Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১২০তম নজরুল জয়ন্তীতে দিনভর নজরুল বন্দনা


২৫ মে ২০১৯ ২০:৩১

বাঙালির অস্থিত্বে মিশে থাকা কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম; আমাদের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন-সাম্য, প্রেম, মানবতা ও দ্রোহের কবি। গানে, কবিতায় সারাজীবন তিনি মানুষের কথা বলেছেন, মানবতার কথা বলেছেন। জাতি ও ধর্মের ওপর মানবতাকে ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে তিনি স্থান দিয়েছেন দ্বিধাহীন চিত্তে। আজ শনিবার (২৫ মে), দ্রোহ, প্রেম ও মানবতার এই মহান কবির ১২০তম জয়ন্তী। কবির এই জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে জৈষ্ঠ্যের মেঘলা আবহাওয়া আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিনম্র শ্রদ্ধায় দ্রোহ-প্রেম ও মানবতার এই মহান কবিকে স্মরণ করেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১১ই জৈষ্ঠ্য) বৃষ্টিস্নাত সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে অবস্থিত কবির সমাধিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের নজরুল-জয়ন্তী উদযাপনের আয়োজন। পরে কবির স্মৃতিবিজড়িত দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং রাজধানী ঢাকায় দিনভর অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। এর মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্র­ণালয় কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালে আয়োজন করে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের। এছাড়াও কবির স্মৃতিধন্য কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা ও চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় আয়োজন করা হয় নজরুল-জয়ন্তীর অনুষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন: ভোর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিবিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জাতীয় কবির সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে জমতে থাকে সর্বস্তরের মানুষের ভিড়। প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমান। এর পর সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে।

আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

শ্রদ্ধা নিবেদন করে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের জন্য তার লেখনী কবিতা, গল্পের মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সবসময় কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিলেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করেছিলেন তিনি।

বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল সালাম বলেন, অত্যাচার-নিপীড়ন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন প্রতি মুহূর্তে কাজী নজরুল ইসলামকে মনে পড়ে। তিনি শুধু দেশের কবি নন, সারা বিশ্বের কবি। তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের কবি নন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষে সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বাংলাদেশের কমিউিনিস্ট পার্টি, বাসদ, জাসদ, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমি, মানিকগঞ্জ সমিতি-ঢাকা, ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, ঢাবির বিভিন্ন হলের ছাত্র সংসদ, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংসদ ও ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী।

রাষ্ট্রীয় আয়োজন: ‘নজরুল চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে নজরুলজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে নজরুল স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া ‘নজরুল চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শিরোনামে স্মারক বক্তৃত্বা দেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী ও সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবিপৌত্রী খিলখিল কাজী। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্ব স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সংস্কৃতি সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজন: কবির সমাধি প্রাঙ্গণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল।

আখতারুজ্জামান বলেন, কাজী নজরুল সবসময় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও অসাম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদী ছিলেন। তার লেখা গান, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আয়োজনে কবিতা আবৃত্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। অনুষ্ঠানে নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষক ড. মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী) ও খায়রুল আনাম শাকিলসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

ছায়ানট-এর নজরুল-বন্দনা: দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণিল আয়োজন। নজরুলের গান-কবিতা আর তাকে ঘিরে কতকথায় সাজানো হয় এই আয়োজন। সকাল ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির শঙ্করের ছায়ানট ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এবারের এ নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠান।

ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে ‘জাগো অমৃত পিয়াসী চিত’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন। এর পর নজরুল কথনে ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘জাতীয় জীবনে নজরুলের অবদান অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনে নজরুল ছিলেন আমাদের প্রেরণার উৎস। তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার রচনাগুলো আমাদের সুন্দর মানবিক জীবনের পথ দেখায়। বাঙালি হয়েও তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ব নাগরিক। তার সঙ্গীত এতটাই সমৃদ্ধ যে আমাদের শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চায় অনুপ্রাণিত করে।’

এর পর একক পরিবেশনায় সুপ্তিকা মণ্ডল ‘আকাশে ভোরের তারা’, মনীষ সরকার ‘ওগো অন্তর্যামী, ভক্তের তব শোন’, মোহিত খান ‘তুমি যতই দহনা দুখের অনলে’, ঐশ্বর্য সমদ্দার ‘খেলে নন্দের আঙিনায় আনন্দ দুলাল’, লায়েকা বশির ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’, তানভীর আহমেদ ‘কাল্মা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি’, শ্রাবন্তী ধর ‘ভাইয়ের দোরে ভাই কেঁদে যায়’ ও বিটু কুমার শীল গেয়ে শোনান ‘স্বদেশ আমার। জানি না তোমার’। নজরুল রচনা থেকে পাঠ করেন সুমনা বিশ্বাস ও জয়ন্ত রায়। সবশেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

সারাবাংলা/এমআই


আরও পড়ুন :

.   চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি: মেয়াদ শেষ, নেই নির্বাচনের তোড়জোড়

.   স্বজনপ্রীতি চাপ বা বিনিময়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন: নাসির উদ্দীন ইউসুফ


১২০ তম কাজী নজরুল ইসলাম জন্ম জয়ন্তী জাতীয় কবি

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর