Sunday 27 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পানিশূন্য’ তিস্তা বাঁচাতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি

হাসানুজ্জামান হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩১

তিস্তা নদী

লালমনিরহাট: ভারতের আগ্রাসনে পানির অভাবে খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন ধু-ধু বালু চর। বিস্তীর্ণ এলাকায় চর জেগেছে। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। বিপাকে পড়েছেন কৃষক। স্বস্তিতে নেই জেলেরাও। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুর্দিন পার করছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। অপরদিকে, নাব্যতা সংকটে বর্ষাকালে দেখা দেয় ব্যাপক বন্যা আর নদী ভাঙন। এতে বাড়ে দুর্ভোগ। তিস্তার যৌবন ফেরাতে, লাখ লাখ মানুষের জীবিকার এ উৎসকে চিরচেনা রূপে ফিরিয়ে আনতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

বিজ্ঞাপন

একসময় এই নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ করতেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। ধান, গম, ভুট্টা, সবজিসহ নানা রকম ফসল ফলাতেন তারা। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন জেলেরা। এখন শুধু হাহাকার।

তিস্তা পানিশূন্য। চারিদিকে জেগে উঠেছে চর আর চর। নদীতে কোথাও হাঁটুর নিচে পানি কোথাও আবার পানি শূন্য। পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা। ফলে ব্যয় ও শ্রম দুটোই বাড়ছে। লোকসান গুনছেন তারা।

নদীর বুকে জেগে ওঠা চর

নদীর বুকে জেগে ওঠা চর

লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, তিস্তা চরাঞ্চলে ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। পানি না থাকায় ফসল উৎপাদনে খরচ বাড়ছে দিনদিন। ডিজেল চালিত সেচ পাম্প লাগিয়ে কোন রকম পানি দিচ্ছেন।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌশুমে তিস্তায় ৩ থেকে ৪ হাজার কিউসেক পানি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৪ থেকে ৫শ’ কিউসেক। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পও কাজে আসছে না।

ভারতের সিকিম থেকে উৎপত্তি হওয়া তিস্তা নদী লালমনিরহাট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১১৫ কিলোমিটার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তার নাব্যতা সংকট রোধে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের আপত্তির কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। তাই তিস্তা পাড়ের মানুষ চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।

শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় জেগে উঠে চর। অপরদিকে, নদীর নাব্যতা সংকটে বর্ষায় ব্যাপক বন্যা আর নদী ভাঙন দেখা দেয়। বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্রতি বছর বাস্তহারা হয় হাজার পরিবার। এদিকে, তিস্তা নদীর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলন কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘন্টার লাগাতার কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, তিস্তা পাড়বাসীসহ সাধারণ মানুষ। এ আন্দোলন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দ্বিতীয় দিনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ আন্দোলন কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতৃবৃন্দ।

ফসল উৎপাদনে সেচ পাম্প

তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, উত্তরের জীবনরেখা তিস্তা নদী। প্রতিবেশী দেশের কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আটকে আছে। ফলে এখানে চাষাবাদ ব্যাহতসহ নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মানুষের ওপর। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে উত্তরের মানুষ। আমরা তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন শুরু করেছি। তিস্তাপাড়ে লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে র‌্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার, হেঁটে তিস্তা নদীপার, গণসংগীত, তিস্তাকেন্দ্রিক নাটক,সিনেমা প্রদর্শন ও মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতে তিস্তার এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মানুষজনের ব্যাপক সমর্থনও পেয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানান, তিস্তা বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিক তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। এ লক্ষ্যে চায়না পাওয়ার কোম্পানি ও বাংলাদেশের সরকারের উদ্যোগে তিস্তাপাড়ে ইতিমধ্যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় মানুষজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ে আশার আলো দেখতে পাবেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।

সারাবাংলা/এসআর

চাষাবাদ ব্যাহত তিস্তা বাঁচতে মহাপরিকল্পনা পানি শুন্য তিস্তা লালমনিরহাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর