মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত মুহিত
১ মে ২০২২ ১৭:৩১
সিলেট: সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর রায়নগরের পারিবারিক কবরস্থানে মা ও বাবা কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে তাকে।
রোববার (১ মে) সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জানাজা হয়। এতে ইমামতি করেন আলেম আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তার মরদেহ।
জানাজার আগে মুহিতের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা মরহুমের রূহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
এর আগে, সিলেটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নিজেদের প্রিয়জন আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় সিলেটবাসী। দুপুর ১২টার দিকে বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্স থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহিদ মিনারে। সেখানে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করে রাখা হয়। কালো চাদরে আচ্ছাদিত মঞ্চে মুহিতের কফিন রাখার পর একে একে শ্রদ্ধা জানান সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ।
সিলেটের রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শ্রদ্ধা জানায় মুহিতের কফিনে। শ্রদ্ধা জানান রাজনৈতিক নেতাসহ সিলেটের সব শ্রেণিপেশার মানুষ। শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মুহিতকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার।
শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শনিবার সকালে গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে (আজাদ মসজিদ) প্রথম জানাজার পর তার মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আরও পড়ুন-
- মুহিতের প্রথম জানাজা সম্পন্ন
- সিলেটের পথে মুহিতের মরদেহ
- সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের মৃত্যুতে শোক
- সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত আর নেই
- শহিদ মিনারে মুহিতকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
- সিলেটের বাড়িতে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের মরদেহ
- সদ্যপ্রয়াত মুহিতের দখলে বাজেট উত্থাপনের ২ রেকর্ড
- সিলেটে মুহিতের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন, গার্ড অব অনার
- আব্দুল মুহিত ছিলেন একজন শতভাগ সৎ মানুষ: কাদের
- আমলা থেকে রাজনীতিবিদ-অর্থমন্ত্রী— বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার মুহিতের
- ‘প্রস্তুতি না থাকায় মুহিতের মরদেহ নেওয়া হচ্ছে না জাতীয় সংসদে’
- এপ্রিলে বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন আবদুল মুহিত, এপ্রিলেই ‘ফিরছেন’ বাড়িতে
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে মুহিতের মরদেহ নেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ বনানীর বাসায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে সড়ক পথে রওনা হয় ফ্রিজিং ভ্যান। রাতে মুহিতের মরদেহ পৌঁছায় সিলেটে।
সরকারি চাকরিতে কর্মজীবন শুরু করা আবুল মাল আবদুল মুহিত তৎকালীন পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দফতরে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে অর্থনীতি ও উন্নয়ন গবেষণায় নিযুক্ত হন। এসময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে কাজ করেন তিনি। পরে ২০০১ সালে তিনি যোগ দেন রাজনীতিতে। পরের বছরই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আমৃত্যু দলের সেই পদে বহাল ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুহিত। এসময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। পরে ২০১৪ সালেও সংসদ সদস্য এবং টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদে টানা ১০টি বাজেট উত্থাপনের অনন্য রেকর্ড গড়েন আবুল মাল আবদুল মুহিত। একটানা এত বেশি বাজেট দেশের ইতিহাসে আর কোনো অর্থমন্ত্রী পেশ করতে পারেননি। এর আগে এরশাদ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবেও দুইটি বাজেট পেশ করেছিলেন মুহিত। সব মিলিয়ে তার উত্থাপন করা বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এটিও সর্বোচ্চ বাজেট উত্থাপনের রেকর্ড। তবে বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানও ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন সংসদে।
সারাবাংলা/টিআর
আবুল মাল আবদুল মুহিত পারিবারিক কবরস্থান সাবেক অর্থমন্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য সিলট-১ আসন