সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর ৩ ছবির ব্যবচ্ছেদ
৮ জানুয়ারি ২০১৯ ২৩:৩৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসেই সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন টানা দ্বিতীয় মেয়াদে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জুনাইদ আহমেদ পলক।
এদিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে অফিসে যাওয়ার পথের দু’টি ছবি পোস্ট করেন তিনি। দু’টি ছবির কোনোটিতেই মোটরসাইকেলে চড়া পলকের মাথায় ছিল না হেলমেট। একজন আইনপ্রণেতা হয়ে হেলমেট না পরায় যখন সবাই তার সমালোচনায় মুখর, তখন তৃতীয় আরেকটি ছবি পোস্ট করেন তিনি, যেখানে তার মাথায় দেখা যায় হেলমেট। তবে এ বিষয়ে কিছু লিখেননি তিনি। তার ওই পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, তৃতীয় এই ছবিটি তোলার সময় প্রথম দু’টি ছবি তোলার সময়ের থেকে আলাদা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আগের জাতীয় নির্বাচনের মতো নাটোর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন জুনাইদ আহমেদ পলক। দশম সংসদের মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এবারের নতুন মন্ত্রিসভাতেও একই দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর গতকাল সোমবার (৭ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপতির কাছে মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সঙ্গে শপথ নেন পলক। নতুন করে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) ছিল তার প্রথম কর্মদিবস।
এদিন দুপুরের দিকে পলক তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দু’টি ছবি পোস্ট করেন। তাতে লিখেন, ‘বাইকে চড়ে প্রথম দিন অফিসে…’।
পরে গণমাধ্যমকে পলক বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আইসিটি বিভাগে একটি সভা ছিল। এদিন সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। পলকও ছিলেন তাদের সঙ্গে। ফেরার পথে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয় সংসদ ভবনে। সেখান থেকে আইসিটি বিভাগে যাওয়ার পথে ট্রাফিক জ্যামে পড়েন তিনি। তবে নির্ধারিত সময়ে সভায় উপস্থিত হতে একজন বাইকারের মোটরসাইকেলে লিফট নেন পলক। নতুন বছরে কোনোভাবেই সময় অপচয় না করার যে প্রতিজ্ঞা তিনি করেছেন, তা রাখতেই তিনি বাইকে চড়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে যান।
পলকের এই কর্মতৎপরতাকে কেউ কেউ স্বাগত জানালেও বাইকে চড়ার সময় হেলমেট পরিহিত না থাকায় তীর্যক সব মন্তব্য পড়তে থাকে পলকের পোস্টে। আর তাদের সবার বক্তব্যের মূল সুরটি ছিল— একজন আইনপ্রণেতা হয়ে হেলমেট না পরে নিয়ম ভেঙেছেন পলক, যা তার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
বাংলাদেশ মোটরযান আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেলে চড়লে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক— এ বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে একজন লিখেছেন, ‘যেখানে গাড়ি আটকে আছে, সেখানে মোটর বাইকও আটকে থাকে। কী করে জ্যাম ঠেলে প্রধান রাস্তা ধরে তিনি মোটর বাইকে এগিয়ে গেলেন?
এতগুলো আইন ভঙ্গ করে তিনি কী করে গেলেন?’
আরেক আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ‘ছবি দুইটা গ্যালারিতে রেখে দিলাম। যদি কোনোদিন হেলমেট ছাড়া বাইকে চড়ি, আর যদি ট্রাফিক সার্জেন্ট ধরে, তবে তাকে এই ছবি দুইটা দেখাব।’
আজিজুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনার মাথায় হেলমেট নাই। মামলা হয়েছিল কি? যদি মামলা না হয় তবে মামলা না করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কি?’
ম্যাক নাজির নামের এক আইডি থেকে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘আইনপ্রণেতা আইন না মানলে সাধারণ মানুষ কেমনে মানবে? হেলমেট পরলে হয়তো ছবি ভালো আসত না। তবে যে টাইপের ছবি আসুক না কেন, বেশি প্রশংসিত হতেন।’
জহির আরিফ নামের একজন লিখেছেন, ‘আপনাকে সাধুবাদ জানচ্ছি, বাইকে করে অফিসে আসার জন্য। অনেক মন্ত্রী-এমপি রাস্তা আটকে ভিআইপি সুবিধা নিতে গিয়ে সাধারণ জনগণের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ান। আপনারা কিছুটা সাধারণ মানুষের মতো চলাচল করলেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে। তবে লিডার, আপনার কাছ থেকে আমাদের শেখার শেষ নেই। আপনি হেলমেট পরে নিজেকে সুরক্ষা করবেন, পাশাপশি অন্যদেরও উৎসাহিত করবেন।’
পলক অবশ্য পরে গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি যে বাইকে লিফট নিয়েছিলেন সেই বাইকের চালকের কাছে বাড়তি হেলমেট ছিল না। তবে এ বক্তব্যেও পার পাননি পলক। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, কোনো বাইকারের কাছে লিফট নেওয়ার চেয়ে উবার মটো বা পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করেই রাইড নিতে পারতেন প্রতিমন্ত্রী।
একজন অবশ্য ধরেই নিয়েছেন পলক রাইড শেয়ারিং অ্যাপই ব্যবহার করেছেন। তবে সেক্ষেত্রেও চালক তাকে হেলমেট দেয়নি বলে তার রেটিং কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ফাইজা কামাল নামে ওই ব্যক্তি লিখেছেন, ‘বাহ, আপনার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমি নিজেও পাঠাও কিংবা উবারের বাইকে চড়েই প্রতিদিন অফিস যাওয়া-আসা করি। কিন্তু বাইকার আমাকে হেলমেট দিচ্ছে কি না, সে ব্যপারে আমার কড়া নজর থাকে। আপনাকে তারা হেলমেট দেয়নি দেখা যাচ্ছে। আপনি দয়া করে এই রাইডারকে ১* (রেটিং) দেবেন এবং ডিটেইলসে গিয়ে কমপ্লেইন করবেন এ বিষয়ে। আশা করি, রাইডের খরচটা ফেরত না হলেও কিছু ডিসকাউন্ট দেবে তারা। নেক্সট রাইডে কাজে আসবে।’
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন প্রতিমন্ত্রী পলক হেলমেট না পরায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তখন একই পোস্টের সঙ্গে তৃতীয় একটি ছবি যোগ করেন পলক। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেন, নতুন ছবির মোটরসাইকেল আগের দু’টি ছবির মোটরসাইকেলের থেকে আলাদা। তাছাড়া দুই ছবিতে মোটরসাইকেলের চালকের পোশাকও আলাদা। অর্থাৎ, তৃতীয় ছবিটি অন্য কোনো দিনের বা অন্য কোনো সময়ের; প্রথম দুই ছবির দিন বা সময়ের নয়।
একজন লিখেছেন, ‘মানুষকে বোকা ভাবার কারণ কী?’ আরেকজন লিখেছেন, ‘তৃতীয় ছবিটি কী করে আপলোড করলেন? এত ছবি কে তুললেন? আর তিনিই বা কীভাবে সেই ছবি হাতে পেলেন?’
হাসিবুল আলম লিটন নামের এক আইডি থেকে কমেন্ট এসেছে, ‘ডিসকভার চলতে চলতে পালসার হয়ে গেছে। আর কিছু পথ পাড়ি দিলে বিএমডাব্লিউ হয়ে যেত। হিসাবে একটু ভুল করে বসেছেন লিডার।’
একজন ব্যাঙ্গ করে লিখেছেন, ‘আচ্ছা, এই যে ডিসকাভার বাইক চলতে চলতে পালসার হয়েছে, এটা কি উন্নয়ন না? এটা আপনাদের চোখে পড়ে না? খালি যত্তসব সমালোচনা।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘লুকিং গ্লাসে দেখলাম রাইডার অন্য জামা পরিহিত, ডিসকভার রাইডারের জামার মিল নেই। এটা অন্য ছবি।’
মুনতাসিরুল ইসলাম খান সামি নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘দুইটা দুই দিনের পিক। একদিন হয়তো হেলমেট ছাড়া পিক তুলেছিলেন। তাই সাথে হেলমেট পরা পিকও দিয়েছেন এটা বুঝাতে যে, তিনি হেলমেট ঠিকই পরেন।’
এসব বিষয়ে জানতে জুনাইদ আহমেদ পলকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/জেএ/টিআর