মাশরাফি তোপে এলোমেলো উইন্ডিজ
৭ মে ২০১৯ ১৯:৪০
ওপেনিং জুটিতে শেই হোপ ও সুনিল আমব্রিস বাংলাদেশের বিপক্ষে শুরুটা যেভাবে করেছিলেন তাতে ঘূর্ণাক্ষরেও মনে হয়নি এত অল্প রানেই গুটিয়ে যাবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের ১৬তম ওভার পর্যন্তও যখন উইকেটশূণ্য বাংলাদেশের চার বোলার তখনই হয়তো অনেকেই ম্যাচের ভাগ্যও দেখে ফেলেছিলেন।
কিন্তু অবিমৃশ্যকারী সেই ক্রিকেট ভক্তদের সকল জল্পনা কল্পনায় পানি ঢেলেন দিলেন মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা। মোক্ষম সময়ে জ্বলে উঠে প্যাভিলনে ফেরত পাঠালেন বাংলাদেশের ওপর চোখ রাঙানো সেঞ্চুরিয়ান শেই হোপ, রোস্টন চেজ ও অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডারকে। মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে তিন ক্যারিবিয় ব্যাটিং স্তম্ভকে প্যাভিলনে পাঠিয়ে এলোমেলো করে দিলেন উইন্ডিজদের সকল হিসেব-নিকেশ।
৯ উইকেটে ২৬১ রানে সক্ষম হল ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন ২৬২ রান।
মঙ্গলবার (৭ মে) ডাবলিনের ক্লনটার্ফে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই সাইফউদ্দিনের ওপর মৃদু ঝড় চালালেন শেই হোপ। ইনিংসের একেবারে প্রথম ও তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে প্রথশ ওভার শেষে স্কোর লাইন দাঁড় করালেন বিনা উইকেটে ৮ রান।
দ্বিতীয় ওভারে ম্যাচের আবহ বদলে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম বলে তুললেন এলবি’র আবেদন। কিন্তু আম্পায়ার তা কানে নিলেন না। ক্রিজে থরহরিকম্প আমব্রিজ কোন রকম নিজেকে সামলে দাঁড়ালেন। পরের বলটি আবার পায়ে লাগিয়ে জোরালো আবেদন তুললেন ম্যাশ। না, এবার লাইন বিচ্যুত। লেগ স্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরে আম্পায়ার নাকচ করে দিলেন। সাকুল্যে ২ রান দিয়ে ওভারের সমাপ্তি টানলেন।
তৃতীয় ওভারে এসে অবশ্য বেশ সংযত সাইফউদ্দিন।একটি রানও দিলেন না। এমন হিসেবি বোলিং চললো ৫ ওভার পর্যন্ত। উইন্ডিজদের দলীয় সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১৫ রান।
এরপর থেকেই মূলত রানের গতি বাড়াতে থাকেন দুই ক্যারিবিয় ওপেনার।পাশাপাশি মাথায় রাখেন উইকেট হারানো যাবে না। কৌশলটি কাজেও দেয় বিস্তর।
১৬ ওভার পর্যন্ত কোন উইকেট না হারিয়ে ৮৫ রান তোলে জ্যাসন হোল্ডার ও তার দল।
মাশরাফি, সাইফউদ্দিন ছাড়াও ১৬ ওভারের মধ্যে বল করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং সাইফউদ্দিরে বদলি হিসেবে আসা মোস্তাফিজকে বেশ খরুচেই ছিলেন।
কিন্তু মিরাজ বোলিংয়ে আসতেই ভোজবাজির মত বদলে গেল ম্যাচের দৃশ্য। ১৭তম ওভারে তার দ্বিতীয় ডেলিভারিটি একটু বেরিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে তুলে দিতে চেয়েছিলেন সুনিল আমব্রিস।।কিন্তু লাফিয়ে উঠে দারুণ দক্ষতায় বলটি তালুতে জমান মাহমুদউল্লাহ। ৩৮ রানে ফিরে গেলেন এই ওপেনার।
ঠিক তার পরের ওভারেই উইন্ডিজ বধের মিশনে সামিল হলেন সাকিব। দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ব্যক্তিগত ১ রানে উইকেটের পেছনে মুশফিকের নিরাপদ গ্লাভসে তুলে দিলেন ড্যারেন ব্রাভোকে।
২২ম ওভারেও উইকেটের দারুণ সুযোগ তৈরী করেছিলেন মিরাজ। শেই হোপ তার শেষ ডেলিভারিটি থার্ড ম্যান অঞ্চলে কাট করলে বেশ কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে ছিল। কিন্তু তা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন মুশফিক।
সেই সুযোগে তৃতীয় উইকেটে রোস্টন চেজকে সঙ্গে নিয়ে দলকে ২শ রানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে শেই হোপ তুলে নেন নিজের ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
বলে রাখা ভাল এটি বাংলাদেমের বিপক্ষে তার টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে তিন ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডের শেষ দুটিতে সেঞ্চুরি করেছিলেন এই ক্যারিবিয় ওপেনার। ১১ ডিসেম্বর শের ই বাংলায় অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংস খেলা হোপ ১৪ ডিসেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে করেছিলেন অপরাজিত ১০৮ রান। এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম মোকাবেলায় করে বসলেন আরেকটি শতক।
হোপের সেঞ্চুরির পরই ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ফিফটির দেখা পান রোস্টন চেজ। তবে এরপর আর নিজের ইনিংসটি টেনে নিতে পারেননি। ৪১তম ওভারে মাশরাফির লেংথ ডেলিভারি ডাউন দ্য উইকেটে পুল করতে চাইলে টপ এজ হয়ে শর্ট ফাইন লেগে অঞ্চলে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন। তার আগে সংগ্রহ করেছেন ৫১ রান।
চেজের ফিরে যাওয়ার পর উইকেট আঁকড়ে রাখতে পারেননি সেঞ্চুরিয়ান শেই হোপও। ব্যক্তিগত ১০৯ রানে মোহাম্মদ মিঠুনের নিরাপদ হাতে পাঠিয়ে দেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
এরপর আবার মাশরাফি আঘাত। তাতে উইকেট ছাড়া হয়ে দলকে বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে যান। অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার। তার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন মাত্র ৪। ২২১ রানে নেই ক্যারিবিয়ানদের ৫ উইকেট!
মাশরাফির পর জ্বলে উঠলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ।
৪৫তম ওভারের কথা। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের একেবারে প্রথম ডেলিভারি,কিছুটা খাট লেংথের; যা পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ অঞ্চলে সৌম্যর শিকার বনে যান ডরউইচ। যাওয়ার আগে দলকে দিয়ে যান ৬ রান।
এরপরের শিকারি মোস্তাফিজ। জোনাথান কার্টারকে (১১) স্লোয়ার মেরে লং অনে সাকিবের ক্যাচে পরিণত করেন। মোস্তাফিজের পর সাইফউদ্দিনের হানা দ্বিতীয় আঘাতে ১ রানে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফেরেন কেমার রোচ।
এরপর ১৭ বলে ১৯ রান করা অ্যাশলি নার্সকে লং অনে সাব্বিরের তালুতে পুরে দেন মোস্তাফিজ।
তাতে ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটের বিনিময়ে উইন্ডিজতের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ২৬১ রান।
সারাবাংলা/এমআরএফ/জেএইচ