এবারে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ
২৯ জুন ২০২১ ২০:১৯
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। আর এরই সূত্র ধরে এবারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন রেকর্ড গড়েছে। প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৬শ কোটি ডলারের ল্যান্ডমার্ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার (২৯ জুন) প্রথমবারের মতো এই রেকর্ড হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৮২ বিলিয়ন ডলার। এর মাধ্যমে দুই মাসেরও কম সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ১ বিলিয়ন ডলার যোগ হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর কাজী ছাইদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বেড়ে যাওয়ায় আজ (মঙ্গলবার) প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ তিন লাখ ৯১ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভে একের পর এক নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ২০২০ সালের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পযন্ত প্রায় প্রতি মাসেই প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এরপরও রেকর্ড না হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত আছে। তাতে বাড়ছে রিজার্ভও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের সেই রেকর্ড টিকে ছিল প্রায় তিন বছর। গত বছরের ৪ জুন প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়ে। এরপর থেকে গত ১০ মাসে একের পর নতুন রেকর্ড হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
গত ২৪ জুন রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে, ৩০ জুন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে ও গত ২৮ জুলাই ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন এবং ১ সেপ্টেম্বর ৩৯ দশমিক ৪০ ডলারে উন্নীত হয়। রিজার্ভ বৃদ্ধির গতি অব্যাহত থাকে এরপরও। ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলার, ৩০ অক্টোবর ৪১ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ বিলিয়ন ডলার এবং গত বছর শেষ হওয়ার একদিন আগে ৩০ ডিসেম্বর ৪৩ বিলিয়ন ডলারের উচ্চতায় উন্নীত হয় রিজার্ভ।
চলতি বছরের শুরু থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি অব্যাহত ছিল। সেই সুবাদে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ৪৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এরপর রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত ৩ মে। সবশেষ এবারে এই রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলকও অতিক্রম করে গেল। সে হিসাবে এ বছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার অর্থ যোগ হলো রিজার্ভে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে ১২ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব। এদিকে, চলতি জুন মাসের ২৮ দিনে প্রবাসীরা দেশে ১৭৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রাখেছে ১২ শতাংশের বেশি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো— সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি বৈদেশিক মুদ্রার রিজাভর্ রিজার্ভ