Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজারে ইলিশের দাপট, দাম কমেনি


৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:৪৩

ঢাকা: মাছের রাজা ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। মেঘনা-পদ্মায় ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, জেলে আর স্থানীয় আড়তদারদের হাত ঘুরে আসছে তা রাজধানীর বাজারেও। রাজধানীর আড়তদাররাও বলছেন, সরবরাহ বেশি থাকায় এই মুহূর্তে মাছ বাজারের সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে ইলিশই। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ অনুপাতে ইলিশের দাম কমেনি। সে অভিযোগও অবশ্য অস্বীকার করছেন না আড়তদাররা।

ইলিশের দাপটের প্রভাব পড়ছে অন্য মাছের দামেও। মনোযোগটা ইলিশে থাকায় সেগুলোর আমদানি একটু কমই। ফলে দামও কিছুটা বাড়তি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- হাজার টাকারও কমে মিলছে এক কেজির ইলিশ!

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা সংলগ্ন মাছের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সোয়ারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, রূপালি ইলিশের যেন চকচক করছে মাছের বাজার। এক-দেড় কেজি থেকে শুরু করে জাটকার সীমা পেরনো দুইশ-আড়াইশ গ্রাম ওজনের ইলিশও নামছে ঝুড়িতে করে। ইলিশের গন্ধও যেন মৌতাত ছড়াচ্ছে আড়তদারদের চোখেমুখে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, সপ্তাহখানেক আগেও ইলিশের যে দাম ছিল, এখন কিনতে গেলে তার চেয়ে ঢের বেশি গুনতে হবে।

পাইকাররা বলছেন, সরবরাহ বেশি থাকলেও দামও বেশি যাচ্ছে ইলিশের। সপ্তাহ দুয়েক আগেও ঢাকার বাজারে এক কেজি থেকে ১২শ গ্রামের ইলিশও কেজিপ্রতি হাজার টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে। অথচ সোয়ারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, এক কেজি ওজনের ইলিশের দামই হাঁকা হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১শ থেকে ১২শ টাকা। অন্যদিকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি চাওয়া হচ্ছে ছয়শ টাকা।

জানতে চাইলে সোয়ারি ঘাটের আড়তদার শহীদ বেপারি সারাবাংলাকে বলেন, বাজারে এখনো প্রচুর ইলিশ আছে। তবে তারপরও এর পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কম। ফলে আমাদেরও বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা দাম বেশি পড়েছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোয়ারি ঘাটের মোকামি পাইকারি বাজারে মাছ সরবরাহ করেন ছোটন মিয়া। ভোলা, চট্টগ্রাম, হাতিয়া এলাকা থেকে মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন সোয়ারি ঘাটে। তারও দাবি, স্থানীয় ঘাটে ঘাটে দাম কিছুটা বেড়েছে ইলিশের।

ছোটন সারাবাংলাকে বলেন, ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে ঠিকই, কিন্তু আমরাও কম দামে কিনতে পারছি না। ইলিশের যেহেতু চাহিদা বেড়েছে, তাই ঘাটগুলোতেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আড়তদাররা। ভোলাতেই ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে এককেজির ইলিশ। লেবার খরচ, ট্রলার ভাড়া হিসাব করে কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি না ধরলে কিছুই তো থাকে না। আর আমাদের কাছ থেকে যে দামে এখানকার আড়তদাররা কিনবেন, তাদেরও তো সেই অনুযায়ীই বিক্রি করতে হবে। কিন্তু আমরা কমে না কিনতে পারলে কিভাবে কমে বিক্রি করব!

সোয়ারি ঘাটে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন আব্দুল্লাহ। তিনি সারাবাংলাকে জানান, বাজারে ইলিশের দাম কমই ছিল বলে শুনেছি। কিন্তু এখানে এসে তো তার নমুনা দেখতে পাচ্ছি না। এই ভরা মৌসুমেও যদি এত দাম দিয়ে ইলিশ কিনতে হয়, সেটা খুব দুঃখজনক।

আব্দুল্লাহ মনে করেন, ইলিশকে ঘিরে একটি সিন্ডিকেট কাজ করে। এখন ইলিশের সরবরাহ বেশি থাকায় ইলিশ কেনা নিয়ে মানুষের আগ্রহও বেশি। সেই সুযোগেই এই সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইলিশের দামের প্রভাব দেশি মাছেও

গত সপ্তাহের তুলনায় ইলিশের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি দাম বেড়েছে অন্য দেশি মাছগুলোরও। কই, পাবদা থেকে শুরু করে সব মাছেই কেজিতে ৫-১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০/৩০ টাকা দাম বেড়েছে। চিংড়িতে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলেও জানালেন ক্রেতারা।

দেশি মাছ বিক্রেতা রমজান আলী সারাবাংলাকে জানান, আগের সপ্তাহে দেশি মাছের দাম কিছু কম থাকলেও এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ৫/১০ টাকা বেশি ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে। দেশি মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই বলেই দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।

আড়তদার শহীদ বেপারি বলেন, ইলিশের মৌসুমে দেশি মাছের আমদানি একটু কমই থাকে। বাজারে তো ইলিশ বেশি, তাই অন্য মাছ একটু কম। আমাদের হাতে যে দামে আসছে, সেই দামেই তো বিক্রি করতে হবে। আমাদেরই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

রুবেল হোসেন নিয়মিতই সোয়ারি ঘাটে আসেন দেশীয় মাছ কিনতে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সব মাছের দামই বাড়তি। কোনো কোনো মাছে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যে গলদা চিংড়ি গত সপ্তাহেও ৭০০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে, আজ সেইটাই কিনতে হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আরও কিছু মাছের দাম জিজ্ঞাসা করলাম, দাম বেশি।

আড়তদাররা জানালেন, সোয়ারি ঘাট রাজধানীতে মাছের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার। বাজারে মাছের আমদানি ভালো থাকলে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। ইলিশের মৌসুমে গড় বিক্রির পরিমাণ আরেকটু বেশি হয়ে থাকে।

ইলিশ ইলিশের দাম ইলিশের মৌসুম দেশি মাছ সোয়ারি ঘাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর