ঝড়ের পরে আম কুড়ান না, ঝড় মাথায় নিয়েই চলেন
১১ জুন ২০২৪ ১৬:১২
১১ জুন শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস। ২০০৮ সালের এই দিনে তৎকালীন জংলি শাসক মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের কারাগার থেকে জনগণের আন্দোলনের চাপে মুক্তি পান।তারও প্রায় বছরখানেক আগে তৎকালীন অবৈধ কেয়ারটেকার সরকার আওয়ামীলীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে সংসদ ভবনের সাব জেলে নিক্ষেপ করে এবং এক বছরের বেশি সময় আটক করে রাখে। তখন তাকে কারাগারে স্লো পয়জনিং করে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের কথাও শোনা যায়। কিন্তু তৎকালীন স্বৈরশাসকদের কোন ষড়যন্ত্রই তাকে আটকে রাখতে পারেনি। তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শেখ হাসিনাকে হয়তো ভয় দেখাতে এই গ্রেফতার করে থাকতে পারে তৎকালীন কেয়ারটেকার সরকার। কিন্তু তিনি ভয় পাওয়ার পাত্র নন। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, তিনি ঝড় দেখে পালিয়ে যান না, ঝড় মাথায় নিয়েই চলেন আর এই হচ্ছে শেখ হাসিনা। তিনি তার পিতার মতোই সাহসী, নির্ভীক। একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের যে সকল বৈশিষ্ট্য ও গুনাবলী থাকা দরকার তা প্রায় সম্পূর্ণই শেখ হাসিনার মধ্যে বিদ্যমান। প্রথমত তিনি একজন ফুলটাইম রাজনীতিবিদ। রাজনীতি এবং দেশ যার ২৪ ঘন্টা ধ্যান জ্ঞান। এটা অবশ্য উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবও ছিলেন তাই। উপমহাদেশ তো বটেই পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন রাজনীতিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুজনই সমগ্র জীবন দেশ ও রাজনীতির জন্য উৎসর্গ করেছেন। রাজনীতির মাঠে নিজেদেরকে কখনো ফাঁকি দেননি। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণেই সমগ্র জীবন রাজনীতি করেছেন ও করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ এই রাজনীতির চলার পথে প্রচন্ড বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিবেশ মোকাবেলা করেছেন। প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়েছেন কিন্তু ঝড় মাথায় নিয়েই এগিয়ে গিয়েছেন। বারবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন কিন্তু দমে যাননি। এই যে দুর্নিবার সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া তার মূল ভিত্তি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর মতোই সাহস দেশপ্রেম ও সততা নিয়ে এগিয়ে চলছেন। এই এগিয়ে চলার প্রেরণা হচ্ছে দেশের জনগণ।
বঙ্গবন্ধু যেমন তার সমগ্র রাজনীতির জীবনে একদিনের জন্য পিছপা হননি, দমে যাননি কোন অপশক্তির সাথে আপোষ করেননি। ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও তার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে এক বিন্দুও কোন অপশক্তির সাথে আপোষ করেননি, থেমে যাননি। কঠিন বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন,জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন, মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছেন কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি যুদ্ধ করে এগিয়ে যাচ্ছেন, এগিয়ে গেছেন সফল হয়েছেন কিন্তু মাঠ ছেড়ে যাননি। পিতার হত্যাকারীদের প্রচলিত আইনে বিচার করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত স্থাপন করে যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকে দেশের জন্য অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। এসবই একজন উদ্যোমি গতিশীল দেশপ্রেমিক সাহসী রাজনীতিকের পরিচয় বহন করে। তিনি সমানতালে দল ও দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এ যেন এক ক্লান্তিহীন পথিক। এই ক্লান্তিহীন পথ চলার আসলে শক্তি সাহস তিনি পান কোথা থেকে? দিনরাত চব্বিশ ঘন্টার আঠারো ঘণ্টাই তিনি বিরামহীন কাজ করেন। একুশ বার মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তাকে চীরতরে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যে হামলায় ২৪ জন নেতা কর্মী শহীদ হয়েছিলেন। তারপরেও কুচক্রীরা তাকে থামাতে পারেনি। হয়তো তারই ধারাবাহিকতায় মইনুদ্দিন- ফখরুদ্দিন সরকারও তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র এটেছিল কিন্তু দমাতে পারেনি। এখনো দেশি-বিদেশি কুচক্রীরা তৎপর। সুযোগ পেলেই ঝাপিয়ে পড়বে। কিন্তু তিনি দুর্নিবার দুঃসাহসিক । তিনি বারবার বলেছেন তার পিতার মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবেন কিন্তু কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করবেন না। সেভাবেই তিনি এগিয়ে চলছেন।
শেখ হাসিনার অপরাধ তিনি দেশের জন্য বিরামহীন কাজ করে চলেছেন। অপশক্তি খুনিদের মূল উৎপাটন করেছেন। একারণেই দেশবিরোধী শক্তির তিনি চক্ষুশুল। কিছু বিদেশী অপশক্তিও এদের সাথে জড়িত বলে ধারণা করা হয়। নবীন স্বাধীন বাংলাদেশের বিশাল নেতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেও ছিল এরা। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আধুনিক কালের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা, জাতির পিতা। তিনি দেশের মানুষকে প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করতেন ভালবাসতেন। শত্রুকেও তিনি কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করতেন, কাছে টেনে নিতেন। তিনি শত্রুকে চিনতে পারেননি, ধরে নিয়েছিলেন তার কোন শত্রুই নেই। তাই তাকে সপরিবারে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন বাঙালিরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তার বিশ্বাস হয়তো সঠিকই ছিল। কিন্তু বাঙালি বেশধারী পাকিস্তানি পেতাত্বারা তাদের বিদেশি প্রভুদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধুর সেই বিশ্বাসকে নির্মমভাবে ভুল প্রমাণ করেছে। তার জন্য তাকে সপরিবারে শাহাদত বরণ করতে হয়েছে। নবীন বাংলাদেশের অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ অকালে পিতৃহারা হয়েছে। দীর্ঘদিন অপশক্তির কবলে থাকতে হয়েছে। পিছিয়ে গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তারা পেড়ে উঠছে না। দেশি-বিদেশি বহুবিধ চক্রান্ত এখনো চলমান। কিন্তু শেখ হাসিনা মৃত্যু ভয়, সমস্ত চক্রান্ত উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছেন। এক বিন্দু তাকে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারবেনা। তিনি পিতার মতোই মৃত্যুকে পরোয়া করেন না।
তিনি পিতার সব গুণ পেয়েছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়তো দেখে যেতেন তারই আদরের কন্যা তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তারই মতো দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ঘাতকেরা তা হতে দেয়নি। পিতার অসমাপ্ত কাজ তিনি সম্পাদন করছেন তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। তিনি পিতার যোগ্য উত্তরসূরী। তিনি পিতার মত দয়ালু সৎ সাহসী ও দেশপ্রেমিক। মানুষকে ভালোবাসার এক বিরল গুণের অধিকারী। বঙ্গবন্ধুর মতই সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত। ক্ষমতার দম্ভ তাকে স্পর্শ করতে পারেনা। ক্ষমতাকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করে জনগণের আমানত মনে করে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি লোভ-লালসা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। ক্ষমতার তিনি অপব্যবহার করেন না, ক্ষমতা দেখান না। দেশ ও মানুষের কল্যাণই যার প্রধান ব্রত। তার এই বিরামহীন পথ চলার সাহস শক্তি পরিবারের অসীম ত্যাগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট তিনি যা হারিয়েছেন তার আর হারাবার কিছু নেই। তিনি প্রায়ই এ কথা বলে থাকেন। সব হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে কষ্টকে পাথর চাপা দিয়ে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত আছেন। এ এক কঠিন পথ চলা, বলা বা লেখা যতো সহজ চলা ততোই কঠিন। তিনি তাই করে চলেছেন।
দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় দলের নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি তার অর্ধেক সময় ক্ষমতার মসনদে থেকে সমানতালে এগিয়ে যাওয়া কোন সহজ কথা নয়। নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে নিজ দলের মধ্যে এবং বাইরে নানামুখী চক্রান্তকে মোকাবেলা করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করা সমগ্র পৃথিবীর সেরা নেত্রী এখন শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে দেশের জন্য কুড়িটির বেশি জাতীয় বাজেট দেয়ার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক শীর্ষ ফোরাম জাতিসংঘেও তিনি বিশবার ভাষণ দিয়েছেন, দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি এখন পর্যন্ত উপমহাদেশ তো বটেই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পার্লামেন্টারিয়ান, টানা আট বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি তিনবার সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এবং পাঁচবার সংসদ নেতার দায়িত্ব পালনের বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি সংসদেও সমানভাবে সক্রিয়। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সংসদীয় কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন,বিতর্ক করেন। সংসদীয় কার্যক্রমের উপস্থিতিতে তিনি একেবারে শীর্ষে। এ সবই তার সংসদীয় গণতন্ত্রমনা, গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন এক সক্রিয় ও গতিশীল নেতার পরিচয় বহন করে। যা দেশে বিদেশে বিরল। তিনি সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সম্মান করেন, মর্যাদা দেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। সংসদীয় আন্তর্জাতিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরামের নেতৃত্ব তার আমলই দেয়া। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের দুই শীর্ষ পদে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়া তারই দূরদর্শী নেতৃত্বের ফসল।
এসব কারণেই হয়তো শেখ হাসিনার পিছনে কোন না কোন দেশি-বিদেশী অপশক্তি লেগে আছে। তিনি তা জানেন এবং খোলাখুলি ভাবে বলেনও। কিন্তু তিনি দুর্নিবার, নির্ভীক। তিনি সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কাউকে ভয় করেন না, কারো কাছে মাথা নত করেন না। তিনি দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালবাসেন। দেশের মানষের ভালবাসাই তার মূল শক্তি ও সম্পদ। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এক রাতে পিতা-মাতা ভাই ভাবি আত্মীয় পরিজন হারিয়ে ও নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি হয়েছেন নীলকন্ঠী। তিনিও পিতার মতো নিজের জীবন দিবেন কিন্তু কোন অপশক্তির কাছে মাথানত করবেন না। তিনি ঝড়ের পরে আম কুড়াবেন না, ঝড় মাথায় নিয়েই এগিয়ে যাবেন। তার ভয় পাওয়ার কিছু নেই, হারানোরও কিছু নেই। তার একমাত্র লক্ষ্য ক্ষুধা মুক্ত , দারিদ্র্যমুক্ত,শিক্ষিত,আধুনিক, উন্নত মর্যাদাশীল কল্যাণকর স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের। যার পথে তিনি রয়েছেন।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঝড়ের পরে আম কুড়ান না- ঝড় মাথায় নিয়েই চলেন মত-দ্বিমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার