রিসেট বাটন ও ব্যথিত বেদন
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:০৯
সম্প্রতি দেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান ঘটে গেল। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে চলমান কোটা আন্দোলনটি অবশেষে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়ে তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটায়। বলা বাহুল্য, বিগত পনের বছরে আওয়ামী সরকারের একটানা ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অন্ধত্ব ও দাম্ভিকতা রাজনৈতিক ভাবে তাদেরকে যথেষ্ট অবিচক্ষণ ও অদূরদর্শী করে তুলেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে পরিস্থিতি চরম সহিংসতার দিকে নিপতিত হয়ে তা কঠিন সংকটে রূপ নেয়। ঝরে যায় ছাত্র, সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলার সদস্য সহ সহস্রাধিক তাজা প্রাণ। আহত হয় কয়েক হাজার।
এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি ট্রাজিক অধ্যায় হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। অবশেষে, প্রবল জনরোষে ৫ আগষ্ট সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। উল্লেখ্য, গত পনের বছরের আওয়ামী শাসনে দেশে প্রশংসনীয় উন্নতি সাধন হলেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির সিন্ডিকেট সেই উন্নয়নের ঔজ্জ্বল্যকে ম্লান করে দেয়। খোদ সরকার ও দলের মধ্যেই বিষয়টি প্রকাশ্যে সমালোচিত হয়। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে দেখা গেছে। তবে, ব্যাংকিং খাত বিধ্বংসী গুটি কয়েক নজিরবিহীন অর্থপাচারকারী মাফিয়াদের দোর্দন্ড প্রতাপে অর্থনীতি নীরবে হুমকির মুখে বাঁক নিয়েছিল। অপরদিকে হাটে-ঘাটে-মাঠে দলীয় ক্যাডারদের দখলবাজি ও সিন্ডিকেটবাজি তো ছিলই। যদিও এগুলো সব সরকারের আমলেই দৃশ্যমান ছিল তবে সর্বশেষ আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ শাসনের আমলে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল।
দুর্নীতির এমন বিচিত্র সব দৃশ্যপট জনমনে সুপ্তঘৃণ্য দীর্ঘশ্বাস সৃষ্টি করেছিল এবং এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব আন্দোলনকে সরকার পতনের চরম পরিণতির দিকে অনেকটাই ধাবিত করেছিল। লক্ষ্যনীয়, প্রচলিত এহেন সুবিধাভোগী তথাকথিত রাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক ধরনের নীরব অশ্রদ্ধা বিরাজমান আছে যা কখনো-কখনো কোনও-কোনও ইস্যুতে প্রকাশ পায়।
তবে সংঘটিত গণবিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ এমন এক রেনেসাঁর স্বপ্ন দেখেছিল যা প্রকৃত তথা বিশুদ্ধ রাজনীতির উম্মেষ ঘটিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বৈষম্যহীনচেতনায় সার্বজনীন করে তুলবে। কিন্তু, পাঁচ আগষ্ট হতে অদ্যাবধি জনজীবন যে রকম চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ধাবিত হচ্ছে তা আবার অতীতের সকল রেকর্ডকে রীতিমতো ছাড়িয়ে গেছে। আমরা দেখলাম, অভ্যুত্থানের সাহসে বলীয়ান হয়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জানমাল, আবাসস্থল, ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান ছারখার করে দেয়। এতে বহু কর্মজীবি মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। দেশব্যাপী শান্তির বার্তাবাহক মাজারগুলোতে নির্দয়ভাবে হামলা চালানো হয়। সমগ্র দেশে সংখ্যালঘু ও শিক্ষক নির্যাতন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। বিশেষ করে শিক্ষক হেনস্তা, আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই আটক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জুতা-ডিম নিক্ষেপ এমনকি শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করা, পেটানো এবং জুতার মালা পরিয়ে সামাজিকভাবে অপদস্ত করার মতো ‘মব জাস্টিস’ গুলো প্রতিহিংসার পালে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, হিংসা প্রতিহিংসার জন্ম দেয়- যা কখনোই কাম্য নয়।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (HRSS) এর তথ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল দুই মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৬২৫ জন এবং আহত ১০ হজারের বেশি যা রীতিমতো আতংকের। এর মধ্যে বেশির ভাগই পরিকল্পিত হত্যা। এতে গণপিটুনিতে নিহত হন ৬৫ জন এবং আন্দোলনে শ্রমিক নিহত হন ৯০ জন। উল্লেখ্য, পরিস্থিতি উন্নতির জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়। যদিও সরকার পতনের আগে থেকেই বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য তারা মাঠে ছিলেন। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষনে সেনাপ্রধান দেশের মানুষের জানমাল রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এর পরেও সমগ্র দেশে অগ্নিসন্ত্রাস সহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলে; এমনকি মাঠে সেনাবাহিনী বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও গণভবন ও সংসদ ভবনের মতো রাষ্ট্রীয় পরম স্পর্শকাতর জায়গা দুটিতে গণ-লুটতরাজ ঘটেছিল যাতে শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও দেশের ভাবমুর্তি দারুণ ক্ষুন্ন হয়েছিল। বলাবাহুল্য, যে সেনাবাহিনীর- মুক্তিযুদ্ধে ও দেশগঠনে গৌরবোজ্জল ইতিহাস রয়েছে, দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা সংকটময় মুহূর্তে হৃদয়স্পর্শী ভুমিকা রাখার মহতী কৃতিত্ব আছে, জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে যারা সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত সেই সুদক্ষ সেনাবাহিনী এমন অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন ব্যর্থ হলো তা জাতীয় ইতিহাসে এক গভীর প্রশ্ন হয়ে থাকবে। এমনকি সাধারণ জনমনেও বিষয়টি একটি সুপ্ত অথচ জ্বলন্ত প্রশ্ন রূপে বিরাজমান থাকবে।
সেনা প্রধান সেদিন জাতির কাছে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, সকল হত্যার বিচার করা হবে। অথচ আমরা দেখলাম যে, অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগষ্ট পর্যন্ত সংঘটিত সহিংসতার দায়মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশ্ন জাগে, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগষ্ট অবধি কথিত বিপ্লবের যৌক্তিকতা থাকে কি করে? ৫ আগষ্ট পরবর্তী দেশব্যাপী যে তান্ডবলীলা চলেছিল তা শতভাগ রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা যা সমগ্র দেশবাসী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে কেন নিরাপরাধ সাধারণ ছাত্রজনতার কাঁধে বন্দুক রেখে দায়মুক্তির নামে প্রকৃত দোষীদের নৃশংস অপরাধের ‘সেফগার্ড’ দেওয়া হচ্ছে? কেন সাধারণ ছাত্রজনতা এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের দায় নেবে? উল্লেখ্য, যে আওয়ামী সরকারকে ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে সেই আওয়ামী সরকারই সংঘটিত সহিংসতার দায় সর্বশেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সাধারণ ছাত্রজনতাকে দেয়নি এবং অদ্যাবধি দিচ্ছে না। সরকারের এ সিদ্ধান্তে প্রকারান্তরে সাধারণছাত্রদের আন্দোলনের স্বচ্ছতাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে এবং সাধারণ ছাত্ররা অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
যদিও আইন বিশেষজ্ঞ মতে, ফৌজদারি অপরাধে কাউকে দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সমগ্র দেশবাসী জানে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বহু নিরীহ, নিরস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও হত্যা করা হয়েছে। বহু সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা আগুনে দগ্ধ করা হয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে। তাহলে সেগুলোর বিচার কি হবে? একই ঘটনায় একদিকে দায়মুক্তি অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যাল! এতে সামগ্রিক বিচার প্রক্রিয়া কতটুকু স্বচ্ছ হতে পারে? সে ক্ষেত্রে সেনাপ্রধানের প্রতিশ্রুতির কি হবে? এ প্রশ্নগুলো সচেতন মহলে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, সেনাপ্রধান কোনও ব্যক্তি নন। তিনি একটি মান্যবর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিশ্রুতি মানেই উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি।
উল্লেখ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বলে শুরুতেই সাধারণ জনগন আন্দোলনের প্রতি স্বতস্ফুর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক ব্যানারে আন্দোলন হলে এভাবে সমর্থন দিতেন না। কেননা, এদেশের নৈতিকতা বিবর্জিত কথিত রাজনীতি ও অধিকাংশ রাজনীতিকদের প্রতি সাধারণ নিরপেক্ষ মানুষদের আস্থা অতি নগন্য বা নাই বললে চলে। কিন্তু আমরা বিস্মিত হলাম, সম্প্রতি আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পারষ্পরিক বচসা শুরু করেছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসঙ্ঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ এর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা তার একান্ত সচিব মাহফুজ আলমকে এই আন্দোলনের ‘মাষ্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় উপস্থাপন করেন।
রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবি, এই আন্দোলনের মাষ্টারমাইন্ড তারেক জিয়া, যিনি বহু আগে থেকেই এটার ছক এঁকে চলেছেন যাতে হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো যায়। বিএনপি দাবি করেছে এই আন্দোলনে তাদের ৪২২ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। ইসলামি ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আবু সাদিক বলেছেন, আন্দোলন যাতে বিতর্কিত না হয় সে জন্য তিনি তার পরিচয় গোপন রেখে আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছিলেন। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে জামায়াতও বহু আগে থেকেই এই নকশা এঁকে চলেছিল। পাশাপাশি বাম সহ অন্যরাও এ আন্দোলনের পরিকল্পনা এঁটেছিল মর্মে খোলাসা করেছে। এভাবে এরা সকলেই পূর্বপরিকল্পিত ছিল। তাহলে কি শুধু আওয়ামী সরকারের পতন ঘটিয়ে অতীতের মতো ক্ষমতার পালাবদল ঘটানোর জন্যই এই আন্দোলনের অবতারণা? স্মর্তব্য, আওয়ামীলীগ এই আন্দোলনের শুরুতেই আন্দোলনে কোমলমতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহৃত হচ্ছে মর্মে অভিযোগ তুলেছিল! অতএব তাদের অভিযোগ অবশেষে কি তবে সত্য প্রমাণিত হলো? অনেক সাধারণ মানুষও এখন হতবাক!
কারণ তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন কিন্তু কোনও রাজনৈতিক স্বার্থের সহিংস আন্দোলনকে তারা সমর্থন করেননি। কেননা, ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতির প্রতি তারা এখনও অনেক তিক্ত-বিরক্ত। তাই এ যাবৎ রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলো গণজাগরণ ঘটিয়ে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। তাহলে এই আন্দোলনের কি কোনও দর্শনতাত্ত্বিক মূল্য (phylosphical value) নাই যাকে বিপ্লব বলা যায়? ‘বিপ্লব’ বা ‘revolution’ সুসংজ্ঞায়িত ও ব্যাপক ব্যাখ্যায়িত একটি গভীর তাত্ত্বিক বিষয় যার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে জনকল্যানার্থে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতির স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিবর্তন বা পরিমার্জন বা সংস্কার ঘটানো এবং এ লক্ষ্যে চেতনার পরিশুদ্ধ নবজাগরণ বা নবোদয় সৃষ্টি করা; অর্থাৎ ‘বিপ্লব’ একটি মহতী মনস্তত্ত্ব যেখানে প্রহসন বা ষড়যন্ত্রের কোনও স্থান নেই। যেমন- কালজয়ী ও ঐতিহাসিক ‘ফরাসী বিপ্লব’ , বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মহান ‘মুক্তিযুদ্ধ’ প্রভৃতি। কিন্তু, আমরা হতাশ হলাম! আমরা দেখলাম- সরকার পতনের সাথে-সাথে জেলবন্দি-দুর্ধর্ষ জঙ্গি, ইন্টারপোল তালিকাভুক্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ার রোমহর্ষক অপরাধীদেরকে অবলীলায় কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হলো! কোন আইনের বলে এদেরকে মুক্ত করা হলো তা স্বয়ং আওয়ামী বিরোধী আইনবিদরাই প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও সরকার পতন বা পরিবর্তনের পর এ জাতীয় দৃশ্যের অবতারণা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। এটা আমাদের রাজনৈতিক সমাজের একটি দীর্ঘলালিত অপসংস্কৃতি যা ’৭৫ পরবর্তী হতে চর্চিত হয়ে এখন তা অপকৌশল রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
তাহলে তো যে লাউ সে-ই কদু! লাউ কদুর পার্থক্য অথবা সামঞ্জস্যতা যারা ব্যাখ্যা করবেন সেই প্রগতিশীল, সুচিন্তক সূধীগণরাও এখন না পারছেন লিখতে, না পারছেন বলতে! ‘মব জাস্টিস’ অথবা এলোপাতাড়ি মামলা বা অযথা গ্রেপ্তারের মতো ‘ইল প্রাক্টিস’ এর ভয়ে! প্রসঙ্গত, মুক্তমত প্রকাশে সরকার প্রধানের সমালোচনা করায় সম্প্রতি তাপসী তাবাসসুম উর্মী নামক একজন তরুণ ম্যাজিস্ট্রেটকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে! তিনি প্রধান উপদেষ্টার বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কিছু ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এখন মব ভায়োলেন্সের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যে সংবিধানের শপথে এই সরকার পরিচালিত সেই সংবিধান মতে তাপসী রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সরকারের নয়। সরকার তার ‘মনিটর’ মাত্র। তিনি তো রাষ্ট্রবিরোধী কথা বলেননি বা কাজ করেননি। তিনি সরকারের সমালোচনা করেছেন। সাময়িক বরখাস্তের পূর্বে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে কি? কোন আইনি যৌক্তিকতায় তাকে বরখাস্ত করা হলো তা পরিস্থিতি বিবেচনায় জনগণের মাঝে সরকারের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিৎ ছিল; অথবা,তার বিরুদ্ধাচারণ না করে মুক্ত মত প্রকাশের সুযোগ দানের এক বিরল ও অনুপম দৃষ্টান্ত ড. ইউনুস সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। কেননা, তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তাকে ‘ওপেন সমালোচনা’ করার জন্য। আর ঐ ঘোষণা থেকেই উর্মী উৎসাহিত হয়ে থাকতে পারেন। এভাবে আমরা অনেকেই উৎসাহ বোধ করেছি। কেননা, বিগত প্রতিটি সরকারই স্বাধীন মতপ্রকাশের কন্ঠকে কমবেশি রোধ করার চেষ্টা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় সমাজে এক ব্যতিক্রম অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বিধি বাম হলো! তবে কি অতীতের রাজনৈতিক সরকার গুলোর মতো আমলা ও পাবলিক ‘বশীকরণ’ এর প্যানিক ট্যাবলেট হিসাবে সরকার এটি করেছে? যদি তাই হয় তবে কিসের সংস্কার? কার সংস্কার? এ তো অতীতের তিক্ত সংস্কৃতিরই পুনঃপরিণতি!
বিশেষজ্ঞগণের মতে, এই সরকারের সাংবিধানিক বিতর্ক আছে। তবুও পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা এই অর্ন্তবর্তী সরকারকে মেনে নিয়েছি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নিরপেক্ষ ও নির্মোহ থেকেই এই সরকার দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের পথ ও পরিবেশ সৃষ্টি করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করবেন। কিন্তু আমরা খুব স্পষ্টভাবেই এই সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক আচরণ পরিলক্ষণ করছি। এই সরকার শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছেন যা সচেতন মহলকে হতবাক করে তুলেছে। মনে হচ্ছে শুধু আওয়ামিলীগ ও তার সরকার দলীয় সাবেক দোসরদের নির্মূল করার আ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই তাদের আগমন! কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে টার্গেট করে এমন অনাচারিক চর্চা তাদের নিরপেক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ করে বৈকি। দেশকে ফ্যাসিজম মুক্ত করতে যেয়ে যেন সরকার নিজেই ফ্যাসিস্ট না হয়ে যায় সেদিকে তাদের সতর্কতা থাকা উচিৎ। কেননা, এখনো সাধারণ মানুষ তাদের কাছে ব্যতিক্রম ভাল কিছু আশা করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য- ‘ফ্যাসিজম’ এদেশের সরকার ও রাজনীতিতে একটি ভয়ংকর সংস্কৃতি রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অবশ্য, ফ্যাসিজমের তকমা থেকে বিগত কোন সরকারই পুরোপুরি মুক্ত নন। পার্থক্য শুধু পরিমাণে। এর ডকুমেন্টারি ইতিহাস অনেক লম্বা যা এই পরিসরে শেষ করা যাবে না। আওয়ামী সরকারের কৃতকর্মের জবাব জনগণের কাছে তাকে দিতেই হবে। জনগণই যাতে তার রাজনৈতিক বিচার করার সুযোগ পায়- সেই সুযোগ এই সরকারের সৃষ্টি করে দেওয়া উচিৎ। আওয়ামীলীগের কঠোর সমালোচনা করার অধিকার সকল রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষ রাখে কিন্তু নিরপেক্ষতার সংবিধিবদ্ধ শর্তে অন্তর্বর্তী সরকার রাখেন না। কিন্তু কার্যত হচ্ছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত যা ইতিহাসে অপ্রিতীকর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সরকার সকল সেক্টরে আওয়ামিবিরোধী কর্তাব্যক্তি বসাতে যেয়ে নিশ্চয়ই কোনও নিরপেক্ষ মতবাদীকে বসাচ্ছেন না। বাস্তবতা হলো, আওয়ামীলীগের সকলে ফ্যাসিবাদীতে বিশ্বাসী নয়। আওয়ামী হলেই যে সে ফ্যাসিবাদী হবে এটা অযৌক্তিক ভাবনা। বহু আওয়ামী সমর্থক আছেন যারা ফ্যাসিবাদ সমর্থন করেন না। তারা আওয়ামী সরকারের বহু বিতর্কিত কার্যকলাপের কট্টর সমালোচক ছিলেন। যা তাদের লেখনে বচনে প্রকাশিত আছে। বহু আওয়ামী নেতাকর্মী আছেন যারা সমাজে বেশ গ্রহনযোগ্য। সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই সত্যটাই প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এদেশের একজন সজ্জন, বুদ্ধিজীবি মানুষ। অথচ সত্যবাকের কারণে তাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মর্মে সচেতন মহলে সন্দেহ আছে। ১লা জুলাই থেকে ১লা আগষ্ট পর্যন্ত বহু আওয়ামী সমর্থকরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভেবে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে তাতে নৈতিক সমর্থন যুগিয়েছিল। কিন্তু ২ আগষ্ট হতে আন্দোলনটির মধ্যে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষি মহলের অনুপ্রবেশ স্পষ্ট হয়ে উঠলে তারা সতর্ক হয়ে যায়। সে জন্য তাদেরকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে এখন হেয়জ্ঞান বা আইসোলেট করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা ভাবা উচিৎ।
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে সফরকালে নিউইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবৃতিকালে ছাত্ররা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন। একই সাথে তিনি জুলাই-আগষ্টের অর্জনকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে আঘাত করেছে মর্মে পক্ষে -বিপক্ষে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। লক্ষ্যণীয়, ‘রিসেট বাটন পুশ’ যদি ‘action’ হয় তবে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হলো ‘creation’। অতএব, ‘Equation: action+creation=situation’; অর্থাৎ, এ দু’টি শব্দগুচ্ছের ‘পরিস্থিতিগত’ তাৎপর্য বিশ্লেষণ করলে খুবই স্পষ্টভাবে সমীকরণ মিলে যায় যে, জুলাই-আগস্ট এর অর্জনকে একটি নব্য মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা হিসাবে উপস্থাপন করে ’৭১ এর মাহাত্ম্যকে হেয় জ্ঞান ও ম্লান করার অপচেষ্টা চলছে। প্রকারান্তরে এতে অর্জনের কৃতিত্বও বিতর্কিত হচ্ছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দাবী উঠেছিল প্রাণের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের; স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে; স্কুলের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ শপথ বাক্য বাতিল করা হয়েছে; বিকৃত করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যাকে। ঠিক সেই মুহুর্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন যা আমাদের ত্রিশলক্ষ শহীদের আত্মায় আঘাত করেছে। পরম ব্যথিত করেছে দুই লক্ষ বীরাঙ্গনা নারীর বিসর্জনকে। এই ঘটনায় সরকার থেকে প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো পুরস্কারস্বরূপ পাকিস্তানের সাথে পররাষ্ট্রীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় করা হয়েছে। কৃতিত্ব স্বরূপ পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের জন্য ভিসা উম্মুক্ত করেছেন। প্রতিদানস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানি পণ্য লাল তালিকা মুক্ত করে তল্লাশিবিহীন অবাধ আমদানি অনুমোদন দিয়েছে।
জাতীয় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর ধানমন্ডি ৩২ কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করা হয়েছে; অথচ, এ ঘটনায় সরকার থেকে অদ্যাবধি নুন্যতম দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি দেশব্যাপী ১৫ আগষ্ট পালনে চরম আতংক সৃষ্টি করে তীব্র বাধা প্রদান করা হয়েছে। অবশেষে জাতীয় শোক দিবস বাতিলও করা হয়েছে। ‘জাতির পিতা’ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে অস্বীকৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘বাঙালি,বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা’- এই বিশুদ্ধ সত্যটি ইতিহাসেরই নির্যাস। অথচ ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় প্রকাশ্যে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। একই সাথে ৫ আগষ্টকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হিসাবে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়- যা অত্যন্ত গর্হিত। সরকারের ছত্রছায়ায় সংঘটিত সমগ্র বিষয়গুলি সচেতন মহলকে দারুণ হতবাক করেছে। এমনকি স্বাধীনতার বিস্ফোরণকাল ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জাতীয় দিবসকেও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমগ্র দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে চরম অশ্লীলতা প্রদর্শনপূর্বক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, ‘বঙ্গবন্ধু’ কারোর পারিবারিক বা নির্দিষ্ট কোনও দলীয় সম্পত্তি নয় যে তাদের বিতর্কিত কর্মের অপমান-অবমাননা তাকে পোহাতে হবে। তিনি আমাদের জাতীয় সম্পদ। জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসাবে তিনি ‘বিশ্বসম্পদ’ও বটে। বাঙালি, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ পরষ্পর অবিচ্ছেদ্য ইতিহাস। ইতিহাসের এই অবিভাজ্য মৌলতত্ত্বকে অস্বীকার করে এদেশে কোনও সরকার ও রাজনীতি অর্থবহ ও পরিপুষ্ট হতে পারে না। সম্প্রতি একটি মহল থেকে লাখো শহীদের রক্তস্নাত ‘৭২ এর সংবিধানকে ভারতকেন্দ্রিক বিজাতীয় অপবাদ দিয়ে অবমাননা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংবিধান বিশেষজ্ঞগণ মর্মাহত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমনকি সংবিধানের আমূল পরিবর্তনেরও জল্পনা চলছে। এদিকে জুলাই হত্যাকান্ড দিয়ে ‘৭১ এর গণহত্যাকে ম্লান করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
কোনও হত্যাকান্ডই গ্রহনযোগ্য নয়। লক্ষ্যনীয়, জুলাই আন্দোলনে এ যাবৎ ১৪২৩ জন নিহত হয়েছেন। বিপরীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ত্রিশ লক্ষকে মহলবিশেষ গণহত্যা বলছেন না। যারা এ চেষ্টা করছেন তারা কখনই ‘৭১ এর মর্মন্তুদ বিশাল ও বিস্তৃত হত্যাকে ‘গণহত্যা’ হিসাবে মানসিক বা রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেননি। এরকম তুলনার দ্বারা কার্যত জুলাই হত্যাকান্ডের অকৃত্রিম আত্মত্যাগকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে বৈকি। উল্লেখিত কর্মকান্ডগুলির নেপথ্যে সরকারের প্রত্যক্ষ- পরোক্ষ সমর্থন লক্ষ্যণীয়। ফলে পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বুঝা যায়, ‘রিসেট বাটন’ সংশ্লিষ্ট ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বচনটি কোনও হঠকারি শব্দচয়ন নয়। এটি একটি বিজাতীয় সুপ্ত মনস্তত্ত্বরই বহিঃপ্রকাশ বলে অবস্থাদৃষ্টে বিবেচিত হচ্ছে মর্মে সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। উল্লেখিত চলমান পরিস্থিতি তার সেই ‘রিসেট বাটন’ মনস্তত্ত্বরই সমার্থক মর্মে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। ‘রিসেট বাটন’ এর সমর্থনে তিনি ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ না ভেবে ঘুণে ধরা রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার সময়োপযোগী ‘সংস্কার’ বা ‘পুনঃসংস্কার’ এর ভাবনা বলতে পারতেন। দিতে পারতেন- এ থেকে জনগণের মুক্তির বারতা। কিন্তু তা না করে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র নামে তিনি এদেশের জনগণের মর্মমূলে আঘাত করেছেন মর্মে দেশপ্রেমিক জনগণ পরম ব্যথিত হয়েছেন। যৌক্তিক বাস্তবতায় একই জাতি, দেশ ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে দুইটি স্বাধীনতার সহাবস্থান হতে পারে না। ‘স্বাধীনতা’ কোনও ঠুনকো শব্দ, কথ্য বা ভাবতত্ত্ব নয়। এটি রাতারাতি জন্মায় না। এটি ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিশুদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট জাতির অবিনশ্বর ত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রসূত হয়। কোনও ‘হার্ডওয়্যার’ বা ‘সফ্টওয়্যার’ এর রূপক উপমা দিয়ে এর গুরুতত্ত্ব ও মাহাত্ম্য নিরুপন করা যায় না। একমাত্র নিখাদ স্বদেশপ্রেমই পারে স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করাতে।
পরিশেষে, জুলাই মুভমেন্টের বেসিক ফিলোসফি ছিল একটি বৈষম্যহীন ন্যায় ভিত্তিক সার্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। দেশের জাতীয়তা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আঘাত বা নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যে নয়। কোনও দল বা গোষ্ঠীকে নির্মূলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ভুলুন্ঠিত করার জন্য নয়। মত প্রকাশের কন্ঠ রোধ করার জন্যও নয়। বস্তুত, হীন উদ্দেশ্যে কোনও বীরোচিত ত্যাগের স্ফুরণ ঘটে না। আঁধার ক্লান্ত সমাজে একটি রেনেসাঁ সৃষ্টি করতেই সুহৃদ- মুগ্ধ, আবু সাঈদরা অকাতরে আত্নবিসর্জন দিয়েছেন। তাদের সেই ত্যাগের মহিমা কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে বা ক্ষমতায়নের সাঁকো সৃষ্টিতে যাতে অপব্যবহৃত না হয়; যদি হয় তবে তা হবে তাদের আত্মদানের সাথে নির্মম প্রতারণা করা।
লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই