ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের জিম্মায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। ছোট ভাইয়ের একটি প্রাইভেট কারে করে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র পথে রয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে বুধবার (২৫ মার্চ) বিকেল সোয়া ৪টায় বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। গত বছরের এপ্রিল থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়া এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মুক্তির আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন। এসময় তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রও গাড়িতে তোলা হয়। সোয়া ৪টার সময় হুইল চেয়ারে করে বেরিয়ে আসেন খলেদা জিয়া। ভাইয়ের গাড়িতে চড়েন।
আরও পড়ুন- যেকোনো সময় মুক্তি খালেদার, হাসপাতালে অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা
শামীম ইস্কান্দার ছাড়াও খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া ডা. হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত মেডিকেল টিমের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। আর চেয়ারপারসনের মুক্তির খবরে দুপুরের আগ থেকেই হাসপাতালের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসতেই স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির খবরে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকেল থেকেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। খালেদা জিয়ার বসবাসের জন্য নতুন করে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয় ভবনটি। সেখানে কর্তব্যরতরা জানিয়েছেন, এমনিতেই ভবনটি নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হলেও এখন সেটি খালেদা জিয়ার বসবাসের জন্য একদম পরিপাটি করে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন- মুক্তির আদেশ হাসপাতালে, প্রক্রিয়া চলছে দ্রুত গতিতে
এর আগে, মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তার নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে জানান, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ারি সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য তাকে দুই শর্ত মেনে চলতে হবে— থাকতে হবে নিজ বাসভবনে, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
এরপর আইন মন্ত্রণালয় থেকে সে বিষয়ক চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে বুধবার খালেদা জিয়ার কারামুক্তির নির্বাহী আদেশ পৌঁছে দেওয়া হয় কারা মহাপরিদর্শকের কাছে। সেখান থেকে জেল সুপার হয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদেশটি পেলে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন- খালেদা জিয়ার জন্য প্রস্তুত ‘ফিরোজা’!
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। সেদিনই তাকে কারাগারে নেওয়া হয়। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি। এ মামলায় হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এক রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন।
ফাইল ছবি
আরও পড়ুন-
আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি: কাদের
খালেদার মুক্তির নথি এখনো পৌঁছেনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে
‘হাসপাতাল ও খালেদা জিয়ার বাসার সামনে ভিড় না করার আহ্বান’
খালেদা জিয়ার মুক্তি: পুরো বিষয়টি জেনে প্রতিক্রিয়া— মির্জা ফখরুল
খালেদার মুক্তি: করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে হাসপাতালে নেতাকর্মীর ভিড়