নালায় পড়ে নিখোঁজের দায় সিডিএর, চসিকও ‘দায়মুক্ত নয়’
৩ নভেম্বর ২০২১ ২১:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রবল বর্ষণের সময় জলাবদ্ধতার মধ্যে নগরীতে নালায় পড়ে এক ব্যক্তির নিখোঁজের ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মূল দায় পেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি। এছাড়া মর্মান্তিক এই ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও (চসিক) দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।
গত ২৫ আগস্ট সকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে নগরীর মুরাদপুরে সড়ক ও ফুটপাতের সঙ্গে লাগোয়া একটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হন প্রায় ৫৫ বছর বয়সী সালেহ আহমদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, আটকে থাকা বৃষ্টির পানিতে নালা ও ফুটপাত একাকার হয়ে যায়। নালার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে যান তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই প্রবল স্রোতে ভেসে যান তিনি। উল্লেখ্য, নিখোঁজের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই ব্যক্তির খোঁজ এখনও মেলেনি।
নিখোঁজ সালেহ আহমদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মনসা গ্রামে। নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজারে নিজস্ব দোকানে তিনি সবজি বিক্রি করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে গ্রামে থাকেন।
সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমদ নিখোঁজের ঘটনার দায় অনুসন্ধানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। গত ১০ অক্টোবর এই কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩১ অক্টোবর) কমিটি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
আরও পড়ুন
- নালায় পড়ে ছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
- চট্টগ্রামে জলজটে ভোগান্তি, নালায় পড়ে নিখোঁজ বৃদ্ধ
- নালায় পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু: সিডিএর ঘাড়ে দায় চাপালেন মেয়র
- এক টন আবর্জনা সরিয়ে ৭০ ফুট গভীর থেকে ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
- খোঁজ মেলেনি ৩ দিনেও, নালায় আবর্জনায় আটকে থাকার ধারণা
জানতে চাইলে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে স্থানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে নালায় ও খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে। যারা কাজ করছে (সিডিএ) তারা এক বছর আগে নালার ওপর থেকে স্ল্যাব সরিয়ে নেয়। ফলে উন্মুক্ত নালা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। জায়গাটি শনাক্তকরণের জন্য সতর্কতামূলক কোনো নির্দেশনাও দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সুতরাং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের দায় অবশ্যই আছে।’
চসিকের কোনো দায় তদন্তে পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহরের নাগরিক সেবার ওভারঅল দায়িত্ব কিন্তু সিটি করপোরেশনের। তাদের নজরে বিষয়টি ছিল না। সুতরাং তারাও দায় এড়াতে পারে না বলে কমিটি মনে করছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে জমা দিয়েছি। উনি সেটি কেবিনেটে পাঠাবেন।’
সালেহ আহমেদের নিখোঁজের একমাস পর চট্টগ্রাম নগরীতে আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে জেক্স মার্কেটের সামনে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯) নামে এক তরুণী। ফায়ার সার্ভিস তল্লাশি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭০ ফুট দূরে নালার ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। সেহেরীন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ঘটনার পর চসিক ও সিডিএ পাল্টপাল্টি দোষারোপ করে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম