ঈদযাত্রায় নৌপথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা, প্রস্তুতি নেই বিআইডব্লিউটিএ’র
৫ আগস্ট ২০১৯ ১২:৪১
ঢাকা: বর্ষায় এমনিতেই নদী উত্তাল থাকে। এর মধ্যে যদি আবহাওয়া খারাপ হয় তবে সেই মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তখন নৌপথের যাত্রীরা পড়ে ঝুঁকির মধ্যে। এবারের ঈদযাত্রায়ও নৌপথে ঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মালিকরা জানিয়েছেন, এবার প্রবল স্রোতের কারণে লঞ্চগুলো নদীতে কাত হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। কিন্তু দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বিআইডব্লিউটিএ’র নেই কোনো আগাম প্রস্তুতি।
লঞ্চ মালিকদের অভিযোগ, কয়েকমাস আগে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের এক জায়গায় একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। কিন্তু সেটি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ’র তৎপরতা সন্তোষজনক নয়। যে কারণে এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ নৌরুট দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য লঞ্চ মালিকদের আগেই সবধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
লঞ্চ মালিকদের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান নৌরুট ঢাকা-বরিশাল-ঢাকায় ২১টি বেসরকারি লঞ্চ চলাচল করে। এর বাইরেও সরকারি ও অন্যান্য নৌযান রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। এবারের ঈদযাত্রায় বেসরকারি লঞ্চগুলোর ট্রিপ বাড়িয়ে অর্ধশত করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে এবার প্রতিদিন ঢাকা ও বরিশাল থেকে ১৮টি লঞ্চ ছাড়বে। বেশি ঝুঁকি থাকবে যখন লঞ্চ ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাবে। তখন প্রবল স্রোতের অনুকূলে দ্রুত চলতে গিয়ে চরে আটকা পড়তে পারে।
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে এবার লঞ্চ মালিকদের তারা আগাম সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। একইসঙ্গে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেও বলা হয়েছে। সমিতির এই নেতার অভিযোগ- বিআইডব্লিউটিএ’র অসতর্কতা ও খামখেয়ালির কারণে নৌরুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। এছাড়া বন্যা ও প্রবল স্রোতের কারণে সতকর্তা বেশি নিতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর মাহবুবুর রহমান জানান, মিয়ার চর এবং যেখানে একটি কার্গো ডুবে আছে সেই জায়গাটি এড়িয়ে যেতে লঞ্চ মালিকদের বলা হয়েছে। কারণ প্রবল স্রোতে মিয়ার চরের ওই জায়গায় লঞ্চ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে একজন লঞ্চ মালিক বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ শুধু রুট এড়িয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু অন্য রুট কোথায়? একটি জাহাজ তুলতে ছয় মাস লাগবে কেন। আর কিছুদিন পরে তো চর পড়ে যাবে তখন উদ্ধার নাও করা যেতে পারে। জাহাজটি উদ্ধারে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা বলেছে, এজন্য ছয় মাস সময় লাগবে। অথচ মাত্র দুদিনে কার্গো উদ্ধার করা যেত বলে মনে করেন লঞ্চ মালিকরা।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘নৌপথের যেসব জায়গায় লাইট ও বয়া দরকার সেখানে তা দেওয়া হয়নি। লাইট এবং বয়া ঠিকই কেনা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো জায়গা মত স্থাপন হয়নি। আমি নিজে তিন চারদিন আগে বিআইডব্লিউটিএ-কে বলার পর মিয়ার চরে লাইট লাগানো হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা কেবল নির্দেশনা দিয়েই দায় সারে। এছাড়া তাদের অন্য কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।’
এছাড়া এখনই রাতে রশি ফেলে গভীরতা মেপে জাহাজ চালাতে হয় বলে জানিয়েছেন পারাবত লঞ্চের একজন মাস্টার।
এদিকে বরাবরের মত ঈদযাত্রায় সরকারি বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চগুলো যাত্রী বহনে নিয়োজিত থাকবে। সংস্থার এমভি বাঙালি, মধুমতি, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন ও পিএস মাহসুদ—এই পাঁচটি জাহাজ চলাচল করবে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে ঈদ-পরবর্তী এক সপ্তাহ এই বিশেষ যাত্রীসেবা চালু থাকবে।
সারাবাংলা/এসএ/পিটিএম