রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতে ফাইনালে শেখ রাসেলের সঙ্গী কিংস
২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:৪১
।।স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকাঃ মধুর প্রতিশোধ বলতে পারেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ঢাকা আবাহনীর কাছে হেরেই এএফসির স্বপ্ন হারাতে হয়েছিল বসুন্ধরা কিংসকে। এবার স্বাধীনতা কাপে সেই ম্যাচের ঝাল মেটাল কিংস। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটা যেন মুহূর্তে মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল গোলের সম্ভাবনায়। সেটা অনুমেয় ছিল। টুর্নামেন্টের বিগ টু যখন মুখোমুখি তখন এমন হবে স্বাভাবিক।
নির্ধারিত ম্যাচে যখন ১-১ ড্র। ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। রোমাঞ্চ ছড়ানো এই নাটকের জয়ী কিংস। জয়ের ত্রাতা কোয়ার্টার ফাইনালের নায়ক আনিসুর রহমান জিকো। এবার আবাহনীর একটি গোল ঠেকিয়ে নিজেই ডু আর ডাই গোল করে ফাইনালে তুলে দেন কিংসকে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সেমি ফাইনালের ম্যাচটি শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়াতে থাকে। প্রথমার্ধে গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধেও টানটান উত্তেজনা। ৬২ মিনিটে কিংসের সুবর্ণ সুযোগ। সুফিলের পাস থেকে বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকেই জোড়ালো শট আবাহনীর গোলরক্ষক সোহেল ফেরালে ফিরতি বলে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন বদলি হিসেবে নামা মতিন মিয়া। বল মেরে দেন বারের উপর দিয়ে।
তার পাঁচ মিনিট পর এবার আবাহনীর আক্রমণ। ওয়ালির কাছ থেকে বেলফোর্ট বল পেয়ে এগিয়ে দেন ডি বক্সের ভেতরে। সানডের হেড ঠেকিয়ে দেন জিকো। আশাহত হয় মারিও লেমসের শিষ্যরা।
ম্যাচ আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে তখন উত্তেজনায় ভরপুর। ৬৯ মিনিটে কলিনদ্রেসের ব্যাকহিল পাস থেকে বল পেয়ে সুফিল এগিয়ে দেন মতিন কে। এবার সুযোগ নষ্ট করেন নি বসুন্ধরার এই ফুটবলার। গোলকিপারকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দলকে লিড এনে দেন মতিন (১-০)।
পিছিয়ে পড়ে আরও ভয়ংকর হতে থাকে আবাহনী। ৭৩ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারতো আকাশিরা। রায়হানের লং থ্রোতে বল যখন একেবারে সিক্স ইয়ার্ডের সামনে সেখান থেকে বারের উপর দিয়ে বল মেরে দেন রুবেল মিয়া। আবারও ব্যর্থ হয় আকাশি-হলুদরা। লাগাতার আক্রমণে সফল হয় আবাহনী। সমতায় ফেরে ৮১ মিনিটে। আফাগানি ডিফেন্ডার সাইঘানির পাস থেকে দুর্দান্ত হেডে বল জালে জড়ান বেলফোর্ট (১-১)। এর আগেও ফেড কাপের ফাইনানে কিংসের বিপক্ষে গোল করেছিলেন এই হাইতিয়ান।
ম্যাচের যোগ করা দ্বিতীয় মিনিটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতো আবাহনী। বলতে গেলে ভাগ্যের কাছেই যেন অবিশ্বাস্যভাবে অসহায় হতে হয়েছে তাদের। ডি বক্সের বাইরে থেকে সোহেল রানার সাইড ভলি বারে ঢুকছিলই। পোস্টে লেগে ফেরত আসলে রেফারি অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে খেলা নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অতিরিক্ত সময়ে কিংসের খেলোয়াড়দের যেন একটু ক্লান্তই লাগছিলো। তারই ফায়দা নিয়ে গোলমূখী আবাহনী। ৯৭ মিনিটে বড় সুযোগটা এবার তৈরি করেন সানডে। সোহেলের পাস থেকে ডি বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে সানডের বাঁকানো শট জালে ঢুকছিলই। দারুণভাবে আটকে দেন জিকো। ১০০ মিনিটে এবার আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় আবাহনীর। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বেলফোর্ট পাস এগিয়ে দেন সানডেকে। ঠিকভাবে বল জাল জমাতে পারেন নি এই নাইজেরিয়ান। ১১৯ মিনিটে এবার কিংসের প্রতিআক্রমণ। বল ডি বক্সের ভেতরে ফেলেন কাঞ্চন। আত্মঘাতি গোল খেতে পারতো আবাহনী। বল চলে যায় একেবারে পোস্ট ঘেষে।
পুরো সময় ১-১ ড্র থেকে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। এখানেও নাটক ছড়িয়েছে আবাহনী-কিংস।
প্রথম শটে সাইঘানির এগিয়ে দিলে দ্বিতীয় শটে বখতিয়ার সমতায় ফেরান কিংসকে (১-১)। এবার আবাহনীর মিস। বেলফোর্ট বারে মেরে মিস করলে মার্কোসের গোলে ২-১ লিড নেয় কিংস। ওয়ালির গোলে সমতায় ফেরে আবাহনী। তৃতীয় শটে হেমন্তের গোলে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে কিংস। রুবেল মিয়া আবাহনীকে সমতায় ফেরালে সাবেক আবাহনীর ফুটবলার নাসির এগিয়ে দেন কিংসকে। সানডে গোল করে সমতায় ফেরান। এখানেই নাটকের আবর্তন। গোল দিলেই ফাইনালে কিংস এমন সমীকরণের সামনে কলিনদ্রেসের শট আটকে দেন সোহেল। ম্যাচ সমতায় (৪-৪) থেকে চলে যায় সাডেন ডেথে। একটি করে শট নিবে দুই দল।
রায়হান এবার গোল করে আবাহনীকে এগিয়ে দেন। কিংসকে সমতায় ফেরান কাঞ্চন। পুরো পেনাল্টি শুট আউটে এক কাঞ্চনই যেন ভিন্নধর্মী শট বেছে নিলেন। বল জায়গায় বসিয়ে গোলের বিপরীত দিকে দৌড় দিয়ে আবার ফিরে শট নেন। ততক্ষণে সোহেল বোকা বনে যান। ম্যাচ তখন সমতায় (৫-৫)। বাদশা ও জনির গোলে ম্যাচ আবার সমতায় (৬-৬)।
এবারই জয়ের নায়ক জিকো। আবাহনীর জিতুর শট বাঁজপাখির মতো আটকে দেন জিকো। তারপরে কিংসের শটের পালা। এবার নিজেই শট নিতে এলেন জিকো। গোল করে জয়ের মুহূর্ত তৈরি করলেন। ৭-৬ ব্যবধানে আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালে তুললেন কিংসকে। সঙ্গে ফেড কাপের মধুর প্রতিশোধ তুলে নিলো কিংস।
এ জয়ে টানা দ্বিতীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। সেখানে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারিয়ে সঙ্গীর অপেক্ষায় বসে আছে শেখ রাসেল। ২৪ ডিসেম্বর বিকালে একই ভেন্যুতে কিংসের মুখোমুখি হবে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।
সারাবাংলা/জেএইচ
ঢাকা আবাহনী বসুন্ধরা কিংস শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র স্বাধীনতা কাপ ২০১৯