ইভানার মৃত্যু: আগাম জামিন পেলেন ডা. মুজিবুল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৩১
ঢাকা: রাজধানীর স্কলাস্টিকা স্কুলের ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের মামলায় ইমপালস হাসপাতালের চিকিৎসক মুজিবুল হক মোল্লাকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে মুজিবুল হকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রেজাউল করিম, আইনজীবী তামান্না আফরিন ও মনিরা হক মনি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চিকিৎসক এম মুজিবুল হক মোল্লাকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আসামিকে এই সময়ের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
এদিকে, ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি স্বামী আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসানও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। আদালত আগামীকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) জামিন আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে আসামিরপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের শুনানি করার কথা রয়েছে।
এর আগে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইভানা লায়লা চৌধুরীর (৩২) মৃত্যুর ঘটনায় স্বামী আইনজীবী আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী। শাহবাগ থানার এই মামলার অপর আসামি ইমপালস হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জরুরি সেবা সার্ভিস ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে নবাব হাবিবুল্লাহ রোডের সাকুরা গলিতে দুই ভবনের মাঝখান থেকে ইভানার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ওইদিন রাতেই শাহবাগ থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন তার চাচাতো ভাই এএসএম মাহাবুব উল্লাহ চৌধুরী।
ইভানার স্বামীর দেশ ছাড়ার আশঙ্কা, সব ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পুলিশের।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ইভানার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইভানার শ্বশুর ইসমাইল হোসেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব। নিহতের স্বামী আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ইভানার সঙ্গে ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুটি ছেলে রয়েছে।
ইভানার পরিচিত ও স্বজনদের দাবি, তার স্বামী আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান ওরফে রুম্মানের আচরণ সন্দেহজনক। বিয়ের পর থেকেই ইভানার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে প্ররোচনা দিয়ে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে, যা হত্যার শামিল। ঘটনার দিনও ঝগড়া হয়েছে তাদের। তার আগের দিনও ঝগড়ার সূত্র ধরে নিজের হাত নিজেই কেটেছিলেন ইভানা।
এ ঘটনায় গতকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ইভানার সহপাঠী, সহকর্মী, শিক্ষক ও আইনজীবীরা ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ইভানার মৃত্যুর ঘটনার পেছনে কারা জড়িত সেটি সামনে আসুক। সেটাই আমরা চাই। এভাবে যেন আর কোনো ইভানাকে মৃত্যুবরণ করতে না হয় সে জন্য তার মৃত্যুতে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ইভানাকে কেন এভাবে জীবন দিতে হলো, কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন— আমরা এ প্রশ্নের জবাব চাই।
আরও পড়ুন
- ইভানার মৃত্যুর দায় কার
- অবশেষে মামলার সিদ্ধান্ত ইভানার পরিবারের
- ইভানার জন্য বন্ধু-সহকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে থানায়
- স্কলাসটিকা কর্মকর্তা ইভানার মৃত্যুর নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- মামলা নেয়নি শাহবাগ থানা, আদালতে যাবে ইভানার পরিবার
- ইভানার মৃত্যুরহস্য: মামলা নিয়ে পরিবারের রহস্যময় আচরণ
- ইভানাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে কথা বলতেন রুম্মান
- ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আবেদন
- ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আইনজীবীরা