বিজ্ঞাপন

সিকিমের দিন-রাত্রি: ২য় পর্ব; লাচুংয়ের পথে

July 10, 2019 | 1:51 pm

দিনাজপুরের ফুলবাড়ি বর্ডার থেকে অনেক অটো পাবেন শিলিগুড়ি যাবার। আমরা একটা টাটা সুমোর সাথে দরদাম করতে গেলে অটোচালকরা তেড়ে আসলো। তাই পরে বাধ্য হয়েই অটোতে টুকটুক করতে করতে ৩০ মিনিটের মাথায় শিলিগুড়ি পৌছে গেলাম। আমরা সরাসরি SNT তে না গিয়ে Hotel Central Plaza তে (শ্যামলী এর কাউন্টার) চলে গেলাম। কারণ পেটে চরম ক্ষুদা, আর সেন্ট্রাল প্লাজার খাবার খুব সুস্বাদু। তবে দামটা একটু বেশি। খেয়ে ঠিক করে নিচ্ছিলাম কী করা যায়।

বিজ্ঞাপন

মিতন ভায়ের সাথের দুই ভাই অপু ভাই, আর রুবেল ভাই খুব মজার মানুষ, তারা ঠাট্টা করে করে বেশ আমুদেই রেখেছিল আমাদের। অপু ভাই বললেন, আরো দুইটা বাচ্চা ছেলে আসার কথা চ্যাংড়াবান্দা হয়ে, আমরা কি তাদের জন্যে অপেক্ষা করতে পারি? চ্যাঙড়াবান্দার শ্যামলী বাস আসতে আসতে ১ টা বেজে যাবে। মানে তখনো প্রায় ১ ঘন্টা বাকি। ভাবলাম, অপেক্ষা করা যেতেই পারে। আর যেহেতু শিলিগুড়িতেই আছি, SNT তে একবার ঢু মেরে আসি। এই সিদ্ধান্তটি যে আমাদের কত বড় সাহায্য করেছে, সেটা পরে বলছি।

তো যেই ভাবা সেই কাজ। আমরা SNT তে গিয়ে ফরম পূরণ করে আমাদের এক কপি ছবি আর পাসপোর্ট, ভিসার এক কপি করে ফটোকপি তাদের কাছে জমা দিলাম। তারা আবার একটি ফরম পূরণ করতে দিল। এরপর তারা আমাদের চার জনের অনুমতিপত্র দিয়ে দিল। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এবার খোঁজ নিয়ে জানলাম, চ্যাংড়াবান্ধার বাস আসতে নাকি আজকে লেট হবে। ভাবলাম, আমরা রওনা হয়ে যাই, ঐ দুইজন পরে আসুক।

SK লেখা একটা টাটাসুমো আমরা ঠিক করলাম ২ হাজার ৬ শ রুপিতে। সেদিন গাড়ীর একটু সংকট ছিল। তাই খরচ পড়লো বেশী। আমরা যাত্রা শুরু করতে করতে বেজে গেলো বিকাল পৌনে তিনটা। তখনো বাচ্চা দুটো শিলিগুড়ি পৌঁছতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

যাই হোক, শিলিগুড়ি থেকে ২০ মিনিট পর শালগুড়া আসার পর থেকেই আমার সেই প্রেম যেন আবার জেগে উঠলো! এই যে গত রাত থেকে এতো ঝামেলা সব আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকলো। শালগুড়া পার হয়ে সেভক মোড়, এরপর থেকে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ। আমরা NH10 ধরে তিস্তা, তিস্তা বাজার পার হয়ে প্রায় এক কি দেড় ঘন্টা পরে গিয়ে র‍্যাংপোতে পৌঁছালাম।

র‍্যাংপো ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক বর্ডার ছিলো। ভারত আর সিকিমের বর্ডার চেকপোস্ট এটা। কিন্তু এখন যেহেতু এটি ভারতেই অংশ, তাই এখানে শুধুমাত্র পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন হয়। যা হোক, SNT’র কথা বলছিলাম, র‍্যাংপোতে FRRO Office এর দুই তলায় রেজিস্ট্রেশন হবে। কিন্তু ওখানে গিয়ে আমাদের চোখ ছানাবড়া। দুই তলার অফিস থেকে লাইন বের হয়ে ওপরে চার তলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও দেখি লাইন আর এগোয় না। আমার হাতে তো SNT থেকে নেওয়া অনুমতিপত্র আছে। এটা দেখে এক ভাই বললেন, আপনারা এখানে দাঁড়ায় আছেন কেন? আপনাদের তো অনুমতি হয়েই গেছে। আপনি সোজা অফিসে ঢুকে যান। শুধুমাত্র পাসপোর্টে সীল নিয়ে আসলেই হবে। এরপর সব মিলিয়ে ২০ মিনিটেই র‍্যাংপো পার হয়েছি আমরা।

বিজ্ঞাপন

যারা যারা আপনাদের পরামর্শ দেন, SNT তে যাবার দরকার নেই। সব র‍্যাংপো তেই হয়। তারা ভুল বলেন না, তবে সমস্যাটি কেউ বলেন না। সামনে ট্যুরিস্ট সিজন, র‍্যাংপোতে ভিড় হবেই। সেন্ট্রাল প্লাজা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা এসএনটি। আর সিক্কিম যাবার জন্যে সস্তায় টাটাসুমো ও পাবেন এসএনটিতে। মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় এখানে দিলেই হয়তো আপনার ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় বেঁচে যাবে রাংপোতে। র‍্যাংপোতে কাজ হয়ে গেলে আপনি আর মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে আছেন গ্যাংটক থেকে। কিন্তু এই ৪০ কিলো যেতে আমাদের আড়াই ঘন্টা লেগে গেল। গ্যাংটকে পৌঁছালাম রাত ৮ টা নাগাদ!

১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন,  সিকিমের দিন-রাত্রি

সবাই ক্লান্ত, কোনো রকমে চারজন এক রুমে থাকা যাবে এমন একটা হোটেল পেয়ে গেলাম আমরা। ভাড়া ১ হাজার ৬ শ রুপি, নাম মাজং রেসিডেন্সি। নেতাজীর মূর্তির একদম সাথে। সকালবেলা রুম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। রাতের খানা-পিনা বলতে এক মুসলিম হোটেলের মোরগ বিরিয়ানি।
রাতের তাপমাত্রা তখনো বেশ গরম, হয়তো ১৪ বা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দিন-২: রাত ৩ (১৩ই এপ্রিল)

বিজ্ঞাপন

সকাল ৬ টা নাগাদ বের হয়ে কয়েক টা এজেন্সি খোলা পেলাম, কিন্তু কেউ রাজী হয় না আজকে লাচুং এর জন্যে। তারা বললো, সকালে আগে সাংগুর পার্মিশন দেয়। তারপর লাচুং। এইবার আমরা অন্য পথ ধরলাম। এজেন্সি বাদ দিয়ে আমরা গেলাম ট্যুরিজম অফিসের সামনে যেখানে চালকরা অনুমতির জন্যে লাইন ধরে আছে। কয়েকজন ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলাম সম্ভব কিনা। তারা বললেন, আজকে সিটি ট্যুর দেন, কালকে যাবেন। হঠাৎ এক চালক বললেন, আপনারা কি আজকেই লাচুং যেতে চান? আমরা বললাম, সময় কম বলে আমাদের আজকেই যাওয়ার ইচ্ছা। চালক বললেন, লর্ড ট্রাভেলসে সোনাম দাদার কাছে যান।

গেলাম তার কাছে, তিনি কিছুক্ষণ আমাদের অসহায় চেহারার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, পাসপোর্ট ভিসা আর ৩ কপি করে ছবি দেন, আমি চেষ্টা করি। এর মাঝে আবার ঐ চ্যাংড়াবান্দার দুইজনও চলে আসলেন। সবার অনুমতিপত্রের জন্য ১৩ হাজার ৫শ রুপি দিতে হলো।

৯ টার দিকেই আমরা অনুমতি পেয়ে গেলাম। যাত্রা শুরু করতে আমাদের পৌনে এগারোটা বেজে গেল। আগেই বলেছি, আমি সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারি না। তবে পথে আমাদের অবাক হবার পালা শুরু হলো। পথে প্রায় কয়েকশ ছোট-বড় ঝরনা। সবজায়গার রাস্তা যে মসৃণ, তা নয়। মাঝে মাঝে বেশ বিপদজনক ঢাল, আর কিছু কিছু জায়গায় বর্ষার ঢলে ব্রীজ, রাস্তা ভেঙে খাদে পড়ে আছে। এসব দেখতে দেখতে দুটো নাগাদ আমরা পৌঁছালাম সংকলং এর একটু আগে একটি জায়গায় দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্যে। দেখলাম, প্রায় সব এজেন্সির গাড়ি এখানেই থামে খাবারের জন্যে।

মন কেমন করা ব্যাংগালুরুর মেঘ-রোদ্দুরে

খাবার হিসেবে ডিম ভুনা, ডাল, কচি বাঁশের ঝোল করা সবজি আর কুমড়া। কুমড়া বাদে অন্য সব খাবারই খেলাম। আমরা যখন লাচুংয়ের কাছাকাছি তখন নামলো ঝুম বৃষ্টি। গ্যাংটকের তাপমাত্রা যখন ১৪ বা ১৫ তখন, লাচুংয়ে প্রায় ১ ডিগ্রী। আমাদের ছয়জনকে দুটো রুম দেয়া হলো। আমাদের রুম থেকে কি একটা পাহাড় দেখা যাচ্ছ পুরো বরফে ছেয়ে আছে। সে এক অপার্থিব দৃশ্য। এতো বৃষ্টির মধ্যেও খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বরফে মোড়া নীল পাহাড়।

রাতে পাহাড়ী মোরগ, ডাল আর আচার দিয়ে ভাত খেতে যাবার আগ পর্যন্ত আমরা পাহাড়ের দিকেই তাকিয়ে থাকি। আমাদের গাড়িচালক উমেশ দাদা বললেন, ৩ হাজার টাকা দিলেই তিনি পাহাড়ে নিয়ে যাবেন আমাদের। আমরা রাজী হয়ে গেলাম।

লেখক- ফিরোজ খান তুষার, পর্যটক

সারাবাংলা/টিসি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন