সড়ক পরিবহন বিলের প্রতিবেদন সংসদে, ৫ বছর কারাদণ্ড বহাল

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত গাড়ি চালনার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান বহাল রেখে সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮-এর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন আজ সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সংসদে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি প্রতিবেদন প্রণয়নে সহায়তা করার জন্য কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান।

এর আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এই আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে এ সংক্রান্ত অপরাধ পেনাল কোড ১৮৬০ (অ্যাক্ট নম্বর এক্সএলভি অব ১৮৬০)-এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে।

শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে ওই ব্যক্তি অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থাও থাকবে আইনে। নির্ধারিত পয়েন্টের নিচে গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। চালককে নতুন করে আবার লাইসেন্স নিতে হবে।

বিলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই অন্তত ১৮ বছর রাখা হয়েছে। তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। সংসদে উত্থাপিত বিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাসের শর্ত রাখা হয়েছে। আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না।

নতুন আইন অনুযায়ী চালকের সহকারী হতেও ন্যূনতম পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সনদ লাগবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। এছাড়া সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধানও থাকছে।

বিলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সহকারীরও শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে বিলে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

বিলের বিধান অনুযায়ী গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক। এই বিধান অমান্য করলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। এছাড়া ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে— এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।

নতুন আইনের বিধি অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। বিলের বিধান অনুযায়ী, লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এই পয়েন্ট। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। এরপর চালকে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ এক বছর ঝুলে থাকার পর আলোচিত এই নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি গত ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সরকার ওই আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিলটি পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

জাতীয় সংসদ বেপরোয়া বাসচালনা সড়ক দুর্ঘটনা সড়ক পরিবহন বিলের প্রতিবেদন