ইভানার ‘আত্মহত্যা প্ররোচনা’য় দোষীদের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন আজ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০১:৫৮
ঢাকা: স্কলাস্টিকা স্কুলের ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর মৃত্যুর পেছনে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে পরিবারের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় মামলাও দায়ের হয়েছে। সেই মামলা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন তার বন্ধু-সহকর্মীসহ আইনজীবীরা। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের এই মানববন্ধন হবে।
মানববন্ধনে আয়োজক আইনজীবীরা বলছেন, ‘আমরা ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাই। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গণে ইভানার সম্মানে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজন করেছি। আমরা যথাযথ স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানাচ্ছি।’ ইভানার জন্য আয়োজন করা এই মানববন্ধনে সবাইকে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন আয়োজক আইনজীবীরা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পরীবাগে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পেছনে) নকশী প্যালেসের দুই ভবনের মাঝখান থেকে ইভানা লায়লা চৌধুরীর নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সারাবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে ইভানা ক্রমাগত মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন।
ইভানার পরিবার ও বন্ধু-সহকর্মীদের অভিযোগ, স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিলেন। ইভানার বন্ধু-সহকর্মীরা এ সংক্রান্ত কিছু তথ্যপ্রমাণসহ এক আবেদনে ইভানার মৃত্যুরহস্য সুষ্ঠুভাবে তদন্তের আবেদন জানিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছিল, তারা এই আবেদন ও এর সঙ্গে সংযুক্ত তথ্যপ্রমাণ এ ঘটনায় দায়ের হওয়া অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে আমলে নেবে।
শুরুতে কিছু দ্যোদুল্যমানতার মধ্যে থাকলেও পরে এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে থানায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয় ইভানার পরিবার। গত শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ইভানার মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার আবেদন করা হয় শাহবাগ থানায়। সেদিন থানা থেকে মামলাটি গ্রহণ করা হয়নি। পরদিন পুলিশ ইভানার বাবাকে ডেকে নিয়ে মামলাটি গ্রহণ করে।
আরও পড়ুন
- ইভানার মৃত্যুর দায় কার
- অবশেষে মামলার সিদ্ধান্ত ইভানার পরিবারের
- ইভানার জন্য বন্ধু-সহকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে থানায়
- স্কলাসটিকা কর্মকর্তা ইভানার মৃত্যুর নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- মামলা নেয়নি শাহবাগ থানা, আদালতে যাবে ইভানার পরিবার
- ইভানার মৃত্যুরহস্য: মামলা নিয়ে পরিবারের রহস্যময় আচরণ
- ইভানাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে কথা বলতেন রুম্মান
- ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আবেদন
- ইভানার স্বামীর দেশ ছাড়ার আশঙ্কা, সব ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পুলিশের
- ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আইনজীবীরা
দুই সন্তানের জননী ইভানা লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজের (সাউথ) শিক্ষার্থী ছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এলসিএলএস (সাউথ) ডিবেট এবং মুটিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্কলাস্টিকা স্কুলের ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
ইভানার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান রুম্মানকে বিয়ে করেন ইভানা। বিয়ের পর থেকেই তিনি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। স্বল্পভাষী ইভানা সে তথ্য খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া অন্য কাউকে জানাননি।
তার মৃত্যুর পর সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে আসে, ইভানার স্বামী ব্যারিস্টার রুম্মান বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন একজন নারী ব্যারিস্টারের সঙ্গে। সেই সম্পর্ক চালিয়ে নিতেই ইভানাকে ‘পথের কাঁটা’ মনে করেছিলেন রুম্মান। সে কারণেই ইভানাকে প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খাওয়াতেন। পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইভানাকে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য ওষুধও খাওয়ানো হতো।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ইভানার সঙ্গে নির্মম আচরণ করতেন। রুম্মান বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় শ্বশুর-শাশুড়ি চাইতেন, ইভানা ডিভোর্স নিয়ে চলে যাক। এমনকি ইভানার মৃত্যু হলেও তাদের কিছু যায় আসে না— এমন ইঙ্গিতও দিতেন তারা। মরদেহ উদ্ধারের একদিন আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ইভানা। সে খবর জানতে পেরেছিলেন তার শ্বশুর বাড়ির সদস্যরাও। ইভানার মরদেহ যেদিন উদ্ধার করা হয়, সেদিনও ওই প্রসঙ্গ টেনে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ইভানাকে বলেছিলেন— ‘তুই মরতে চাস? হাত কাটলেই কেউ মরে নাকি? মরা কি এতই সহজ?’ মানসিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা ইভানা এমন কথায় আরও আহত হন। এমন নির্মম আচরণ তাকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে তাৎক্ষণিকভাবে প্ররোচিত করে বলে অভিযোগ তার বন্ধু-সহকর্মীদের। তারা বলছেন, ওই কথোপকথনের পরপরই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ৯ তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়েছিলেন ইভানা।
সারাবাংলা/টিআর/আইই