পারভেজ হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাবি ছাত্রদলের মানববন্ধন
২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৪২
ঢাকা: প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ছাত্রলের সক্রিয় কর্মী এবং সে গণঅভ্যুত্থানের নায়ক ছিল। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর পর যদি ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মীর ওপর হামলা হয় তাহলে আমরা বাংলা সিনেমার শাবানার মতো ক্ষমা করে দেব না। দেশনেতা তারেক রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী আমরা ৩১ দফা পূরণের মাধ্যমে আমাদের প্রতিশোধ নেব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী একটি সামাজিক সংগঠন। আমরা দল-মত নির্বিশেষে সবাই এখানে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন এই ব্যানার কলুষিত করছে কারা?- এই প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি। এই ব্যানারকে কাজে লাগিয়ে যারা অগণতান্ত্রিক আচরণ করে যাচ্ছে, তাদের আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি।’
নাহিদ ইসলামের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তিনি কথায় কথায় বলেন, ছাত্রদল সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে। আরে ভাই, কিছুদিন আগ পর্যন্ত তো নিয়োগ বাণিজ্য করে আপনার আশেপাশের লোকজন ফুলে-ফেঁপে তালগাছ হয়ে গেছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ে যে নিয়োগ পেল সে নিজেই তো ফ্যাসিবাদের দোসর।’
তিনি বলেন, ‘এখন হলগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছে। ’৭১ এর পরাজিত শক্তি এবং ’২৪ এর পরাজিত শক্তিরা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ক্যাম্পাসে লাগানো সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমরা সহিষ্ণুতা দেখিয়েছি। কিন্তু এখন আমরা নামে-বেনামে অনেকের ব্যানার দেখতে পাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্রদল যে পরিমাণ সহিষ্ণুতা দেখিয়েছি তা নজিরবিহীন। কেউ আমাদের খুব বড় কোনো ভুল ধরতে পারছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট ধারণ করেই আমরা কর্মসূচি গ্রহণ ও পালন করে থাকি।’
মিডিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার সময় এসেছে। আপনারা সুস্থ সাংবাদিকতা করুন। আপনারা যদি এখন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা না করেন দেশকে কে এগিয়ে নিবে? আপনারা কথায় কথায় টেম্পু স্ট্যান্ড, ট্রাক স্ট্যান্ড এই-সেই বলে আমাদের সমালোচনা শুরু করেন। মিস হেডলাইন দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ান এটা গ্রহণযোগ্য না। আপনারা আমাদের যৌক্তিক সমালোচনা করুন, আমরা নিজেদের শুধরে নেব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ব্যানারের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। কেউ যদি এই ব্যানারকে ব্যবহার করে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু, কঠোর অবস্থান নিতে ভুল করব না।’
ছাত্রদলের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রনেতাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সন্ত্রাসের রাজত্বকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চলছে। আমাদের উদারতা, নমনীয়তা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতাকে যদি কেউ সহজ সরলভাবে গ্রহণ করেন তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোন গুপ্ত সংগঠন না, গুপ্ত রাজনীতিতে বিশ্বাসী না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো সরকারি দফতরে আমরা কোনো অনির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধি দেখতে চাই না। তাদের সবাইকে অতি দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় ছাত্রপ্রতিনিধির নামে যে বৈষম্য চলছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ অবস্থান নেবে।’
ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অসংখ্য ছাত্র নির্যাতনকারী, ছাত্রলীগের দোসর, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা সাধারণ শিক্ষার্থী বেশে এখনো ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করছে। যদি কাউকে দেখেন ছাত্রলীগের দোসরের ভূমিকায় ছিল তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবগত করবেন।’
মানববন্ধনে ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান অনিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিম আক্তার শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম