাংবাদিক’কে গণধোলাইয়ের পর আটক করেছে জনতা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের গ্রেফতার করে বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে চাঁদাবাজি ও মাদক মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের নিজামের চৌপথি বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক পরিচয়ে বাজারে গিয়ে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা চালায় দুই ব্যক্তি। তারা স্থানীয় একটি কথিত মাদক বিক্রেতার দোকানে গিয়ে টাকা দাবি করে এবং উপস্থিত ক্রেতাদের ভিডিও ধারণ করতে শুরু করে। ক্রেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও ভিডিও বন্ধ না করায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা দোকানের পাশে একটি বাড়িতে মাদকদ্রব্য ছুঁড়ে ফেলে ‘নিউজ করবে’ বলে ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করলে জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের গণধোলাই দেয়।
পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে তারা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগী স্বপন নামের একজন ২০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি ও মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট অভিযোগে মামলা করলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখায়।
গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তি হলেন—সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার মো. রাজা ও বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বালাপাড়ার মো. ইবনে আলী বাবু।
মো. রাজা নিজেকে ‘দৈনিক ক্রাইম তালাশ’ নামক একটি অনলাইন পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিতেন। তিনি পেশায় একজন বিরিয়ানি ও কাপড় বিক্রেতা এবং কৃষক লীগের সদস্য। অপরজন ইবনে আলী বাবু হাটবাজারে হলুদ বিক্রি করেন। তিনি আগে ওলামা লীগের সদস্য ছিলেন, বর্তমানে উপজেলা বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত। নিজেকে তিনি সম্প্রতি বিএনপির সাংবাদিক বলে দাবি করে আসছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে সৈয়দপুরের বিভিন্ন বাজারে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতেন। কখনো মাদক বিক্রেতা, কখনো থাই ভিসা প্রতারকের অভিযোগ তুলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন তারা।
সৈয়দপুর উত্তরা আবাসনের বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন আগে ওই দুইজন সাংবাদিক পরিচয়ে গলায় কার্ড ঝুলিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইউএনও পাঠিয়েছেন বলে তথ্য সংগ্রহের নামে মানুষের কাছে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। অথচ ইউএনও এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।
তোফাইল মোড়ের এক ব্যক্তি জানান, তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে এবং তার কাছে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রমাণও রয়েছে। সৈয়দপুরের মশলা ব্যবসায়ী হাজী ইসতিয়াক অভিযোগ করে বলেন, ঈদের সময় তার মালসহ ভ্যান আটকে চাঁদা দাবি করা হয় এবং পরে নানা হুমকি ও হয়রানির শিকার হন।
ক্রাইম তালাশ অনলাইন পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মানিক ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, ক্রাইম তালাশ নামের অনলাইন পত্রিকাটি কাজ শুরুর দিক থেকেই তারা সাংবাদিকতার নামে কার্ডের ব্যবসা করেন যা সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থি। স্বল্প শিক্ষিত লোকজনের কাছে টাকার বিনিময়ে কার্ড দেওয়ার কারণে সারাদেশে তাদের এমন অপসাংবাদিক অনেক রয়েছে। এই ধরনের লোকজন এলাকায় সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি করে বের হচ্ছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফইম উদ্দিন বলেন, ভুয়া পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় জনতা দুই কথিত সাংবাদিককে আটক করে। পরে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ৯৯৯-এ খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। রাতে ভুক্তভোগী স্বপন তাদের বিরুদ্ধে ২০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, যে অনলাইন পোর্টালের পরিচয়ে তারা সাংবাদিকতা করতেন বলে দাবি করতেন সেই ‘দৈনিক ক্রাইম তালাশ’-এর সৈয়দপুর ব্যুরো অফিস প্রধান লোকমান হাকিম বুধবার এক ফেসবুক লাইভে এসে অভিযুক্তদের বহিষ্কার ঘোষণা দেন। তাদের এই অপকর্মের দায় পত্রিকা বহন করবে না এবং তিনি এতে কোনো দায়ভার নিচ্ছেন না বলে জানান।
সারাবাংলা/এইচআই