‘সরকারি হিসাবে’ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়ালো
২২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৮
ঢাকা: বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব পরিসংখ্যান। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে আগের সেই রেকর্ড। এর আগে, ২০০০ সালে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৯৩ জন রোগী মারা যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। সেই পরিসংখ্যান ছিল পুরো বছরের। এ বছরে এসে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ১০৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
সোমবার (২১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৯ সালে ২৪৮ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছে ‘ডেথ রিভিউ কমিটি’। এর মধ্যে ১৬৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৪ জন মারা গেছে বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। এই ১০৪ জনের মধ্যে এপ্রিলে দুই জন, জুনে ছয় জন, জুলাইয়ে ৩৫ জন, আগস্টে ৫৭ জন ও সেপ্টেম্বরে চার জন মারা গেছেন।
এর আগে, ২০০০ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সে বছর মারা গিয়েছিলেন ৯৩ জন। ২০০১ সালে ৪৪ ও ২০০২ সালে ৫৮ জন মৃত্যুবরণ করেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। এছাড়া ২০০৩ সালে ১০ জন, ২০০৪ সালে ১৩ জন, ২০০৫ সালে চার জন, ২০০৬ সালে ১১ জন মারা যান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৬৩ জন মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগী থেকে শুরু করে প্রাইভেট চেম্বারে বা বাসায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের সংখ্যা, অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট রোগে বিভিন্ন স্তরের মোট আক্রান্ত রোগীর এক শতাংশ মারা যাওয়া উদ্বেগজনক। বর্তমান অবস্থায় রোগী অনুপাতে মৃতের যে সংখ্যা তা ১ শতাংশের ১০ ভাগের ১ ভাগ। তবে আমরা চাই না একটি মৃত্যুও এভাবে ঘটুক। আর তাই সচেতনতা বাড়াতে হবে। বছরজুড়ে মশা নিধন কর্মসূচি চালাতে হবে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানিয়েছেন, রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ৭৫ জন। আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪২ জন। সবমিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২১৭ জন।
রোগীর সংখ্যা কমে আসা বিষয়ে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি বর্তমানে ঢাকায় তুলনামূলকভাবে ভালো বলা যায়, রোগীর সংখ্যা কমে আসছে ক্রমান্বয়ে। তবে ঢাকার বাইরের কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যশোর, খুলনা ও বরিশালে ডেঙ্গু রোগী এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগ শুধুমাত্র একটি মৌসুমেই হবে— এমনটি আর বলা যাবে না। বর্ষায় বেশি হলেও এটি বছরজুড়েই কমবেশি থাকবে। কারণ ঢাকার বাইরেও এবার ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। আর এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। বছরব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে, রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগের জেলা শহরগুলোতে ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩ জন, খুলনা বিভাগে ৪৭ জন, রংপুর বিভাগে পাঁচ জন, রাজশাহী বিভাগে পাঁচ জন, বরিশাল বিভাগে ২৮ জন, সিলেট বিভাগে তিন জন, ময়মনসিংহ বিভাগে চার জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।