৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ
২৩ জুন ২০২৪ ১১:৫৬
‘বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ’ ইতিহাসে এই তিনটি নাম অমলিন এক ও অভিন্ন। বাংলার ইতিহাসে এই তিনটি নাম একই সূত্রে গাঁথা। ঠিক শেখ হাসিনার নামও আওয়ামী লীগের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত । তিনি এই দলটির দীর্ঘ সময়ের সভাপতি। একটানা ৪৪ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ মানেই দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, স্বাধীন পতাকা। তেমনি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য ও অর্জনের নামও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম বৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক দলও আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যাঁর পথ চলা শুরু। প্রথম সেই সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ সময় শেখ মুজিব কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
প্রতিষ্ঠার দিনই ১৯৪৯ সালের ২৪ জুন বিকেলে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্যে জনসভা করে। সংগঠনের জন্মের দিনই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। আওয়ামীলীগের হাত ধরেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, পরবর্তীতে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন,৬৬’র ছয় দফা আন্দোল ‘৭০ এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে ‘৭১ এ সুমহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জন্মের ৭৫ বছরে বাইশটি সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। সংগঠন হিসেবে প্রায় নিয়মিতই হয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সামরিক শাসনামলে সম্মেলনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। সর্বশেষ ২০২২ সালের বাইশ তম জাতীয় সম্মেলনে একটানা সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ তো বটেই সারা পৃথিবীর ইতিহাসে কোন রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব পালন করা নেতাও তিনি।
শেখ হাসিনা পিতা মাতার প্রথম ও বড় সন্তান। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় শেখ হাসিনা। স্বভাবতই একটু বেশি আদরেরই ছিলেন। স্বাভাবিক সন্তান হিসেবে পিতার যেমন আদর স্নেহ ভালবাসা পাওয়ার কথা ছিল তেমনটি পাননি শেখ হাসিনা। এই যে পাননি তা পিতার নিজের কোন দোষ ত্রুটির কারণে নয়। পিতার ন্যায্য ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। ঠিক তেমনই পিতাও সন্তানের মধুর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সমগ্র পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল সন্তান শেখ হাসিনার যখন জন্ম হয় তখন পিতা শেখ মুজিবুর রহমান জেলে,যখন সেই সন্তানের বিয়ে হয় তখন পিতা বঙ্গবন্ধু জেলে,যখন প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয় তখনও বঙ্গবন্ধু জেলে এবং যার সামনে ফাঁসির দড়ি ঝুলছে এবং পাশেই তার জন্য খোড়া হচ্ছে কবর । শেখ হাসিনা পিতা, জাতির এবং রাস্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সময় সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত বিদেশে ছিলেন। পিতা মাতা বা প্রিয়জনের মৃত্যুর পর শেষ বারের মতো মুখখানি দেখাতে হয় বা দেখায় কিন্তু শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা শেষ বারের মতো পিতা- মাতার পবিত্র মুখখানি দেখতে পাননি। একথা যত সহজে লিখি বা বলি কিন্তু বিষয়টা যে কত কঠিন ও হৃদয়বিদারক শুধুমাত্র ভুক্তভোগী ভালো জানেন এবং বোঝেন। তেমনি একজন পিতা মাতার সন্তান শেখ হাসিনা।
পিতা মাতা ভাই ভাবি আত্নীয় স্বজনসহ পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে এক রাতে নির্মম নিঃসংশ ভাবে হত্যা করার পর সেই খবর আচমকা প্রবাসে বসে শুনে সন্তানের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে তা কি কল্পনাও করা যায়! সেই সন্তান যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল হয়ে যায়নি সেটাই তো সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত। বেঁচে থাকতে হয় তাই হয়তো বেঁচে ছিলেন। সেই দুর্বিষহ কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকাই একদিন দেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসলো। বঙ্গবন্ধু জীবনভর লড়াই সংগ্রাম করেছেন। লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল জুলুম নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করেছেন। ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এসেছেন, মৃত্যু বারবার হাতছানি দিয়েছে কিন্তু আপোস করেননি, দমে যাননি। পাকিস্তানী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে চব্বিশ বছরের সংগ্রামে চৌদ্দ বছরই জেল খেটেছেন। তিনি যেমন নিরলস সংগ্রাম করেছেন তেমনি বিজয়ীও হয়েছেন। একই কথা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একই কথা প্রযোজ্য আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও। আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ ৭৫ বছরের পথ চলায় সব শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। আওয়ামী লীগ তার সংগ্রামী ঐতিহ্যকে লালন করে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এখনো বুক টান করে মাথা উঁচু করিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন তখন তার বয়স ছিল চৌত্রিশ। আওয়ামী লীগের মতো একটি বিশাল রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বয়স ও সময় সেটা আক্ষরিক অর্থেই ছিল না। তারপরে তখনকার পরিবেশ ছিল খুবই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। একদিকে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের দুঃশাসন কাল। অন্যদিকে তার পৃষ্ঠপোষকতায় জাতির পিতার খুনিদের আস্ফালন। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পথ ছিল কণ্টকময়। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনাকে সব সময় ধাওয়া করেছে কোনো না কোনো বুলেট বোমা। কিন্তু ভরসার জায়গা ছিল দেশের মানুষ ও তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা এবং আল্লাহপাকের অশেষ রহমত। মানুষের ভালোবাসাকে সম্মান করেই পনেরই আগস্টের বিয়োগান্তক বেদনাকে বুকে ধারণ করে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সামরিক শাসক জিয়া ছয়টি বছর তাকে দেশেই আসতে দেয়নি। পিতার কবরের পাশে বসে দোয়া দরুদ পাঠ করতে পারেননি। কিন্তু ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে আগমন করার পর থেকেই অমানিশার অন্ধকার কাটতে শুরু করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ আবার আশায় বুক বেঁধেছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল বাংলাদেশের মানুষ। সেই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে বারবার মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছে। মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় প্রতিবারই তিনি বেঁচে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুও সিকি শতাব্দী ধরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল জুলুম নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করে এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন সার্বভৌম করে দিয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের যে ভিত্তিমূল তিনি তৈরি করে গিয়েছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেই অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করার জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পঁচাত্তর-পরবর্তী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম তিনি শুরু করেছিলেন তা এখনও অব্যাহত আছে। সেই সংগ্রামের প্রথম পর্যায়ে সামরিক জান্তা জিয়া-এরশাদের দুঃশাসনকে মোকাবিলা করেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে সুখী সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের নেতৃত্ব এখনও দিয়ে চলেছেন। এই যে লম্বা পথচলা তা কন্যা হিসেবে তার পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন পোড় খাওয়া দেশপ্রেমিক রাজনীতিকেরই পরিচয় বহন করে। তিনি পিতার আদর্শ বহন করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ নির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার এই কাজের শক্তির মুল উৎস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই যে তার সব কর্ম এবং উদ্দীপনার সাহস, শক্তি ও প্রেরণা তাতে কোনো সন্দেহ নাই। তিনি পিতার যোগ্য উত্তরসূরি।
শেখ হাসিনার বড় গুণ হচ্ছে সততা এবং সাহস। যা তিনি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। তিনি দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ তিনি সব সময় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো অসীম সাহস তাকে তার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিকূল পরিবেশ পাড়ি দিতে সহায়তা করেছে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের যখন হাল ধরেন তখন পথটা খুবই কঠিন ছিল। পিতা-মাতা, ভাই-ভাবি, আত্মীয়-স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিনত করে দেশের মানুষের ভালোবাসা নিয়ে শেখ হাসিনা সেই অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়েছেন। এ পথ ছিল কাঁটা বিছানো, প্রতি পদে পদে হায়েনাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোনোকিছুই দমাতে পারেনি শেখ হাসিনাকে। নিজের দুটি শিশু বাচ্চাকে বিদেশে রেখে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও মানুষের ভোট ভাতের অধিকার রক্ষা করার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। তার প্রাথমিক পরিসমাপ্তি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এই পথ পাড়ি দিতে শেখ হাসিনাকে ’৭৫-এর খুনিদের বিরামহীন ঔদ্ধত্য পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে জর্জরিত আওয়ামী লীগকে জনগণের আকাংক্ষার প্রতীকে পরিণত করতে দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করতে হয়েছে । সারা দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সফর করেছেন। ’৭১ ও ’৭৫ খুনিদেরকে পরাজিত করতে এবং সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাকে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বারবার দমন করতে চেয়েছে, হত্যা করতে চেয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার দুর্নিবার সাহস ও মানুষের ভালোবাসা তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং তিনি বার বার বিজয়ী হয়েছেন। তার এই সংগ্রাম পিতা বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সংগ্রামকেই মনে করিয়ে দেয়।
শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই দয়ালু ও মানুষকে ভালোবাসার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। তিনি যেমন প্রান্তিক মানুষের দুঃখে নিজে কষ্ট পান ঠিক তেমনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নানা কষ্ট দুঃখের ভাগীদার হয়ে মমতার হাত নিয়ে পাশে দাঁড়ান। তিনি জীবনযাপনে যেমন সাধারণ, ব্যক্তিত্বে নেতৃত্বে তেমনই অসাধারণ। ঠিক যেন পরম্পরা। বঙ্গবন্ধুর মতোই গ্রামের খেটেখাওয়া অসহায় নিরীহ মানুষকে অবলীলায় বুকে টেনে নিতে পারেন। একইভাবে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সমানভাবে অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন,সহায়তা করেন, তাদের সাহস জোগান। কী সরকারি দল, কী বিরোধী দল কতশত পরিবারকে যে নীরবে-নিভৃতে শেখ হাসিনা তাদের সংসার খরচ, পড়াশোনার খরচ, চিকিৎসার খরচ বহন করেন তা হয়তো আমরা দেশের অনেক মানুষই জানি না। বঙ্গবন্ধুও তাই ছিলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসতেন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তাঁর কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনাও মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় আজও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় যাবত সরকার প্রধান হিসেবে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের এই ভালোবাসার কাছে সব অপশক্তি আজ পরাজিত। বঙ্গবন্ধু যেমন এখনো মানুষের কাছে সমুজ্জ্বল তার দ্যুতি এখনো যেমন চারপাশ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও এখন বাংলাদেশের নির্ভরতার বাতিঘর। ঠিক যেন বঙ্গবন্ধুর মতই।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং তাঁর শাহাদতের পরেও প্রায় দুই দশক তাঁর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর অমানবিক অপপ্রচার হয়েছে । তাতে বাংলার মানুষের কাছ থেকে, পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে এতটুকুও তাঁকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেনি কুচক্রীরা। বরং বঙ্গবন্ধু দিন দিন মানুষের কাছে আরো উজ্জ্বল, আরো দীপ্তিময় হয়ে উঠেছেন। দিন আরো যত যাবে কুচক্রীরা ইতিহাসে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। আর বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্মের, তাঁর অপরিসীম ত্যাগ ও মানুষকে ভালোবাসার কারণে বাংলার ঘরে ঘরে, বাঙালির মননে,হৃদয়ে দিন দিন প্রজ্জ্বলিত শিখার মত উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও একইভাবে অপপ্রচার মিথ্যাচার চলে আসছে। সব অপপ্রচার ষড়যন্ত্র মিথ্যাচারকে পায়ে মাড়িয়ে পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো অসীম সাহস, দেশপ্রেম, সততা নিয়ে যে দুর্বার গতিতে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন তাকে কোনভাবেই আটকে রাখা যাবে না।
অন্যদিকে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পথ চলাও মসৃণ ছিল না। যদিও জন্মের পর পরেই আওয়ামী লীগের অর্জন ছিল ঈর্ষণীয়। প্রতিষ্ঠার পর পরই ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ও ‘৫৪ নির্বাচনের জয় ছিলো অভূতপূর্ব সাফল্য। বিশেষ করে তরুন শেখ মুজিব দলের নেতৃত্ব নেয়ার পর আর পিছনে ফিরতে হয়নি। তাকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে কিন্তু এগিয়ে গেছেন। এখানে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ গঠনের প্রেক্ষাপটও চলে আসে। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে ‘বঙ্গবন্ধু’কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তখন তিনি অবশ্য বঙ্গবন্ধু হননি। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু। এখানে উল্লেখ্য যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিলো তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল। এর মধ্যে ১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নতুন নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শুরুর দিকে আওয়ামীলীগের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।
মোট কথা জন্মের শুরু থেকে জনগণের, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ সংগ্রাম শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রধান ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর দলটি কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ৫৪’র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনেও তৎসময়ের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিপুল জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের বিরাট গ্রহণযোগ্যতা অর্জিত হয়। ১৯৫৪ সালের মার্চের আট থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর একচ্ছত্র জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা ও ভূমিকায় বিরাট বিজয় অর্জিত হয়। ২৪ বছরের পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী মুসলিম লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দু’বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার ছিল।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার বেশ কিছুদিন পর পরই প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ কেউ দল ছেড়ে অন্য দল গঠন করা ছিল আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধাক্কা। জন্মের কিছুদিন পরপরই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা ভাসানী,সহ সভাপতি আতাউর রহমান খানসহ কয়েকজন নেতা দল ত্যাগ করে আলাদা আলাদা নতুন দল গঠন করেন। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপমহাদেশের বোধহয় একমাত্র রাজনৈতিক নেতা যিনি মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকেন। এই সময়ে এসে বোঝা যায় তাঁর সেই দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারনেই আওয়ামী লীগ গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগঠনে পরিণত হয় এবং তিনি নিজেও শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা হন এবং একটি স্বাধীন দেশ উপহার দেন। তার জন্য তাঁকে বিশাল ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। চৌদ্দ বছর জেলের প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়। ফাঁসির দড়ি ঝুলতে থাকে তাঁর সামনে । কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে শেখ মুজিবের মত তরুণ নেতৃত্বের হাতে যখন দলের মুল নেতৃত্ব চলে আসে তখন আওয়ামী লীগ আবার বিরাট শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। নিঃসন্দেহে বলা যায় এই ঘুরে দাড়ানের পিছনে যার ক্যারিসিমাটিক নেতৃত্ব তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগকে প্রকৃত অর্থে জনগণের দলে পরিণত করেছিলেন। নিজেও জনগণের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ছিলেন। তখনও ছিল আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু সমান্তরাল। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর তিনি নিজেও মানুষের ভালোবাসায় হয়েছিলেন শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু। সেই পথ চলা ছিল খুব খুব কঠিন। জনগণের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সেই কঠিন পথ তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দল আওয়ামীলীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের সেরা অর্জনও স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ এক অভিন্ন স্বত্তা,যেন একই বৃত্তে তিনটি ফুল।
একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চার পাঁচ বছরের মাথায় ক্ষমতায় যাওয়া এবং দুইযুগ সংগ্রাম, সাধনা,নির্যাতন নিপীড়ন ভোগ করে স্বাধিকারের আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করার পিছনে মুখ্য ভূমিকায় যে দল তাঁর নাম আওয়ামী লীগ। যার চালিকা শক্তি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। অনেক বড় বড় নেতা আওয়ামী লীগে থাকলেও দলের কর্তৃত্ব নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু যখন পরিপূর্ণভাবে আসীন হন তখনই বাঙালি তাঁর সুদৃঢ় নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধুর কারণেই আওয়ামী লীগ বাংলার ঘরে ঘরে সুদৃঢ় অবস্থান তৈরী করে। যার ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়। আর সেই দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হন জাতির পিতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রায়ই বলে থাকেন আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। যথার্থই আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। যে কারণে ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে থাকলেও কিছু ভুলত্রুটি বাদে আওয়ামীলীগ গতিশীল ও জনসম্পৃক্ত থাকে। তাই ৭৫ বছর বয়সের আওয়ামী লীগ বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে পাকিস্তান আমলে একবারসহ স্বাধীন বাংলাদেশে টানা চারবারসহ মোট ছয়বার ক্ষমতায় আসীন। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল। কোন কিছু চাওয়া পাওয়া ছাড়াই গ্রামের একদম খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষটি আওয়ামীলীগ করে মনের টানে দেশের টানে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ‘শেখ’ সাহেবের জন্য ‘শেখের’ বেটির জন্য। এখানেই আওয়ামী লীগের শক্তি। এক কথায় মাটি ও মানুষের দল আওয়ামী লীগ।
আওয়ামীলীগ জন্মের পর থেকে সরকারে বা বিরোধীদলে যেখানেই থাকুক সবসময় গতিশীল এবং মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। পাকিস্তানের চব্বিশ বছরে মাত্র বছর তিনেক ক্ষমতায় ছিলো। বাদবাকি সময় বিরোধীদলে থাকলেও মানুষের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে গেছে এবং সফল হয়েছে। যাঁর ফলশ্রুতিতে আওয়ালীগের সবচেয়ে বড় অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংগঠন হিসেবে যাঁর নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে যেখানেই থাক আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল মূল লক্ষ্য। ক্ষমতায় থাকলে অধিকার বাস্তবায়ন করেছে, বিরোধীদলে থাকলে অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং অধিকাংশ সময় জনগণের অধিকার আদায় করে ছেড়েছে। সে সামরিক সরকারই হোক বা তাদের আশ্রিত অন্য কোন সরকারই হোক। আওয়ামীলীগের জন্মের এই পচাত্তর বছরে বাংলাদেশের যা অর্জন তা অর্জিত হয়েছে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বেই এবং নেতা হিসেবে যাঁর নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁরই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ শত বাধা অতিক্রম করে বিশ্বের বুকে বুকটান করে মাথাউচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ।
স্বাধীন বাংলাদেশও যেমন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সেরা অর্জন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের সেরা অর্জন সমূহের নায়কও বঙ্গবন্ধু। অল্প সময়ে দেশের জন্য একটি যুগোপযোগী সংবিধান প্রণয়ন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ,ওআইসিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় সদস্যপদ লাভও বঙ্গবন্ধুর সেরা অর্জন। বঙ্গবন্ধুর দুটি স্বপ্ন দেশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি তার একটি তার জীবদ্দশায় করে গেছেন, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন দেখে যেতে পারেননি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরন করার কারনে। অন্যদিকে ১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া তার কন্যা শেখ হাসিনাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল তারই খুনিদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক জিয়ার রেখে যাওয়া বিএনপি সরকার। কিন্তু মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে গিয়ে তিনি তার পিতার স্বপ্ন অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তা একদিন পূরণ হবেই। এই কাজে নানা সময়ে দলের লোকদের দ্বারাও বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই দুঃসময়ে বেইমানি করে দূরে সরে গেছে। আবার ভুল বুঝে ফিরেও এসেছেন। মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া নেতাদেরও ক্ষমা করে দলে জায়গা দিয়েছেন। আবার তার নিজের সঙ্গেও যারা বেইমানি করেছেন তাদেরকেও ক্ষমা করে কাছে টেনে নিয়েছেন। নিজেই বলেছেন, তিনি নীলকণ্ঠী, বিষ খেয়েও হজম করতে পারেন। এটাও তার নেতৃত্বের একটি বিরাট গুণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন দেশের মানুষের কাছে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হিসেবেই অধিক আপন বা শ্রদ্ধেয়। তেমনই শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রীর আসনকে টপকিয়ে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন এটাই শেখ হাসিনার অর্জন। কন্যা হিসেবে তিনি সফল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনেছেন এবং তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশকে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ করেছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু যে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। কন্যা শেখ হাসিনা সেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে বহুদূর এগিয়ে গেছেন যা একদিন বাস্তবায়িত হবেই।
সর্বশেষ বলা যায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ তো বটেই এই উপমহাদেশের মূলধারার একটি প্রধান রাজনৈতিক দল। তাই এই দলটিকে নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও কম নয়। একটি দেশের মূলধারার শিল্পসংস্কৃতি,অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্মীয় গোঁড়ামিহীন মূল্যবোধ, গণতন্ত্র, পরমতসহিষ্ণুতা, নারীর স্বাধীনতা, খেলাধুলা, জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম অন্যান্য যেসব মূল বৈশিষ্ট্য একটি দেশ ধারণ করে তার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। শিল্পসংস্কৃতি,ধর্মীয় স্বাধীনতা, বিচারহীনতা, অসাম্প্রদায়িকতা,গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা যেখানেই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে তা রক্ষা করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগের কোটি কোটি কর্মী সমর্থক ক্ষমতার জন্য এই দল করে না। এই দল শুধু একটি রাজনৈতিক দল না, একটি অনুভূতির নাম, আবেগের নাম,ভালবাসার নাম। প্রতিষ্ঠার ৭৫ তম বছরে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়। একইভাবে আওয়ামী লীগের লাখো কোটি কর্মী, সমর্থক শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা। একটি রাজনৈতিক দলের ৭৫ বছর পূর্তি সেটাও একটি দেশের বড় অর্জন আর সেই দলটির তো বটেই। শুভকামনা,শ্রদ্ধা শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের প্রতি।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই