সর্বজনীন শান্তির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:২৬
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা মহামারি সংকট প্রমাণ করেছে আমরা কেউই আলাদা নই। শান্তিপূর্ণভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিতামূলক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আসুন, আমরা সর্বজনীন শান্তির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ি।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত ‘World Peace Conference’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন প্রান্তে ভার্চুয়ালি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জেমস গর্ডন ব্রাউনের একটি ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক টং, ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা, এবং হাডসন ইনস্টিটিউট’র এর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পরিচালক হোসেন হাক্কানি সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।
বিশ্ব শান্তি সম্মেলন-২০২১-এর আয়োজক কমিটির সভাপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এর আগে বিশ্ব শান্তি সম্মেলন-২০২১-এর থিম সং পরিবেশিত হয় এবং একটি অডিও-ভিডিও প্রেজেন্টেশন প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন দিক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি। একই বছর ১২ নভেম্বর দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিরসন করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি উপজাতিদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষর করি। ১৯৯৭ সালে আমরাই প্রথম জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিকাশে কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করি, যা ১৯৯৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘শান্তির সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক বছর’ এবং ২০০১-২০১০ কে ‘শান্তির সংস্কৃতি ও অহিংস দশক’ হিসেবে ঘোষণা করে।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মীমাংসা করি।’
জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছি। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি বলেও অবহিত করেন।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছি। আমরা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছি। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। করোনা মহামারীর প্রতিঘাত নিরসনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছি। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি।”
আমাদের অর্থনীতির আকার এখন ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার। রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসডিজি-২০৩০ এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ২০ বছর মেয়াদী দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন করছি। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি এবং এর মধ্যদিয়ে শান্তির মূল্য এবং সমগ্র মানব জাতির গভীরতম আকাঙ্ক্ষাসমূহ অনুধাবন করেছি। বরাবরের মত ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে আমাদের অবিচল সমর্থন রয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা ১১ লাখের অধিক মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। ফলে এই অঞ্চলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবসনের জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত দুবছর ধরে করোনা ভাইরাস মহামারি পুরো বিশ্ব ব্যবস্থাকে এক নতুন সংকটের মুখোমুখি করেছে। এই সংকট প্রমাণ করেছে আমরা কেউই আলাদা নই। শান্তিপূর্ণভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিতামূলক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তির আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সকলের সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত রয়েছে। বিশ্বের এই চরম সংকটময় সময়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ ব্যয় না করে তা সর্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যবহার করার আহবান জানান বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আমরা সার্বজনীন শান্তির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কর্মযজ্ঞে নেমে পরি।’
এ ছাড়া জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্সে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সারাবাংলা/এনআর/একে