Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদ্যুৎ থাকে না গ্রামে, দিনরাতে লোডশেডিং ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা


১০ মে ২০১৯ ১৮:০৯

ফাইল ছবি

ঢাকাগরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। শহরাঞ্চলের লোডশেডিং তেমন একটা না হলেও গ্রামের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে রমজান শুরুর আগে বলা হয়েছিল, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার রোজায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো থাকবে। কিন্তু মাঠের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। শহরে দিনে এক দুইবার লোডশেডিং হলেও গ্রামে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। সারাদেশে বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, সঞ্চালন-বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও গ্রামাঞ্চলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সংযোগ দেওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত গরমে ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড হয়ে বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিং হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গরমে চাহিদা অনেকখানি বেড়ে যায়। আমরা আমাদের সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছি। এবার রোজায় গত বছরের চেয়ে ভালো অবস্থা রয়েছে।

গ্রামে লোডশেডিং সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে যেসব সঞ্চালন লাইন রয়েছে, তা পরিবর্তন করা হচ্ছে। আর অতিরিক্ত গরম ও অতিরিক্ত লোডের কারণে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার নষ্ট হচ্ছে বেশি। এই কারণে কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। এটা খুব বেশিদিন থাকবে না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ১৮ হাজার ৩২৯ মেগাওয়াট। গত ৭ মে দেশে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪১২ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়। ওইদিন চাহিদার বিপরীতে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ফলে পিডিবির হিসেব অনুযায়ী দেশের কোথাও লোডশেডিং হয়নি।

বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, চাহিদা অনুযায়ীই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। মূলত সঞ্চালন লাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। শিগগিরই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণেও ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়াও একটি কারণ।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় গ্রিডভুক্ত সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্রের ক্ষমতাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ১৩২ ও ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন পর্যায়ক্রমে ৪০০ কেভিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। বিপিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে গ্রিডের ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা ১ হাজার ৫৬০ এমভিএ, ৪০০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা ৬৫০ এমভিএ, ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা ১০ হাজার ৮২৫ এমভিএ ও ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা ১৬ হাজার ৯৮০ এমভিএ।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেও তা বিদ্যমান ক্ষমতার বিদ্যুতের পুরোটা সঞ্চালনের উপযোগী নয়। জাতীয় লোড ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের (এনএলডিসি) সঙ্গে গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সার্বিক সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত ডিজেলভিত্তিক অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত নয়। এসব কেন্দ্র থেকে ৩৩ কেভি বিতরণ লাইনের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বলেন, আমাদের সরবরাহ করা এলাকায় প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বিতরণ ব্যবস্থার কাজ চলছে। যে কারণে আমাদের কিছুটা লোডশেডিং হতে পারে। এছাড়া গরমে বিদ্যুতের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনরাত মিলে ৮/৯ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সোনামূয়ীর চরের বাসিন্দা মেরিনা আক্তার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে জানান, দিনে-রাতে লোডশেডিং হচ্ছে। দিনে লোডশেডিং হলে কোনোমতে চলা যায়। কিন্তু রাত ১১টার পর বিদ্যুৎ গেলে আর পাওয়া যায় না। দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে না। তিনি বলেন, বিদ্যুতের সংযোগ থাকার পরও সোলার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে বিদ্যুতের পেছনে খরচও বেড়ে গেছে।

পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মাজাট গ্রামের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক ডা. আলমগীর হোসেন জানান, দিনে কখন বিদ্যুৎ আসে আর কখন যায়, তা বলা মুশকিল। অধিকাংশ সময় থাকেই না। নিয়ম করে সন্ধ্যা ৭টার পর বিদ্যুৎ যায়, রাত ৯টায় আসে। আবার গভীর রাতে এক থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে রুপসী হাউজিং সোসাইটির বসবাস করেন শিক্ষক মাইনুল হুদা সিরাজী। তিনি জানান, বিদ্যুৎ কখন যায়, প্রশ্ন না করে বলুন কখন আসে! লোডশেডিংয়ের অবস্থা এতটাই খারাপ যে দিনে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। ৮ থেকে ১০ বার লোডশেডিং হয়। আর রাতে তারাবি শেষ হলে র এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হয়।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ভায়ারহাটের বাসিন্দা নাজির সুলতান জানান, সকাল থেকে লোডশেডিং শুরু হয়। সকালে, দুপুরে ও রাতে নিয়ম করে লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি সেহেরির সময়ও বিদ্যুৎ থাকছে না। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। প্রতিবার একঘণ্টার বেশি সময় ধরে লোডশেডিং চলে।

একই চিত্রের কথা জানা গেছে ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, বান্দরবান, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের রাউজান, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর,নাটোর, সিলেট, চুয়াডাঙ্গাসহ আরও বেশকিছু এলাকাতেও।

সারাবাংলা/এইচএ/টিআর

গ্রামাঞ্চল বিদ্যুৎ লোডশেডিং


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর