সোনাগাজী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে মোয়াজ্জেমকে
১৬ জুন ২০১৯ ১৭:৫৪
ঢাকা: শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছেই হস্তান্তর করা হবে। এর আগ পর্যন্ত তাকে শাহবাগ থানাতেই রাখা হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার এ তথ্য জানিয়েছেন। মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারের পর বিকেল ৫টায় রমনায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
আরও পড়ুন- সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার
মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে রাজধানীর শাহবাগ থানার কদম ফোয়ারা এলাকা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। এখন তাকে সোনাগাজী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মারুফ হোসেন বলেন, আদালতের ওয়ারেন্ট সোনাগাজী পুলিশের কাছে রয়েছে। তাকে তাদের হাতেই হস্তান্তর করা হবে। তারা ওসি মোয়াজ্জেমকে কোন আদালতে হাজির করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই উপকমিশনার বলেন, এতদিন মোয়াজ্জেম কোথায় ছিলেন, তা আমরা বলতে পারব না। আমরা আজ তাকে পেয়েছি, গ্রেফতার করেছি।
আরও পড়ুন- জামিন নিতে এসে ধরা পড়লেন ওসি মোয়াজ্জেম
এর আগে, বিকেলে পৌনে ৪টার দিকে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করেছি। তাকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই পলাতক পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেন আজ রোববার জামিনের জন্য হাইকোর্টে এসেছিলেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি হাইকোর্টের বাইরে আসেন। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
অধ্যক্ষের কাছে শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। ওই সময় নুসরাতের জবানবন্দি ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম। থানায় নুসরাতকে হয়রানির এ ঘটনায় ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে বাদি হয়ে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আদালত মামলাটির তদন্ত ভার দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। পরে গত মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা তুলে ধরে ২৭ মে পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
আরও পড়ুন- ফেনীর পুলিশও ঢাকায় খুঁজে পাচ্ছে না ওসি মোয়াজ্জেমকে
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই অভিযান চালিয়েও মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফেনী ও ঢাকায় বারবার অভিযান চালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে। ফেনী জেলা পুলিশ ঢাকায় এসেও অভিযান চালিয়েছে। তবে মোয়াজ্জেমের কোনো হদিস তারা বের করতে পারেনি।
সাময়িক বরখাস্ত করার পর মোয়াজ্জেমকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়। সেখানেও পাঠানো হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। তবে মোয়াজ্জেম সেখানে যোগ না দেওয়ায় সেখান থেকেও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।
আরও পড়ুন- ‘ওসি মোয়াজ্জেমকে ধরতে না পারলে হাইকোর্টে রিট’
এর আগে, নুসরাত থানায় গিয়ে ওসি মোয়াজ্জেমের কাছে হয়রানির শিকার হলেও পরে তার মা নুসরাতের মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সিরাজকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
এরপর থেকেই সিরাজ কারাগারে রয়েছেন। তবে কারাগার থেকেই তিনি নুসরাতের পরিবারের ওপর মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। নুসরাতের পরিবার মামলা তুলে না নিলে সহযোগীদের দিয়ে ৬ এপ্রিল গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নুসরাত।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার নুসরাত হত্যা পলাতক সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল সাইবার সিকিউরিটি আইন সোনাগাজী সোনাগাজী থানা