ইভ্যালির রাসেল আরও এক দিনের রিমান্ডে, শামীমা কারাগারে
২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৪৭
ঢাকা: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকেও (প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান) রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিল পুলিশ। তবে সেই আবেদন নাকচ করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুল হকের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে, একই মামলায় তাদের দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
মঙ্গলবার ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা প্রতারণায় মামলায় রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনসহ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হুদা।
এদিন দুপুর দেড়টায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। এরপর তাদের সরাসরি সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। বিকেল ৩টার সময় তাকে আদালতের এজলাসে ওঠানো হয়।
আবেদনে বলা হয়, ব্যবসায়িক চুক্তির মাধ্যমে ইভ্যালিতে চারটি কোম্পানীর মাধ্যমে মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৪২ টাকার পণ্য সরবরাহের বিপরীতে কোনো টাকা পরিশোধ করে নাই। গত মে মাসে পোস্ট ডেটের একটি চেক গত ৩০ জানুয়ারি উল্লেখ করে দিলেও পর্যাপ্ত টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে না থাকায় চেকটি দুই বার ব্যাংক কর্তৃক রিটার্ন আসে। গত ২৯ আগস্ট মামলার বাদী মেট্রো কভারেজ, স্মার্ট ফুড এন্ড বেভারেজ, ফ্রীডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম চকদার পাওয়া টাকা পরিশোধে আসামিদের চিঠি দিয়ে জানানোর পরও তারা তার সাথে যোগাযোগ করেনি। বাদী তাদের অফিসে গিয়ে পাওনা টাকা চাইলে তার সাথে খারাপ আচরণসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
রাষ্টপক্ষে সাজ্জাদ রহমান শিহাব, তাপস কুমার পাল রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তারা বলেন, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করলে ঘটনা আড়ালে থেকে যাবে। তাই তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
আসামিদের পক্ষে এম মনিরুজ্জামান আসাদ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে সবকিছু অনেকটা স্তম্ভিত ছিল। প্যানিক সিচুয়েশন ছিল। আর তারা তো অস্বীকার করেননি, যে তারা তার কাছ থেকে পণ্য নেননি। এখন যদি তাদের রিমান্ড দেন তাহলে তারা কীভাবে টাকা পরিশোধ করবেন। তাদের জামিন দেন। এরপর একটা সময় নির্ধারণ করে দেন যে এত দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
শামীমা নাসরিনের বিষয়ে এ আইনজীবী বলেন, তার ৯ বছরের মেন্টাল ডিজঅনার বাচ্চা আছে। সে এখন তার মাকে চায়। মাকে ছাড়া থাকতে চায় না। কান্না করছে। তার কাছে মাকে খুব দরকার। বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইভ্যালি এমডি রাসেলের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযান শেষে বিকেলে এই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, গত ২৯ মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি পণ্য অর্ডার করেন আরিফ বাকের। এগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা পাননি। এমনকি কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়েও এর সমাধান পাননি। অফিসে গিয়ে তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বললে তারা সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেনি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তাব্যক্তির সঙ্গেও কেউ দেখা করতে দেয়নি। বারবার এ চেষ্টা করা হলেও ইভ্যালির পক্ষ থেকে খারাপ ব্যবহার করা হয় তার সঙ্গে। এই ঘটনার পরে আরিফ বাকের নামে এক গ্রাহক বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি করেন।
আরও পড়ুন-
- ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে মামলা
- ইভ্যালির রাসেল-শামীমা ৩ দিনের রিমান্ডে
- ইভ্যালির মোট দায় হাজার কোটি টাকা: র্যাব
- ইভ্যালির সিইও রাসেলের বাসায় অভিযানে র্যাব
- ইভ্যালি চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে চিট করে: রাষ্ট্রপক্ষ
- ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা ও সিইও রাসেল গ্রেফতার
- ইভ্যালির রাসেল-শামীমাকে ১০ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ
- আদালতের সামনে রাসেলের মুক্তির দাবিতে স্লোগান, আটক ১
- শত শত কোটি টাকা গায়েব, সদুত্তর দিচ্ছেন না রাসেল-শামীমা
- আদালতে ইভ্যালির রাসেল-শামীমা, সাত দিনের রিমান্ড আবেদন
- ইভ্যালির রাসেল-শামীমার মুক্তি চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন
এরপর কামরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। কামরুল ইসলাম জানান, তিনি মেট্রো কভারেজ, স্মার্ট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফ্রিডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডি ও ফিউচার আইটি নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গ্রাহকদের মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেছেন। পণ্য সরবরাহের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের একটি চেক দিলেও সেই একাউন্টে কোনো টাকা ছিল না। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি জিডিও (নং ৭০৬) দায়ের করেন। তবু ইভ্যালি তাদের অর্থ পরিশোধ করেনি।
পরে কামরুল ইসলাম গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- ইভ্যালির ভাইস প্রেসিডেন্ট আকাশ, ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম, সিনিয়র একাউন্টস ম্যানেজার তানভীর আলম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (কমার্শিয়াল) জাওয়াদুল হক চৌধুরী, হেড অব একাউন্ট সেলিম রেজা, একাউন্টস ম্যানেজার জুবায়ের আল মাহমুদ, একাউন্ট শাখার কর্মী সোহেল, আকিবুর রহমান তুর্য, সিইও’র পিএস রেজওয়ান ও বাইক ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা সাকিব রহমান।
এছাড়া মামলার এজাহারে আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এআই/এমও