শাবিপ্রবিতে রক্তিম হাতের ছাপে চিরন্তন লড়াইয়ের ইশতেহার
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৩১
আমরণ অনশনের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পদত্যাগ করেননি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। অনশন থামলেও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে ফের সরব হয়েছেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি রক্তিম হাতের ছাপ এঁকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ইশতেহার দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হাতের ছাপ আঁকেন।
এর আগে সম্মিলিতভাবে চলমান আন্দোলনের প্রতিবাদী ছবি সংযুক্ত প্ল্যাকার্ড, স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আইআইসিটি ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে আইআইসিটি ভবনের সামনে যে স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছিল, সেখানে চিরন্তন লড়াইয়ে ইশতেহার হিসেবে রক্তিম হাতের ছাপ আঁকেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি আমাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও দাবি মেনে নেওয়ার কোনো দৃশ্যমান প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুইটি মামলা, ব্যক্তিগত নম্বর, বিকাশ, নগদ অ্যাকাউন্টসহ অনলাইনে লেনদেনের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর দুয়েকটি ছাড়া সবগুলোই বন্ধ আছে।
আরও পড়ুন- ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ফের মিছিল
শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৬ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যত অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার হয়েছে, তার প্রতিবাদে যে অসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তার সচিত্র প্ল্যাকার্ড নিয়ে গতকাল (বুধবার) একটি মিছিল হয়েছে। আমাদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। আমাদের দাবিগুলোও এখনো পূরণ হয়নি। যতদিন দাবি আদায় হবে না, ততদিন আন্দোলন চলবে।
শাবিপ্রবিতে এই আন্দোলনের সূত্রপাত গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের শিক্ষার্থীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়।
পরদিন হামলার প্রতিবাদ ও একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধও করেন। তখন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। পরে রাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় অনশন শুরু করেন শাবিপ্রবির ২০ শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও আট জন। এই ২৮ জনের মধ্যে ২০ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও অনশন ভাঙেননি। অষ্টম দিনের মাথায় শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবিপূরণের নিশ্চিত আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন।
আরও পড়ুন-
- শাবিপ্রবিতে ফের মশাল মিছিল
- ‘উপাচার্য পদের মূল্য বেশি নাকি শিক্ষার্থীর প্রাণ’
- ‘উপাচার্য পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’
- ভিসির বাসভবনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, শিক্ষক সমিতির নিন্দা
- শাবিপ্রবিতে অনশন থামিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত
- শাবিপ্রবি আন্দোনে অর্থ সহায়তার ‘অভিযোগে’ ৫ শিক্ষার্থী আটক
- ভিসির বাসভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দিলো শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
- ৬ষ্ঠ দিনে অনশন— সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের
- বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের ছয়টি মোবাইল নম্বর
সারাবাংলা/টিআর
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি রক্তিম হাতের ছাপ শাবিপ্রবি শাবিপ্রবি আন্দোলন