Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:৫২

ফাইল ছবি

ঢাকা: উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আরও অনেক সুযোগ হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ জন্য হয়ত অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত। সেই প্রস্তুতিও আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন আছি আমরা কিন্তু সেখান থেকে পিছিয়ে থাকি নাই, সেই প্রস্তুতিও নিয়েছি।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) হাতিরঝিলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৬ দিনব্যাপী ‘বিজয়ের ৫০ বছর-লাল সবুজের মহোৎসব’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটার প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। আজ থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসব চলবে। সন্ধ্যায় গণভবন থেকে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের টানা মেয়াদে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তুলে ধরেন এবং টানা মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণকে বারবার আমাদেরকে ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়েছেন বলেই আমরা বিজয়ী হয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। একটা দীর্ঘ সময় সরকারে থাকার সুযোগ পেয়েছি বলেই মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে পেরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কিছুটা থমকে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এবং তারপরও বাংলাদেশ যে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে সেকথা উল্লেখ করেন।

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ায় তার ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে এবং তার সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। পাশাপাশি তার সরকারের বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা যে ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১। আজকে-২০২১ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে হয়ত জাতির পিতা আজকে বেচে নেই কিন্তু নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে দেখছেন। এখন আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা উন্নত-সমৃদ্ধশালী করা এবং বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশই আমি গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় ব্যবসাবান্ধব এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি আপনারা নিশ্চয়ই এতদিন উপলব্ধি করতে পেরেছেন। কিন্তু আপনাদের কাছে আমার একটা দাবি থাকবে-এই দেশের মানুষ যারা একেবারে গ্রাম পর্যায়ে পরে থাকে, আপনারা প্রত্যেকেই তো এই দেশের কোনো না কোনো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। কোনো না কোনো স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। আপনারা সেই এলাকাগুলোর, নিজ নিজ এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের কর্মসূচির পাশাপাশি আপনারাও কিছু কিছু কর্মসূচি নেবেন। যাতে তাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়- এ ব্যাপারে আপনারা কাজ করবেন।’

‘কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যতবেশি বৃদ্ধি পাবে আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। আপনাদের শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করার জন্য বাজার সৃষ্টি হবে। আরও বেশি পণ্য বিক্রি হবে এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। আপনাদেরও আয় বৃদ্ধি পাবে। কাজেই সে দিক বিবেচনায় রেখেই এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবেন— এটিই আমি চাই’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ব্যবসা করতে আসিনি কিন্তু ব্যবসায়ীদের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দেয়া এবং ব্যবসার প্রসার ঘটানোর আমাদের লক্ষ্য বলেও অবহিত করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নারী-পুরুষ সকলে তারা যেন আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে সেজন্য আমরা সবসময় বেসরকারি খাতকে যেমন সুযোগ দেই পাশাপাশি আমাদের দেশে একেবারে তৃণমূলে যে মানুষগুলো পড়ে আছে তাদের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করি।’

অনুষ্ঠান আয়োজক সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি অত্যন্ত চমৎকার আয়োজন। এই ইতিহাসকে তো ভুলেই দেয়া হয়েছিল পঁচাত্তরের পর। আমরা যে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি এবং সম্মানের মধ্য দিয়ে। জাতির পিতা শেখ মুজিব তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তনে আসলে সেই ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার আমরা সেই ইতিহাসকে সামনে নিয়ে এসেছি। আজকে আমরা বিজয়ের মাসে বিজয় উৎসব করতে পারি। আজকে মুক্তিযোদ্ধারা মাথা উঁচু করে বলতে পারে তারা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি বা মুক্তিযোদ্ধার শহীদ পরিবাররা বলতে পারে তারা শহীদ পরিবারের সন্তান। এইটুকু বলার সুযোগ তারা পাচ্ছে। এই সুযোগটা হারিয়ে গিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে। বিকৃত ইতিহাস শেখানো হতো।’

কাজেই আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষ স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে। জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন, সেই আদর্শ বাস্তবায়ন হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আরো অনেক সুযোগ হবে, এটা হয়ত উন্নয়নশীল দেশ না হলে আমরা পেতাম না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ জন্য হয়ত অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত। আর সেই প্রস্তুতিও আমরা আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন আছি আমরা কিন্তু সেখান থেকে পিছিয়ে থাকি নাই। সেই প্রস্তুতিও নিয়েছি।’

‘আমি ব্যবসায়ীদের বলবো আপনারাও সেইভাবে প্রস্তুতি নেবেন, নিয়ে রাখবেন। এই দেশ এই মাটি আপনাদের সুযোগ দিয়েছে। জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বলেই আপনারা ব্যবসায়ী হতে পেরেছেন, এর আগে ব্যবসায়ী হওয়া তো দূরের কথা কোনো সুযোগই বাঙালির জন্য ছিল না। না চাকরির ক্ষেত্রে, না শিক্ষার ক্ষেত্রে; কোনো ক্ষেত্রে আমাদের তেমন সুযোগ ছিল না। ওই সময়টা আমরা শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই এই সুযোগ আজ সকলে পেয়েছেন।’

সকলে মিলে বাংলাদেশের মানুষকে দারিদ্র্যের হাত থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়ে একটা উন্নত সমৃদ্ধ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ করে যাবেন আজকের দিনে, এই আহ্বান জানাচ্ছি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

এফবিসিসিআই’র বিজয় উৎসবের সার্বিক সহযোগিতা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

পরে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষের সমাপনী আয়োজনকে এই অনুষ্ঠান আরও মহিমান্বিত করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

প্রধানমন্ত্রী বিজয় উৎসব শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর