চাকরি বেঁচে যাচ্ছে হাথুরুর

টানা ৯টি সিরিজ হারের কারণে আগেই সব ক্ষমতা হারিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ এবং শ্রীলঙ্কার বর্তমান হেড কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। তার শিষ্যরা এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটির আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হাথুরুকে শ্রীলঙ্কায় উড়িয়ে নেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের এভাবে কোচকে ডেকে পাঠানোয় গুঞ্জন ওঠে, চাকরি হারাতে পারেন হাথুরু!

তবে, আপাতত চাকরি হারাচ্ছেন না বাংলাদেশের সাবেক কোচ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তার অধীনেই থাকবে লঙ্কান জাতীয় দল। ২০২০ সালের শেষ দিকে হাথুরুর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

বোর্ডের ডাকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কলম্বোয় ফিরেছেন হাথুরু। দলকে রেখে দেশে ফেরায় গুঞ্জন ওঠে তাহলে কী হাথুরুকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেই বরখাস্ত করছে লঙ্কান বোর্ড? এমন গুঞ্জনে পরে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা সেখানে জানায়, ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বসতেই হাথুরুকে জরুরি তলব করা হয়েছে। আলোচনার টেবিলে দলের বর্তমান পারফরম্যান্স, ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের স্কোয়াড কেমন হবে সেগুলো জানতে চাওয়া হবে হাথুরুর কাছে।

দলকে ওয়ানডে সিরিজের এক ম্যাচ বাকি থাকতে রেখে আসায় হাথুরুর জায়গায় কোচের দায়িত্ব পালন করেন ফিল্ডিং কোচ স্টিভ রিক্সন। ৫ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের সবকটি ম্যাচেই হেরেছে লঙ্কানরা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দায়িত্বে রিক্সন। প্রথম দুটি ম্যাচেই হেরেছে শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশ দলের হেড কোচ থাকা অবস্থায় দলের নির্বাচক ছিলেন হাথুরুসিংহে। নিজের ইচ্ছেমতো দলে খেলোয়াড় আনা, বাদ দেওয়ারও অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এরপর তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান নিজ দেশ শ্রীলঙ্কায়। সেখানেও নিজের ইচ্ছেমতো খেলোয়াড় নির্বাচন করেছেন হাথুরু। দেশের বাইরে একের পর এক ম্যাচ হারায় শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ক্ষমতা খর্ব করা হয় হাথুরুসিংহের।

শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচের সঙ্গে নির্বাচক কমিটিতেও রাখা হয়েছিল হাথুরুকে। যেমনটা তিনি ছিলেন বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশে সাফল্য পেলেও নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার হয়ে তেমন কোনো সাফল্য নেই হাথুরুর। যার ফলশ্রুতিতে দল নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয় এই কোচকে। দল নির্বাচনে আর সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। কার্যকর ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া গঠনে ব্যর্থ হাথুরুর কোচ হওয়ার প্রধান শর্তই ছিল নির্বাচক হিসেবে স্বাধীনতা দেওয়া। তবে, সেই ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পরও তিনি দলের কোচ হিসেবে থেকে যান।

এদিকে, আশান্থা ডি মেলের টিম ম্যানেজারের চাকরিটা টিকে গেছে। নির্বাচক কমিটির এই চেয়ারম্যান হাথুরুর সঙ্গেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। ডি মেল গণমাধ্যমে জানান, মিডিয়ায় আমাকে আর হাথুরুকে নিয়ে অনেক বাজে উপস্থাপন হয়েছে। আমরা একসঙ্গে বিশ্বকাপে কাজ করবো। তবে, কোচের কোনো অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেব না। বিশ্বকাপের জন্য সম্ভাব্য সেরা ১৫ ক্রিকেটারকে বের করে নিতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে হেরেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে ১১৩ রানে, তৃতীয় ম্যাচে ৭১ রানে আর চতুর্থ ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছে হাথুরুর শিষ্যরা। পঞ্চম ম্যাচে হারে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ৪১ রানের ব্যবধানে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে লঙ্কানরা তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামে। প্রথম দুটি ম্যাচে হেরে লঙ্কানরা এই সিরিজও খুঁইয়েছে। হাথুরুর অধীনে ৪৯ ম্যাচের মাত্র ১৬টিতে জিতেছে লঙ্কানরা।

বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড তৈরিতে চার দলে বিভক্ত করে ক্রিকেটারদের একটি টুর্নামেন্ট খেলানো হবে। আগামী ৪ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল এই মিনি টুর্নামেন্টে খেলবে লঙ্কানরা। চারটি দলের নেতৃত্ব দেবেন অটোমেটিক চয়েজ দিনেশ চান্দিমাল (কলম্বো), লাসিথ মালিঙ্গা (গল), দিমুথ করুনারত্নে (ক্যান্ডি) এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ (ডাম্বুলা)। চারটি দল একে অন্যের মুখোমুখি হবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুটি দল ১১ এপ্রিল ফাইনালে লড়াই করবে।

সারাবাংলা/এমআরপি

বিশ্বকাপ শ্রীলঙ্কা হাথুরুসিংহে