সিকিমের দিন-রাত্রি: পর্ব-৩; সাঙ্গু ও কাটাওয়ের পথে
১৮ জুলাই ২০১৯ ১৪:১০ | আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ১৩:০৬
দিন-৩; রাত ৪ (১৪ই এপ্রিল-পহেলা বৈশাখ)
আমরা সেদিন ভোর ৫.৩০ টায় উঠে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। পহেলা বৈশাখের কথা মনে পড়ছিলো। এই প্রথম পহেলা বৈশাখে ঢাকায় থাকতে পারলাম না।
গতরাতে লাচুং গ্রাম দেখা হয়নি। রাতের বৃষ্টি আর ঝরের পর গ্রামটি আরো সতেজ লাগছে। এর মাঝে হোটেলের কর্মচারী এসে জানালো, গতরাত থেকে বৃষ্টির কারণে পানির লাইন বন্ধ ছিল। তাই সকালে সে পাহাড়ে গিয়েছিল পানি আনতে। সেখানে না কি আজ খুব বরফ জমেছে। তার মানে আমাদের ভাগ্য ভালো।
আমরা চা খেয়ে রওনা হই কাটাওয়ের দিকে। লাচুংয়ের পাশ দিয়ে আমরা স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকি। গ্রাম থেকে বের হওয়ার ৫ মিনিট পরেই আমাদের চারপাশে বরফের আপ্যায়ন দেখতে থাকি। যত ঊঠতে থাকি, পাহাড় তত সাদা হতে থাকে। একটা সময় আমরা পৌঁছে যাই কাটাও এর একটা পয়েন্টে, এর ওপরে আর যেতে দেওয়া হয় না। অর্থাৎ পুরোটাই সেনাবাহিনীর ব্যারাক।
আমরা তো ঐ অতটুকু দেখেই মুগ্ধ। বরফ ধরি, আমি ছবি তোলার চেষ্টা করি। আমরা কাটাও থেকেই সোজা চলে যাই ইয়ুমথাং ভ্যালির দিকে। কিন্তু কাটাও এর সাদা বরফ আর চারপাশের মেসমেরাইজিং ভিউ এর পর ইয়ুম্থাং আমার কাছে খুব সাদামাটা লাগলো। যাই হোক, শুকনো রুটি আর জ্যাম খাই ওখানে দাঁড়িয়ে। দুপুর ১ টা নাগাদ হোটেলে ডিম, ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে গ্যাংটক এ ফেরত আসি সন্ধ্যা ৬ টায়।
আমাদের কাছ থেকে লাচুংয়ের প্যাকেজে একটু বেশি টাকা নিয়েছে মনে হলেও আমরা আবার সোনামের কাছে যাই পরদিন সাঙ্গু যাবার জন্যে। তিনি আমাদের নতুন ইনোভা গাড়িতে পরদিনের প্যাকেজ দেন গাইড সহ ৫০০০ রুপিতে। আমরা এখানে আবার তিন কপি করে সব ডকুমেন্ট দেই। এবার আমার থুপকা খাবার পালা। আমি থুপকা খুঁজে পাই এক দোকানে। বাকীরা রোল, মোমো, আর নুডুলস নেয়।
আরও পড়ুন, সিকিমের দিন-রাত্রি: ১ম পর্ব
দিন- ৪; রাত ৫ (১৫ই এপ্রিল)
এবার পালা সাঙ্গু দেখার। ইনোভা গাড়ী বেশ আরামদায়ক। ছয়জন বেশ আরামে আমরা ঘুড়ে আসলাম। গ্যাংটকের ৬৫০০ ফিট থেকে আমরা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা ধরে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা কেবল উপরেই ঊঠতে থাকলাম। রাস্তার মোরে মোরে কিছু উপদেশ বাণী –
Be Gentle BRO, The View is beautiful not the Death.
Have you ever wondered who made these roads where it is almost unbearable to live; it is the BROs, Be Respectful to them and Drive Slow.
সাঙ্গুতে পৌঁছানোর কিছু আগে আমরা একটি দোকানে থামলাম। যাদের মোটা গরম কাপড় লাগবে ভাড়া করে নিলাম। মোজা, হাত মোজা, জ্যাকেট সবই আছে এখানে। আমরা তৈরি হয়ে সাংগুতে যখন পৌঁছালাম, চারপাশ তখন একদম মেঘে ঢেকে আছে। তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমার খুব হতাশ লাগা শুরু হলো। লেকটা একদমই বোঝা যাচ্ছে না। ক্যামেরা বন্ধ করে রেখে দৌঁড়ে ওঠার চেষ্টা করলাম, আর এখানেই হলো বিপত্তি। ভুলে গিয়েছিলাম এটা বারো হাজার ৭০০ ফিট। আমার চোখ হালকা অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো। আর দমও বন্ধ হতে লাগলো। আমি বরফের উপরে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। আশ্চর্যজনকভাবে কিছুক্ষণের ভেতর আবার সব ঠিকও হয়ে গেল।
আমরা ঠিক বাচ্চাদের মত বরফ ছোড়াছুড়ি করতে লাগলাম। যেহেতু ক্যামেরায় কিছু উঠবে না, তাই ছবি তোলার কোনো তাড়া নেই। আমরা শুধু বরফ উপভোগ করতে লাগলাম।
ফেরার পালা হয়ে এলো খুব তাড়াতাড়ি। গ্যাংটক শহরই তখনো দেখা হয়নি। কারণ শহরটার জন্যে প্রেম জাগাতে পারিনি আমরা। রাত ২ টা নাগাদ পৌঁছে আমরা শহর দেখার পরিকল্পনা করলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না।
নামার পথে চেকপোষ্টের কিছু আগে একটি গাড়ী দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে রাস্তা বন্ধ। ঐ গাড়ি না সরানো পর্যন্ত আমাদের গাড়ি এগোবে না। পুরো ২ – ২.৩০ ঘন্টা আমরা একটি সরু রাস্তায় আটকে থাকলাম। গ্যাংটকে যখন পৌঁছালাম তখন বিকেল ৬.৩০ টা। কারণ পুরো রাস্তা জ্যাম হয়ে গেছে। মন খারাপ হয়ে গেল আমাদের।
আরও পড়ুন, সিকিমের দিন-রাত্রি: ২য় পর্ব; লাচুংয়ের পথে
আমরা এম জি মার্গে কিছুক্ষণ হালকা হাঁটাহাঁটি করি। এরপর বীগবাজার খুঁজে বের করি। বীগবাজারে তেমন কিছু কেনার নেই। নাই। অফিসের লোকজনের জন্যে চকলেট কেনা দরকার, তাও খুঁজে পাই না ওখানে। পরদিন ফেরত আসবো। খুব সকাল সকাল ফেরত আসতে চাই। যদি শিলিগুড়িতে কিছু কেনাকাটা করা যায় এই আশায়। একটি গাড়ি পাই। এই গাড়ি সকাল ৬ টায় পিক করবে আমাদের। আমাদের সিকিম ভ্রমণ শেষ হবে ভাবতেই মন খারাপ হয়।
লেখক- ফিরোজ খান তুষার, পর্যটক
সারাবাংলা/টিসি