মিতু হত্যা: অধিকতর তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে পিবিআই
১০ নভেম্বর ২০২১ ২১:১৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার অধিকতর তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল তদন্ত সংস্থা পিবিআই। তবে আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
বুধবার (১০ নভেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ওই মামলার নথিপত্র পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।
পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আমরা অধিকতর তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের তো মামলার সব নথিপত্র লাগবে। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার সব নথিপত্র বর্তমানে আদালতের হেফাজতে আছে। এজন্য আমরা নথিগুলো ফেরত চেয়ে আবেদন করেছি। নথি পেলে অধিকতর তদন্ত শুরু হবে।’
চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর মামলার বাদী বাবুল আক্তার সব নথিপত্র আদালতের হেফাজতে সংরক্ষণের আবেদন করেছিলেন। গত ২৩ আগস্ট এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত বাবুল আক্তারের পক্ষে আদেশ দেন।
আরও পড়ুন-
- মিতু হত্যা মামলা কোন পথে?
- মিতু হত্যার আসামি ভোলা গ্রেফতার
- মিতু হত্যা মামলার আসামি সাক্কু গ্রেফতার
- পুনঃতদন্ত নয়, বাবুলের মামলার অধিকতর তদন্ত হবে
- মিতু হত্যা মামলা: হাইকোর্টে ভোলার ৪ সপ্তাহের জামিন
- মিতু হত্যা: বাবুলের নারাজি আবেদনের আদেশ ৩ নভেম্বর
- মিতু হত্যায় স্বামী বাবুলকে আসামি করে ৫ বছর পর মামলা
- মিতু হত্যা: জবানবন্দির পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় মুসার স্ত্রী
- বাবুলকে ‘বাঁচিয়ে’ দাখিল হচ্ছে মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানাভাবে স্ত্রী খুনে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার আলোচনা শুরু হয়। ঘটনার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ্যে আনেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
চলতি বছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিলের পর গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন— মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও শাহজাহান মিয়া।
ওই দিনই (১২ মে) বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এদিকে গত ১৪ অক্টোবর কারাবন্দি বাবুল আক্তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দাখিল করেন। ২৭ অক্টোবর ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয় বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে। আদালত বাবুলের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ১২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত। তবে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া নিয়ে আপত্তি আছে বাবুলের আইনজীবীর।
এর মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর মামলার এক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করায় তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।
অধিকতর তদন্ত এসপি বাবুল আক্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পিবিআই পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার মাহমুদা খানম মিতু মিতু হত্যা মামলা