Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণ্ডি পেরোবেই ‘গণ্ডি’!


২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:১২

‘গণ্ডি’ ছবির দৃশ্যে সব্যসাচী চত্রবর্তী এবং সুবর্ণা মুস্তাফা। ছবি: সংগৃহীত

গণ্ডি পেরোবে ‘গণ্ডি’… সে কথা বুঝি আর বলার অবকাশ রাখে না। বরং বলা যায় গণ্ডি পেরিয়ে গেছে ‘গণ্ডি’। সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে… কিংবা ওপারের কেউ কেউ সীমানা পেরিয়ে এপারে এসে গণ্ডির গণ্ডিভুক্ত হয়েছেন। ওপার বাংলা, এপার বাংলার শিল্পী কলাকুশলীদের নিয়েই হচ্ছে গণ্ডি। তবে কী! এই কাঁটা তারের সীমান্তটার এপার-ওপারের কথা এই গণ্ডি পেরোনোর গণ্ডির সঙ্গে বললে খুব খেলো হয়ে যাবে।

কারণ এই স্থাপনাগত গণ্ডির কথা এতে বলাই হয়নি, বা এর মূলভাবও নয়। গণ্ডি নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন মনোজগতের গণ্ডির কথা। সে গণ্ডিটাকেই করতে হবে ভেদ। বলেছেন ফ্রেন্ডশিপ উইদাউট বাউন্ডারির কথা। বন্ধুত্বের মাঝে দেয়াল… সম্পর্কের মাঝে দেয়াল… এসব যে আমরা শুনি না… তাতো নয়! গণ্ডির লক্ষই হচ্ছে সেই দেয়ালটা ভেঙ্গে ফেলা।

বিজ্ঞাপন

ফাখরুল আরেফীন খান যখন তার কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার মুখের কথায়ই শুধু নয়, চোখের ভাষায়, চেহারার অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠছিলো সেই প্রত্যাশার কথাগুলো। কথায় কথায় গণ্ডির গল্পটা খুব সুন্দর, গল্পটাকে ভালোবেসেই গণ্ডিতে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছি… এমন কথাগুলোই উচ্চারিত হলো বার বার।

অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা


গল্পটা অবশ্য শোনানো হলো না গণ্ডিসন্ধ্যায়। খোলাসা করা হলো না কিছুই। শুধু এটুকু বলা হলো গণ্ডি নামের গল্পটিকে বাঁধা হচ্ছে সেলুলয়েডের ফিতেয়। সে ফিতেয় ভরা গল্পকথা যখন যান্ত্রিক পদ্ধতির সহযোগিতা নিয়ে পর্দায় ভাসিয়ে তোলা হবে তখনই জানা যাবে গণ্ডির গল্প। সেটুকু রহস্যতো রাখবেনই কোনও সিনেমার ফেরিওয়ালা। কারণ-তা না হলে সিনেমা বানানো শেষে কেনোই কেউ তা দেখবেন? সে জন্য অবশ্য বছর খানেকের অপেক্ষা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

কারণ মঞ্চে বক্তারা যখন একটা সিনেমা বানানোর কষ্ট, শ্রমের খুঁটিনাটি তুলে ধরছিলেন তখন সময় সম্পর্কেও একটা ধারণা দিলেন। বললেন- এক মিনিটের কাজ এগিয়ে নিতে তাদের ক্যামেরা হাতে কাজ করতে হয় এক ঘণ্টা। তাহলে দুই ঘণ্টার সিনেমার শুটিং শেষ করতেই ছয়মাস লেগে যাবে। এরপর এডিটিং। তাতে আরও ছয় মাস। তবে রোববারের (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় যারা যানজটের ধকল শয়ে একটা গণ্ডি সন্ধ্যা’র আয়োজনে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন- তাদের সামনে গণ্ডি’র ঝাঁপি খুলে কিছু কিছু কথা তথ্য, গান, ছবি এটা সেটা জানানো, দেখানো হয়েছে।

অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী


সবচেয়ে বড় কথা তারা দেখেছেন- সব্যসাচী চক্রবর্তী আর সুবর্ণা মুস্তাফা হাতে হাত ধরে সমুদ্র তীরে হাঁটাহাঁটি। দুজনকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার খুব প্রয়োজন বোধহয় বাংলাভাষাভাষি পাঠকের কারো জন্যই জরুরি নয়। ফেলুদা কিংবা মুনা এসব একক চরিত্র দিয়েও তাদের এখন আর বাঁধা ঠিক হবে না। কারণ তারা আরও অনেক চরিত্রে, অনেক নামে পরিচিতি পেয়েছেন। সর্বোপরি তারা তাদের নিজের নামেই ভাস্বর।

এই জুটিতে সিনেমা জমবে! এমন কথাও খেলো শোনাবে। কারণ জমবে, সেতো বটেই! তবে সে কথা মানতে বা বলতে নারাজ অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা নির্মাতা, কলাকুশলীদের কেউই। তারা এখন একটি সিনেমা বানানোর কাজেই মনোনিবেশ করতে চান। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই তা করবেন, এমনই অঙ্গীকার শোনা গেলো প্রত্যেকের কণ্ঠে। সুবর্ণা-সব্যসাচী যেমন বললেন, অপর্ণা-মাজনুনও তাই বললেন। তারা দুজনও রয়েছেন এই সিনেমায়। আর বললেন ফাখরুল আরেফীন খান। তিনি বললেন, আমরা সিনেমা খুব চলবে তা ভেবে বানাই না। আমরা মন-প্রাণ আর সামর্থের সবটুকু ঢেলে একটা সেরা গল্পকে সেলুলয়েডের ফিতেয় বাঁধার চেষ্টা করি। যাতে মানুষ সেটা চোখের সামনে দেখতে পায়।

গড়াই ফিল্মস থেকে বানানো হচ্ছে গণ্ডি, সে কথা এখন আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই এই কারণে যে, গড়াই আর আরেফীন একটি অপর শব্দের পরিপূরক। আর সচেতন ও অগ্রসর পাঠকের জন্য ‘ভুবনমাঝি’র কথাও মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে ভুবনমাঝি শুনে এখনই যারা নড়েচড়ে বসলেন, তাদের জন্য বলছি- হ্যাঁ জনপ্রিয়তা পাওয়া, আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘ভুবনমাঝি’র সেই ফাখরুল আরেফীন খানই এবার বানাচ্ছেন ‘গণ্ডি’। সে জন্যই এই গণ্ডিসন্ধ্যার আয়োজন।

নকশীকাঁথা ব্যান্ডের ভোকাল, লোকগানের গবেষক সাজেদ ফাতেমী


গণ্ডিসন্ধ্যা নিয়ে আরও কিছু কথা বলা যাক। কারণ সন্ধ্যাটি ছিল সত্যিই মোহনীয়। নির্ধারিত সময়ের একটু পরে শুরু হলেও- তোমায় হৃদমাঝারে রাখবো ছেড়ে যাবো না… ছেড়ে গেলে সোনার দেউল আর পাবো না… না… না… না। গাইছিলেন নকশীকাঁথা ব্যান্ডের ভোকাল, লোকগানের গবেষক সাজেদ ফাতেমী।

তবে প্রশ্ন হতে পারে কালিকা প্রসাদকে কেনো হঠাৎ টেনে আনা হলো এই অনুষ্ঠানে। কালিকা প্রসাদ আজ আমাদের মাঝে নেই, তবে এমাসেই তার জন্মদিন। তাই কালিকা দা’কে স্মরণ করেই অনুষ্ঠানটি শুরু করলাম, গানের পরপরই সেটা বলে স্পষ্ট করলেন ফাখরুল আরেফীন খান।

ততক্ষণে প্রক্ষেপিত একটি আলো এসে পড়েছে ডায়াসে। আরেফীন খান তার স্বভাবসুলভ হাসিতে ভুবন জয় না করলেও সন্ধ্যাটিকে জয় করে নিলেন এক নিমিষে। এরপর কিছুটা আনুষ্ঠানিকতা- কিছুটা অনানুষ্ঠানিক ভঙ্গিমায় পরিচয় করিয়ে দিলেন তার নতুন উদ্যোগের সঙ্গে। মেগাস্ক্রিনে কিছু দৃশ্য দেখানো হল। গণ্ডির সঙ্গে রয়েছেন তাদেরও পরিচিতি ভেসে উঠলো। জানা গেলো প্রধান দুই চরিত্রে রয়েছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী ও সুবর্ণা মুস্তাফা। তারা এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছেন সে জন্য আরেফীন খানের কৃতজ্ঞতার যে শেষ নেই তা তিনি বারবার বলতে ভুললেন না।

পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খান


তবে সুবর্ণা-সব্যসাচী দুজনই যখন মাইক হাতে মঞ্চে উঠলেন তখন তারা উল্টো কৃতজ্ঞতা জানালেন ফাখরুল আরেফীন খানকেই। এমন একটি দারুণ গল্পে তৈরি হতে যাওয়া সিনেমায় সুযোগ দেওয়ার জন্য। ফেলুদা খ্যাত সব্যসাচী চক্রবর্তীতো রীতিমতো বিনয়ের অবতার! বললেন, এই সময়ে তাকে সবাই নেতিবাচক চরিত্রেই বেশি ভাবেন, সেখানে আরেফীন খান এমন একটা প্রেমের চরিত্রে তাকে কেনো ভাবলেন তা তিনি ভেবে পান না। বয়সটি বইতো এই চরিত্রের জন্য তার যোগ্যতা আর কিছু নেই!

তবে জানালেন, সিনেমাটির গল্পই তাকে কেবল টেনেছে তা নয়, সিনেমাটি নিয়ে ফাখরুল আরেফীন খানের স্বপ্নটিও তাকে ভীষণ টেনেছে। অনেকটা একই কথা বললেন সুবর্ণা মুস্তাফাও। বললেন, গল্পটি কী শুনবো, আরেফীন যে আন্তরিকতায় গল্পটি শোনালো তাতেই রাজি হয়ে গেলাম। তিনি ফাখরুল আরেফীনকে এই সিনেমার সিক্যুয়ালের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেও ভুললেন না।

তাতে আরেকটি তথ্য বুঝি উপস্থিত সকলের কাছে স্পষ্টই হলো- গণ্ডি কেবল একটি সিনেমায় গণ্ডিবদ্ধ থাকবে না। গণ্ডির গণ্ডি বড় হবে। সিক্যুয়াল হবে।

গণ্ডিসন্ধ্যায় হাজির হয়েছিলেন এই কাজে যারা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন তাদের প্রতিনিধিরাও। এসিআই’র স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড ফ্রিডম এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক… ফলে বলাই হচ্ছে ফ্রিডম প্রেজেন্টস গণ্ডি। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, নভোএয়ার এরাও এই সিনেমা নির্মাণে নানাভাবে অংশীদার হয়ে এসেছে। তাদের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে কথা বললেন। সকলের মুখেই গণ্ডি নিয়ে বড় প্রত্যাশার কথাই ফুটে উঠলো। আর ওই কথাই বললেন, গণ্ডির গল্পটাই সেরা।

অনুষ্ঠানে গান গাইছেন সংগীতশিল্পী পিন্টু ঘোষ


শেষ হলো গণ্ডির থিমসং দিয়ে। গাওয়ার আগে শিল্পী পিন্টু ঘোষ বলছিলেন, গণ্ডির গল্পটা আমাকেও অনুপ্রাণিত করেছে। সিনেমাটি বানানো হলে সবাই দেখবেন আশা করি। কে জানে গল্পটি এসে আপনার নিজের ওপরই বুঝি পড়ে যায়!

প্রতিটি গল্পের কিংবা চলচ্চিত্রের এটিই প্রধানতম কাজ। এর দর্শক বা শ্রোতা কিংবা পাঠক তার মাঝে নিজেকে খুঁজে পান। আর তাতেই তার স্বার্থকতা। সেই বিবেচনায় এখনই বলা যায় গণ্ডি হতে যাচ্ছে তেমনই স্বার্থক কিছু।


আরও পড়ুন :

 মিউজিক ভিডিওতে অক্ষয় কুমার

.   ‘গণ্ডি’: প্রবাদ ভেঙে এগিয়ে যাবার সিনেমা

.   নয় বছর পর ফিকশনে মেজবাউর রহমান সুমন, এবার চলচ্চিত্র

.   ভারতে বিটিভি সম্প্রচার উদ্বোধন

.   মৃত্যুবাষির্কীতে বাবার গান গাইবে দুই পুত্র

.   টিআরপি’র দৌড়ে এগিয়ে থাকা ঈদের নাটক


গণ্ডি সিনেমা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর