করোনাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় বাঁচছে রাবির প্রাণীগুলো
৫ আগস্ট ২০২০ ০৮:২৩
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: করোনা মহামারিতে স্থবির জনজীবনে ব্যস্ততা ফিরতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে অফিস-আদালত ও দোকানপাট খুললেও বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে করনো প্রকোপ শুরুর পর ১৮ মার্চ থেকে সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর করোনার বিস্তার রোধে চলে টানা ৬৬ দিনের লকডাউন। ওই সময় খেটে খাওয়া দুঃস্থ-অসহায় মানুষদের দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় খাবারের দোকানগুলোও। কোথাও কোনো উচ্ছিষ্ট খাবার নেই, নেই বিকল্প কোনো ব্যবস্থা। খেতে না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীগুলোর দম যায় যায় অবস্থা। কয়েকশ’ কুকুর-বিড়াল ঝিমানো শুরু করে দেয়। এমন দুর্যোগে রাবির প্রাণীগুলোকে বাঁচাতে আসে এগিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটির এক ঝাঁক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
রাবির পোষা প্রাণিগুলোর খাওয়ার বন্দোবস্তসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘পোষা প্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প’। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ১২০ দিন পার হয়েছে। প্রকল্প শুরুর প্রথম থেকেই চলছে প্রাণিদের খাবার ও চিকিৎসা দেওয়ার কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সম্পৃক্ত হয়েছেন এসব মানবিক কাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শাওন উদ্দীন ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে প্রকল্পটির জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি জানান, ক্যাম্পাস বন্ধের পর দেখা গেল যে, কুকুর-বিড়ালগুলো ক্ষুধায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। এরপর তাদের ক্ষুধা লাঘবের জন্য ২৯ মার্চ প্রথমে শুধু চাল ও ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো শুরু হয়। পরে এর সঙ্গে মুরগির মাথা ও পা দিয়ে প্রাণিগুলোর জন্য খাবার রান্না করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে একশ স্পটে প্রাণীগুলো ও পাখিদের জন্য খাবার দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকরাও এর জন্য সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে ১২০ জন শিক্ষক এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
তবে অভুক্ত কুকুরগুলোর জন্য প্রথমে খাবার নিয়ে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ কুমার এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকী। ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, রাকসু ভবনের পাশে একটি বড় হাড়িতে ছয় কেজি চাল ও দুই কেজি ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করছেন শিক্ষার্থীরা। রান্না শেষ হতে না হতেই কয়েকটি কুকুর ভিড় জমায় সেখানে। এরপর রান্না করা সেই খাবার কুকুরদের খেতে দিলেন তারা। এছাড়া প্রাণীদের জন্য রান্না করা খাবার বালতিতে নিয়ে ছুটলেন ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্পটে।
দুজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে এই মানবিক কাজ শুরু হলেও পরবর্তীতে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ইশতিয়াক ইমু ও তামির হোসেনসহ আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে আসেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে শিক্ষকরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমানে প্রায় শতাধিক শিক্ষক এই প্রকল্পে সহায়তা করছেন। এছাড়াও বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সহায়তা পাচ্ছেন বলে জানান প্রসেনজিৎ।
প্রসেনজিৎ বলেন, ‘সাধারণত ক্যাম্পাসের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর উচ্ছিষ্ট থেকেই খাবার সংগ্রহ করত এসব প্রাণী। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সুযোগটা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে প্রাণিগুলো। দেশের জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটা মানুষের আলাদা একটা দায়িত্ব রয়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও লালনপালন করা মানুষের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের জায়গা থেকেই কাজটা করা। অনেকেই পশুপাখির প্রতি নির্দয় আচরণ করেন। তাদের অনুরোধ করব পশুপাখির প্রতি সদয় হতে।’
শুধু রান্না করে খাবার খাওয়ানো নয়, কোনো প্রাণি অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতায় চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে। আর ক্যাম্পাস না খোলা পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ওষুধ করোনাকাল খাবার চিকিৎসা পোষা প্রাণি সংরক্ষণ প্রকল্প প্রাণি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী