Thursday 04 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান মাহমুদুর রহমানের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৪৫ | আপডেট: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৮

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা ও নির্বাসন থেকে দেখা হাসিনার ফ্যাসিবাদ শীর্ষক’ আলোচনা ও মতবিনিময়ে মাহমুদুর রহমান। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এ বিষয়ে যারা দুর্বলতা দেখাবে, তাদের ‘আমার দেশ’ ছাড় দেবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা ও নির্বাসন থেকে দেখা হাসিনার ফ্যাসিবাদ শীর্ষক’ আলোচনা ও মতবিনিময়ে তিনি একথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবো, যে রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে, ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, এই যে বৃহত্তর ঐক্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে, অন্তত রাষ্ট্রের স্বার্থে এই ঐক্য আপনারা দয়া করে ধরে রাখুন। আমরা জানি আপনারা রাজনীতি করবেন, আপনারা কেউ সরকারে যাবেন, কেউ বিরোধী দলে যাবেন, কোনো সমস্যা নেই। আপনাদের যার যার রাজনৈতিক রেটোরিক থাকবে, সেটা নিয়েই আপনারা জনগণের কাছে ভোট চাইবেন, কোনো সমস্যা নেই।’

বিজ্ঞাপন

‘কিন্তু কিছু বিষয়ে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এক নম্বর- ফ্যাসিবাদের বিরোধিতার বিষয়ে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, ফ্যাসিবাদের কোনো ছাড় নেই, ফ্যাসিবাদী শক্তিকে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই ফ্যাসিবাদি শক্তি আওয়ামী লীগের চেহারাতে আসুক কিংবা জাতীয় পার্টির চেহারাতে আসুক, ফ্যাসিবাদি শক্তিকে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, জাতীয় পার্টি ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল, জাতীয় পার্টি ফ্যাসিবাদকে সহায়তা করেছে, টিকে থাকার জন্য ১৫ বছর বৈধতা দিয়েছে তাদের। প্রতিবার নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে এরশাদ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে। জাতীয় পার্টির চট্টগ্রামের নেতারাও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, আপনাদের তাদের কথাও স্মরণে রাখা উচিত যে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কীভাবে কাজ করেছে।’

তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাবো প্রধানত তিনটি শক্তিকে, আমরা জানি জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, এটা আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। তিনটি প্রধান শক্তির মধ্যে সর্ববৃহৎ দল হচ্ছে বিএনপি, এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে, এটাই বাস্তবতা। দুই নম্বরে জামায়াতে ইসলামী, সাংগঠনিকভাবে তারা দ্বিতীয় বৃহত্তম দল, এ পর্যন্ত। তিন নম্বরে হচ্ছে জুলাই বিপ্লবের তরুণদের দল এনসিপি। এই তিনটি হচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি এবং তিনটিকেই আমি দেশপ্রেমিক শক্তি বলে মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘তিনটি শক্তি একসাথে লড়াই করে শেখ হাসিনাকে পরাভূত করেছে, ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদকে পরাভূত করেছে, তিনটি এক হয়ে। কাজেই আপনাদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, ভারতীয় হেজিমনির বিরুদ্ধে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদকে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে না, যাতে করে ভারতীয় হেজিমনি আবার বাংলাদেশে ফেরত আসতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে, আপনারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা করেন, কোনো সমস্যা নেই, আমরা মিডিয়া থেকে আপনাদের সমর্থন জানাবো, সবাইকে সমর্থন জানাবো। কিন্তু এই যে রাষ্ট্রীয় দুটি নীতির কথা বললাম আমি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান, সেই অবস্থানে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ বিষয়ে যারা দুর্বলতা দেখাবেন, আমি পরিষ্কার করে বলে দিতে পারি, অন্য পত্রিকা কী করবে আমি জানি না, আমার দেশ আপনাদের ছাড়বে না।’

আওয়ামী লীগকে ‘রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদ’ উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তারা একটি সাংস্কৃতিক ফ্যাসিস্ট শক্তি তৈরি করেছিলো। এই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিস্ট শক্তিই ১৬ বছর ধরে জনগণের ওপর ফ্যাসিবাদি শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছিলো। আর এই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের নেতৃত্ব দিয়েছিল সাংবাদিকরা। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মিডিয়ার একটি বড় অংশ জুড়ে ফ্যাসিবাদি শক্তি, ভারতীয় হেজিমনি ও সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, যার আস্তে আস্তে বিস্তার ঘটেছিল। তার চূড়ান্ত যে প্রতিফলন হয়েছে তা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে। আমরা দেখেছি এই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ কীভাবে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।’

‘ফ্যাসিবাদের বয়ানটা শক্তিশালী করেছে মিডিয়ার একটি বড় অংশ, সেটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদী শক্তি স্বাধীনতার পর থেকে অর্ধশতাব্দীর অধিককাল মিডিয়াকে দখল করে রেখেছিল। সেই শক্তি এখনও নিঃশেষ হয়ে যায়নি। আমরা সেই শক্তি থেকে মিডিয়াকে এখনও মুক্ত করতে পারিনি। এটা আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কারণে আমরা আজ আবারও সেই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের পেশির আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। এটা নিয়ে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে জনগণের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব মুখ থুবড়ে পড়বে’ বলেন মাহমুদুর রহমান।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য মিয়া মোহাম্মদ আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরি, দৈনিক কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, এ্যাব চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মোহাম্মদ জানে আলম, সাংবাদিক সালেহ নোমান, মঈনউদ্দিন কাদেরী শওকত, মাহবুব মওলা রিপন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজা।

সারাবাংলা/আরডি/এমপি

এনসিপি জামায়াত ফ্যাসিবাদ বিএনপি মাহমুদুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর