পালিয়ে যাওয়ায় শাস্তি বাড়তে পারে ওসি মোয়াজ্জেমের
১২ জুন ২০১৯ ২২:১২
ঢাকা: সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই লাপাত্তা ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। গত ২৭ মে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি তাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পালিয়ে বাঁচতে পারবেন না ওসি মোয়াজ্জেম। বরং আত্মসমর্পণ করে বিচারকারে সহায়তা না করে পালিয়ে বেড়ানোয় বিভাগীয় তদন্তে শাস্তির পরিমাণ বাড়তে পারে মোয়াজ্জেম হোসেনের।
অধ্যক্ষের কাছে শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। ওই সময় নুসরাতের জবানবন্দি ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম। থানায় নুসরাতকে হয়রানির এ ঘটনায় ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে বাদি হয়ে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আদালত মামলাটির তদন্ত ভার দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। পরে গত মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা তুলে ধরে ২৭ মে পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন কর্মকর্তা হয়ে ওসি মোয়াজ্জেম কি পালিয়ে বাঁচতে পারবেন?— জানতে চাইলে বুধবার (১২ জুন) পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, পালিয়ে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। সবার জন্যই আইন সমান, সে যেই হোক না কেন। সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন- ফেনীর পুলিশও ঢাকায় খুঁজে পাচ্ছে না ওসি মোয়াজ্জেমকে
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম পুলিশের একজন পরিদর্শক। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে বিচারে সহযোগিতা করতে পারতেন। সেখানে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে কথা বলার সুযোগ পেতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। ফলে ভিন্ন কিছুও হতে পারে। তাছাড়া পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে যে বিভাগীয় তদন্ত চলছে, সেখানেও তার শাস্তির পরিমাণ বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়, যা এখনো চলছে।
নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। পরে গত ৯ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়। তবে সেখানেও এখন পর্যন্ত যোগ দেননি মোয়াজ্জেম।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা অনুমতি ছাড়া কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকতে পারেন কি না— জানতে চাইলে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য সারাবাংলাকে বলেন, অনুমতি ছাড়া কেউই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত নেই জানিয়ে পুলিশ সদর দফতরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত অব্যাহত আছে। প্রতিবেদনের আলোকে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, পুলিশ সদর দফতর ব্যবস্থা নেবে।
কর্মক্ষেত্রে যোগ না দেওয়া মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ১৬ দিনেও খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। এরই মধ্যে ফেনী জেলা পুলিশের একটি দল ঢাকায় তার সন্ধানে একাধিক স্থানে অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি।
ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী সার্কেল) শফিকুল আহমেদ ভূঈয়া বলেন, সোনাগাজী পুলিশের একটি দল মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করতে গত দুই দিন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছে। আজও (বুধবার) তিন দফায় অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত টিম ঢাকায় অবস্থান করবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধূলো দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেন দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন কি না— সে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও বুধবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মোয়াজ্জেম দেশেই আছে। তার পালানোর সব পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। তাকে যেকোনো সময় গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
এদিকে, পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে এক বার্তায় জানানো হয়েছে, মোয়াজ্জেম হোসেনের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে আইজিপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, নুসরাত থানায় গিয়ে ওসি মোয়াজ্জেমের কাছে হয়রানির শিকার হলেও পরে তার মা নুসরাতের মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সিরাজকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
এরপর থেকেই সিরাজ কারাগারে রয়েছেন। তবে কারাগার থেকেই তিনি নুসরাতের পরিবারের ওপর মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। নুসরাতের পরিবার মামলা তুলে না নিলে সহযোগীদের দিয়ে ৬ এপ্রিল গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নুসরাত।
আরও পড়ুন-
ওসি মোয়াজ্জেমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
থানার ভেতরে নুসরাতের ভিডিওধারণ সাইবার ক্রাইম, বললেন আইনজীবীরা
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাত হত্যা মোয়াজ্জেম হোসেন সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল সোনাগাজী থানা