ওমিক্রন প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১৫ নির্দেশনা
৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৫৩
ঢাকা: দেশে ক’দিন ধরেই বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উদ্বেগ ছড়ানো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টও শনাক্ত হয়েছে দেশে। এ প্রেক্ষাপটে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতর দেশব্যাপী অনুসরণের জন্য ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের নির্দেশনায় সব ধরনের জনসমাগম ও অনুষ্ঠানকে সীমিত করতে বলছে। একইসঙ্গে প্রতিটি স্থানেই মাস্ক পরিধান করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এসব নির্দেশনায়। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) তথ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত এক তথ্যবিবরণীতে এ তথ্য বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে— এমন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোর করতে হবে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে কোনো যাত্রী এলে ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে হবে।
অধিদফতর বলছে, সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। প্রযোজনে বাইরে গেলে প্রত্যেককে বাড়ির বাইরে সবসময় সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন-
- ফের বিধিনিষেধের ইঙ্গিত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
- মৃত্যু বেড়ে ৬, সংক্রমণ স্পর্শ করল পৌনে ৮শ
- ভ্যাকসিন ছাড়া খাবার মিলবে না রেস্টুরেন্টে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ দেড় গুণ, মৃত্যু বেড়েছে ৪০%
- গণপরিহনে অর্ধেক যাত্রী, ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার প্রস্তাব
- মাস্ক না পরলেই জরিমানা, গণপরিবহনে কমতে পারে আসন সংখ্যা
- মার্চ-এপ্রিলের দিকে বাড়তে পারে সংক্রমণ— আশঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদফতরের
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে। সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশ নিতে পারবে।
মসজিদসহ সব ধরনের ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি গণপরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। পাশাপাশি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবাদাতা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সবসময় সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অফিসে প্রবেশ ও অবস্থানের সময় বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অধিদফতর বলছে, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি দাফতরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। আর যারা এখনো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেননি, তাদের ভ্যাকসিন সেন্টারে গিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিতে বলা হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও বাইরে বের হলেই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
নির্দেশনায় করোনা উপসর্গ বা লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়া কোভিড-১৯ লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করতে বলা হয়েছে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধ প্রসঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার এবং এ কার্যক্রমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করা যেতে পারে বলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করছে।
শঙ্কা বাড়াচ্ছে ওমিক্রন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের অবিশ্বাস্যরকমভাবে পরিবর্তিত একটি রূপ হচ্ছে ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক তুলিও দে অলিভেইরা বলেছেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে বিপুলসংখ্যক মিউটেশন ঘটেছে এতে’ এবং এটি করোনার অন্যান্য রূপগুলো থেকে ‘একেবারেই আলাদা’।
এরই মধ্যে বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভ্যারিয়েন্ট। এর প্রভাবে একেকটি দেশে নতুন করে প্রতিদিন হাজার থেকে শুরু করে লাখ লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। ওমিক্রণ ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে অনেক দেশের অনেক শহরেই আবার নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে।
দেশেও গত কয়েকদিন ধরে নতুন সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং ওমিক্রণ শনাক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে সোমবার একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৫ দিনের মধ্যেই নানা ধরনের বিধিনিষেধ আসতে যাচ্ছে। বিশেষ করে মাস্ক না পরলে জরিমানা, ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকলে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সুযোগ না পাওয়া, গণপরিবহনে আসনের অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের মতো বিধিনিষেধ আসবে বলে জানান তিনি। তবে মঙ্গলবার মন্ত্রী বলেন, ১৫ দিনের বদলে সাত দিন পর থেকেই এসব বিধিনিষেধ কার্যকর হতে পারে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর