Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার 


২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:১২

করোনা প্রকোপে হাঁপিয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ব। প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব, তৃতীয় বিশ্ব সকলেই।  প্রসঙ্গত, প্রথম বিশ্ব বলতে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররাষ্ট্র সমূহকে বুঝি— যারা ন্যাটোভুক্ত। এরা সকল দিক থেকেই অন্যদের চেয়ে উন্নত। উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, উন্নত প্রযুক্তি, শিক্ষা-দীক্ষা, মেধা-মননে সর্বক্ষেত্রে উন্নত।

দ্বিতীয় বিশ্ব বলতে রাশিয়া এবং তার মিত্র রাষ্ট্রসমূহ যারা ওয়ার’শ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। এরাও কোনোদিক থেকে কম নয়,  প্রথম বিশ্বকে টেক্কা দিয়ে চলাই এদের কাজ। উভয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার সম্পর্ক।

বিজ্ঞাপন

আর তৃতীয় বিশ্ব হচ্ছে— উপরের দুই বিশ্বের তাঁবেদার রাষ্ট্রসমূহ। ক্ষমতার মেরুকরণে মোড়ল দুই বিশ্বের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

তবে, এ নীতিতে কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড বাধিয়ে তুলেছে অদৃশ্য করোনা। কেননা এটি বৈষম্যহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সকল বিশ্বে। উঁচু-নিচু শ্রেণিবিভাগ ভুলে সবারই লক্ষ্য এক; করোনা নিরোধ। সমান্তরাল রেখায় দাঁড়িয়েছে তিন বিশ্ব। ক্ষমতাশালীদের ক্ষমতার দুর্গে ফাটল ধরেছে। তাঁবেদারি করতে হচ্ছে একমাত্র অদৃশ্য সত্ত্বার। মহামারির তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।  সুতরাং এই মহামারি রোধকল্পে সচেষ্ট অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে সবার। জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। মানব সেবাই তাদের ব্রত।

‘I Pledge to consecrate my life to the service of humanity. I will not use my knowledge contrary to the laws of humanity. I will maintain the utmost respect of human life from the time of conception.’    এ প্রতিজ্ঞা করেই চিকিৎসা পেশায় আত্মনিয়োগ করেছেন তারা। তবে সকলে যে এ প্রতিজ্ঞা যথাযথভাবে রক্ষা করছেন সেটা বলা মুশকিল। এ মুহূর্তে একজন চিকিৎসক যে সাধারণ মানুষের কাছে দেবতা প্যনাসিয়া (যিনি সর্বরোগের সমাধান করেন) সেটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যেতে পারে। এছাড়াও, শৃঙ্খলা রক্ষায় ঝুঁকি সত্ত্বেও কাজ করে চলেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন তরুণদের বৃহৎ একটি অংশ। তারা নির্ভীক। অভিবাদন তাদের। তাদের ত্যাগের উপাখ্যান স্মরণ করে  প্রায়শই আমরা ‘করোনাযোদ্ধা’ উপাধিতে ভূষিত করে থাকি। অবশ্যই তারা যোদ্ধা; সম্মুখ যুদ্ধ করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এ যুদ্ধে হাল ধরতে হবে আমাদের শিক্ষিত-সচেতন যুবসমাজকে। বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে কমপক্ষে একজন করে হলেও শিক্ষিত-সচেতন যুবক রয়েছে। তাদেরকে পরিবারের অন্য সবার সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। ‘বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন’ নীতি মানতে হবে। তবে এ নীতি কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য যাদের আগামী দিনের খাদ্য সংস্থানের জন্য ভাবতে হয়না। জীবিকার জন্য পরিবারের অধিকাংশ উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরই কর্মস্থলে যেতে হয় সুতরাং তাদের সুরক্ষার উপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে সুরক্ষার স্তরকে ধাপে ধাপে ভাগ করে নিন— যেমন, আক্রান্তের পূর্বে করণীয়, আক্রান্ত অবস্থায় করণীয়

আক্রান্তের পূর্বে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে যাতে আক্রান্ত না হই। নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষার ব্যাপারে একজন যুবক দায়িত্ব নিন। মনে করুন এই মহামারির সময়ে আপনার পরিবারের সুরক্ষার গুরুদায়িত্ব আপনার ওপর। এসময়ে নিজে মাস্ক পরা এবং অন্যদের মাস্ক পরতে বাধ্য করা, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে কাউন্সেলিং করা, হাতে এবং ঘরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জীবাণুনাশক দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে নজরদারি করতে হবে আপনাকেই।

তবে পরিবারের কোনো সদস্য আক্রান্ত হয়ে পড়লে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহস যোগানো, সাবধানতার সাথে তার পরিচর্যা করা, পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে আক্রান্ত-অনাক্রান্ত উভয়ের মাস্ক পরা এসব বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আপনাকেই হতে হবে আপনার পরিবারের প্রশাসক। আপনাকেও যুদ্ধ করতে হবে অদৃশ্য করোনার বিরুদ্ধে। প্রতিজ্ঞা করতে হবে আপনার পরিবারের সুরক্ষায় সর্বদা সজাগ থাকবেন। তাহলে আপনিও হবেন একজন করোনাযোদ্ধা। এ যুদ্ধ কেবল চিকিৎসক, প্রশাসক কিংবা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের নয়। এ যুদ্ধ সবার; লড়তে হবে সবাইকে।

মনে রাখতে হবে, করোনা আক্রান্ত রোগীর ৮০ ভাগেরও অধিক বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যান। শুধু দরকার সঠিক পরিচর্যা। আমি আশাবাদী শক্ত মনোবল আর সঠিক পরিচর্যা পেলে এ হার আরও বাড়বে। তবে এর অবনতি ঘটলে বিপাকের অন্ত থাকবে না আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের। যেখানে প্রথম বিশ্বের মজবুত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে অদৃশ্য করোনা, সেখানে আমাদের বঙ্গদেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভর করা নিতান্তই বালখিল্যতা।

সুতরাং এই অদৃশ্য শত্রু রোধে একমাত্র সচেতনতাই হতে পারে মূখ্য হাতিয়ার। প্রত্যেকে নিজের পরিবারের সুরক্ষার ব্যপারে সজাগ থাকলে বেঁচে যাবে তাদের পরিবার। সবার পরিবার সুরক্ষিত থাকলে সুরক্ষিত থাকবে দেশ। এ যুদ্ধ আপনার, আমার, সাবার। ‘কে আছে জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার’।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর