Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিকিৎসকসহ ইভানার স্বামী ও প্রেমিকার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:৪২

স্বামী রুম্মানের সঙ্গে ইভানা

ঢাকা: রাজধানীর পরীবাগে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্কলাসটিকার ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায়  শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করা হয়েছে। ইভানার বাবা এ এস এম আমান উল্লাহ চৌধুরী শুক্রবার সন্ধ্যায় মামলার আবেদন করেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে— ‘মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে এবং ঘুমের ওষুধের নামে ক্ষতিকর ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় এমন ওষুধ প্রেসক্রাইব করে ইভানাকে ধীরে ধীরে হত্যা করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মামলার আবেদনে ইভানার স্বামী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান রুম্মানকে ১ নম্বর আসামি, তার প্রেমিকা ব্যারিস্টার সানজানা ইয়াসিন খানকে ২ নম্বর আসামি ও অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হককে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইভানার বাবা এ এস এম আমান উল্লাহ চৌধুরী, ইভানার দুলাভাই এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন শাহবাগ থানায় যান। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার অনুপস্থিত থাকায় পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান মামলার আবেদনটি গ্রহণ করেন।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন— বিয়ের শুরুতেই ইভানাকে তার স্বামী রুম্মান শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। কিছুদিন আগে ইভানা জানতে পারে যে, রুম্মান ২ নং আসামি ব্যারিস্টার সানজানা ইয়াসিন খানের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত। সানজানার স্বামীর নাম ব্যারিস্টার হারুন উর রশীদ খান। ইভানা তার স্বামী রুম্মান ও সানজানার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে প্রেমালাপের প্রমাণ পায় এবং তার স্ক্রিনশর্ট তুলে বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে মেসেঞ্জারে পাঠায়। ইভানা আরও জানায় বেশ কিছুদিন ধরে রুম্মান তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়াচ্ছিল যাতে নির্বিঘ্নে সানাজানার সাথে ফোনে প্রেমালাপ করতে পারে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন— গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইভানা আমাকে রুম্মানের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ে জানায়। ১৪ সেপ্টেম্বর আমার মেজ মেয়ে ফারহানা চৌধুরী রুম্মানকে ফোন করে ইভানার খবর জানতে চায়। রুম্মান জানায়, ইভানা ওভারডোজ ওষুধ খেয়ে ফেলেছে। এখন ঘুমুচ্ছে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ফারহানা তার বোন ইভানাকে দেখতে পরদিন দুপুর ১টার দিকে ইভানার শ্বশুরবাড়ি পৌঁছায়। বাসার কাছাকাছি এসে ইভানাকে ফোনে না পেয়ে আমার মেয়ে ইভানার শাশুড়িকে ফোন করেন। এতে ইভানার শাশুড়ি ভীষণ বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করেন আমার মেয়ে কেন বাসায় যাচ্ছে? পরে ইভানাকে দেখতে না পেয়ে আমার মেয়ে ফারহানা ফিরে আসে।

বিজ্ঞাপন

ওইদিন বিকেলে ইভানা ভিডিও কল করে অনেক কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন ইভানা তার বোন ফারহানার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলে ‘রুম্মান কেন তাকে পছন্দ করে না? কেন অন্য নারীকে ভালোবাসে?’

ওইদিন রাত ৯টার দিকে ইভানাকে আমার মেয়ে ফারহানা ফোন করলে রুম্মান ওই ফোন কল রিসিভ করে। রুম্মান জানায়— ইভানা ঠিক আছে, ডিনার করেছে এবং ঘুমিয়ে পড়েছে।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়— মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে, ঘুমের ওষুধের নামে ক্ষতিকর দ্রব্য সেবন করিয়ে এবং তিন নম্বর আসামির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষতিকর ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়- এমন ওষুধ প্রেসক্রাইব করিয়ে সেই ওষুধের ওভারডোজ ইভানার ওপর প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে তাকে হত্যা করে। ১ নম্বর আসামি এমনই অমানবিক যে, তার স্ত্রী দুর্ঘটনার খবর শোনার পর ইভানাকে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো চেষ্টা করেনি। তার দাফন-জানাজা থেকে শুরু করে কোনো সামাজিক দায়িত্ব পালন করেনি। এমনকি তার সন্তানদেরও এ পর্যন্ত কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি।

উল্লেখ্য, ইভানার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারাবাংলা ডটনেটে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

সারাবাংলার অনুসন্ধান অনুযায়ী— ইভানার স্বামী আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান রুম্মানের সঙ্গে ব্যারিস্টার সানজানা ইয়াসিন খানের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে ইভানা মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, তাদের সংসারে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। রুম্মানের অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় ইভানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন। স্বামী-সংসারে ইভানাকে ধীরে ধীরে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ স্বজনদের।

এমনকি প্রতিরাতে ইভানাকে ‘ঘুমের ওষুধ’ খাইয়ে আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান তার প্রেমিকা সানজানা ইয়াসিন খানের সঙ্গে আলাপ চালাতেন বলে সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে আসে। অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ হয়েও ইভানাকে ‘মানসিক রোগের’ প্রেসক্রিপশন দেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। ডা. মুজিবুল হকের প্রেসক্রিপশন ও চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ইভানার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।  এর ১০ দিনের মাথায় ইভানার স্বজনরা অবশেষে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করলেন।

সিসিটিভির ফুটেজের বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মওদুত হাওলাদার ঘটনার দিন জানান, ভবনের ছাদ থেকে ইভানা লাফিয়ে পড়েন।

পরীবাগে নবাব হাবিবুল্লা রোডের ২/ক/১৪ নম্বর ৯ তলা ভবনের ৫ম তলায় স্বামী স্বামী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসানের সঙ্গে থাকতেন ইভানা। ইভানা-রুম্মান দম্পতির ঘরে দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।

আরও পড়ুন
ইভানার মৃত্যুর দায় কার
অবশেষে মামলার সিদ্ধান্ত ইভানার পরিবারের
ইভানার জন্য বন্ধু-সহকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে থানায়
স্কলাসটিকা কর্মকর্তা ইভানার মৃত্যুর নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ইভানার মৃত্যুরহস্য: মামলা নিয়ে পরিবারের রহস্যময় আচরণ
ইভানাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে কথা বলতেন রুম্মান
ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আবেদন
ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আইনজীবীরা

সারাবাংলা/ইউজে/একে

ইভানা ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান রুম্মান ব্যারিস্টার সানজানা ইয়ামিন খান মর্মান্তিক মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর