শুভ জন্মদিন রাদওয়ান মুজিব
২১ মে ২০২৪ ১৭:৪১
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ১৯৮০ সালের ২১ মে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক’র জ্যৈষ্ঠ সন্তান ববি ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। যদিও তার ছোটবেলাটা অন্য দশজনের মতো ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শহীদ হবার পর প্রথমে তার মা খালাকে এবং পরে তাদের সব ভাই বোনকে বিদেশে ফেরারি জীবন যাপন করতে হয়েছে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় রাদওয়ান মুজিব ববি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে গভর্ন্যান্স অ্যান্ড হিস্ট্রি বিষয়ে স্নাতক এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে কমপেরেটিভ পলিটিক্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। তার ছোট দু বোন টিউলিপ সিদ্দিকী ও রুপন্তী সিদ্দিকীও লন্ডনে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টিউলিপ সিদ্দিকী যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত একাধিকবারের সংসদ সদস্য। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকেও নির্লোভ সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি দেখভাল করেন। সিআরআইয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ইয়ং বাংলা’র মাধ্যমে তিনি তরুণদের ক্ষমতায়ন ও উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করছেন। জাতির পিতার জীবনী গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘গ্রাফিক নভেল মুজিব’ প্রকাশের প্রধান কারিগর ও প্রকাশক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশের পর শিশু-কিশোর ও তরুণদের কাছে তার ঘটনাবহুল জীবন নতুন রূপে তুলে ধরার জন্য বইটিকে তিনি গ্রাফিক নভেলে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধুর লেখা অন্যান্য বইয়ের উপরেও একই কাজ করছেন।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির এমন একটা সময়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা যে সময়টা ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতার্থেই এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় । তার নানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম নিশংসভাবে হত্যা করে সেই হত্যার বিচারের পথ আইন করে বন্ধ করে চলছিলো খুনিদের শাসন ও উল্লাসনৃত্য। বিভীষিকাময় ছিল বাংলার পরিবেশ। সামরিক শাসক জিয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশেই আসতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ই আগস্ট’র শহীদদের কবরের পাশে বসে দোয়া দরুদ পড়ার সুযোগও দেয়নি খুনিরা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের নানা বাধা বিপত্তি ও রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরলে তারও বেশ কিছুদিন পরে তাদের সন্তানদের নিয়ে ভগ্নহৃদয়ে বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশে ফেরেন শেখ রেহানা। তৎকালীন খুনি শাসকগোষ্ঠী ও তাদের আস্কারায় ক্ষমতার দাপট দেখানো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কারণে ববি ঢাকার কোন ভালো স্কুলে পড়তেই পারেনি। শিশু বাচ্চাকেও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা তাড়া করে বেড়াত। অন্যদিকে তৎকালীন সামরিক শাসক গোষ্ঠীর ভয়ে ভালো স্কুলগুলোতে ভর্তিও করত না। শিশুমনেই তাদের এক ধরনের বিষাদের ছোঁয়া লেগে থাকতো। যা ছিল খুবই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও এই নির্মোহ থাকাটা নানা নানির মতই তার পিতা-মাতা সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ততার কারনে। তার পিতা শিক্ষাবিদ ডক্টর শফিক আহমেদ সিদ্দিক বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। তার মা শেখ রেহানা লন্ডনে চাকুরী করে খুব সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করতেন। কত অল্প বয়সে বাবা-মা-ভাই- ভাবিকে হারিয়ে বড় বোন শেখ হাসিনার স্নেহ-মমতায় দীর্ঘ সমস্যাসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করে এতদুর পর্যন্ত এসেছেন। এই উপমহাদেশের সবচাইতে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান,নিভৃতচারী নির্লোভ, সজ্জন, স্নিগ্ধ রুচির পরিচ্ছন্ন ব্যাক্তিত্বের অধিকারী, মমতাময়ী শেখ রেহানাকে ক্ষমতার কোন দম্ভ স্পর্শ করেনি। ঠিক তেমনই করেনি তাদের সন্তানদের। জীবনে যেমন কষ্ট করেছেন, দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণা বইতে হয়েছে, একটি দেশের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা হিসেবে বিদেশ-বিভুঁইয়ে কাজ করে খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছে। সন্তানদেরকে নিয়ে দিনের-পর-দিন নিদারুণ কষ্ট করতে হয়েছে । আবার সেই কষ্টের পরে বিরাট ক্ষমতার হাতছানি বা ক্ষমতার মধ্যেমনি হয়ে থেকেও যে সহজ-সরল নির্লোভ পরোপকারী সাদামাটা জীবন যাপন করা যায় বা মানুষের মঙ্গলে কাজ করা যায়, তার প্রমাণ শেখ রেহানা। যিনি বড় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুধু ছোটবোনের মমতায় বা শ্রদ্ধার জায়গা থেকে নয় অনেক সময় একজন অভিভাবকের ন্যায় সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন। একই কথা প্রযোজ্য রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির ক্ষেত্রেও। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও ক্ষমতা তাঁদেরকে এক বিন্দু পরিমানও স্পর্শ করতে পারে নাই । মা যেমন সবসময় নেপথ্যে থেকে বোন শেখ হাসিনাকে সৎ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে চলেছেন ঠিক তেমনইভাবে খালাকে নির্মোহভাবে দেশ পরিচালনায় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন ববি। আমরা প্রায়ই পত্রপত্রিকায় তার নানা সামাজিক ও মানবিক সৃজনশীল চিন্তা চেতনার প্রতিফলন দেখতে পাই, যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঐসব বিষয়ে পরামর্শ নেন ও বাস্তবায়ন করেন ।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি একজন সুশিক্ষিত আধুনিক চিন্তায় মননে গড়ে ওঠা এক প্রতিশ্রুতিশীল মেধাবী তরুণ যে তার মা এবং খালাকে প্রতিনিয়ত ক্ষমতার অন্তরালে থেকে দেশের জন্য কাজ করতে নিরলস সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তার ছোট বোন রুপন্তিও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। সুখের কথা তারা সবাই এখন নিজ যোগ্যতায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত । ববি এখন যেকোন দায়িত্ব নেয়ার মতো যোগ্য, দেশের যে কোন দায়িত্ব নিতেই পারেন। কিন্তু নিজে ক্ষমতা না নিলেও মা শেখ রেহানা ও খালা শেখ হাসিনার মতো দেশের মানুষকে নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবেন চিন্তা করেন এবং খালা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সৎ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন পাশে থাকেন। তিনি এত সুযোগ থাকার পরও ক্ষমতার কোন দাম্ভিকতা দেখান না। নীরবে নিভৃতে দেশের জন্য কাজ করে যান। যেমনটা করেন তার খালাতো ভাই সজীব ওয়াজেদ জয়। জিনিয়াস এই দুই ভাতৃদ্বয় আজকের ডিজিটাল এই বাংলাদেশরই দুই প্রধান কারিগর।
ববির পিতা- মাতা দুজনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল ও সার্থক মানুষ। মা শেখ রেহানা নেপথ্যে থেকে বিশ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশের জন্য অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সেবায় নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী বোনকে সহযোগিতা করছেন । বাংলাদেশকে তুলনামূলক অল্প সময়ের মধ্যে একটি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছেন। তার মা জাতির পিতার কন্যা ও খালা দেশের প্রধানমন্ত্রী,তাদের সন্তান হিসেবে ক্ষমতার মোহে আবিষ্ট না থেকে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবিক ও সৃজনশীল কার্যক্রমে নিজেকে জড়িত রেখে একজন মেধাবী তরুন হিসেবে, যোগ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। মা বা খালা যখন ক্ষমতার শীর্ষে তখন সন্তান হিসেবে ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন না হয়ে নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত করে মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। পিতা ড.শফিক আহমেদ সিদ্দিকও মেধাবী সজ্জন মানুষ, নামকরা অর্থনীতিবিদ । নিভৃতে লোভ লালসা ও ক্ষমতা থেকে দূরে থেকে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন । সে সবই আজ আশীর্বাদ হিসেবে এসেছেন ববির জীবনে। পয়তাল্লিশ বছরে পা দেয়া সুদর্শন, মেধাবী, সৎ পরিচ্ছন্ন, সৃজনশীল তরুন প্রজন্মের অহংকার দেশ বিদেশে নানামুখি কাজে নেতৃত্ব দিয়ে নিজেকে যোগ্য হিসেবে তৈরি করে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিশ্চয়ই একদিন দেশের জন্য কাজ করবেন। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নানা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখে আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন সেই প্রত্যাশা সবার। জন্মদিনে অভিবাদন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এজেডএস